সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা-ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমদ শফী আসন্ন নির্বাচনে কোন দলকে সমর্থন না দেয়ার যে ঘোষণা করেছেন, এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রধান দুই দল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি বেশ সতর্ক থাকছে।
তবে বিশ্লেষকদের অনেকে এটাকে হেফাজতের একটা কৌশল হিসেবে দেখছেন।
তারা বলছেন, অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করে এমন ঘোষণা দিলেও দেশে হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসায় হেফাজতের প্রভাব থাকায় তারা নিজেরাও বড় দলগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখে এবং নির্বাচনের সময় তা বেড়ে যায়।
হেফাজতের নেতারা বলেছেন, নির্বাচনসহ বিভিন্ন সময় তাদের সংগঠনকে একটা রাজনৈতিক চেহারা দেয়ার চেষ্টা তারা দেখেন, সেজন্য তারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
হেফাজত কি ব্যাখ্যা দিচ্ছে?
হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমদ শফী এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন যে, তাঁর এই সংগঠন এবার নির্বাচনে কোন দল বা কোন প্রার্থীকে সমর্থন করছে না।
কিন্তু কেন তিনি এমন ঘোষণা দিলেন, সেই প্রশ্ন অনেকে তুলছেন।
মি: শফীর ছেলে এবং হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মো: আনাত মাদানী বলেছেন,তাদের সংগঠনের সাথে ছোট ছোট অনেক দলের নেতারা সম্পৃক্ত রয়েছেন, সে প্রেক্ষাপটে হেফাজতকে অনেকে রাজনৈতিক দৃষ্টি দিয়ে দেখার চেষ্টা করেন বলে তারা মনে করেন। সেকারণেই তাদের আমীর হেফাজতের অবস্থান পরিস্কার করেছেন বলে মি: মাদানী উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলছিলেন, “আমাদের শুরু থেকেই বক্তব্য এটাই যে, হেফাজত একটি অরাজনৈতিক এবং আধ্যাত্নিক সংগঠন।ফলে আমরা কোন রাজনীতি করতে পারি না।”
“আমাদের মধ্যে ছোট ছোট অনেক দল আছে।এরা নিজ নিজ দল থেকে নির্বাচন করতে পারে। এতে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু হেফাজতে ইসলাম থেকে নির্বাচন করা যাবে না বা কোন দল বা কোন প্রার্থীকে নির্বাচনে সমর্থন করা যাবে না।আমাদের অরাজনৈতিক সংগঠনের গঠনতন্ত্রের কথাই বলা হয়েছে।”
হেফাজতে ইসলামের অন্যান্য সূত্রগুলো বলছে, তাদের সংগঠনের ভিতরে ইসলামপন্থী ছোট ছোট যে দলগুলো রয়েছে, এই দলগুলো বেশিরভাগই এবার আওয়ামী লীগের সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দর কষাকষি করছে।কয়েকটি দল বিএনপি সাথেও রয়েছে।
এছাড়া আসন নিয়ে দর কষাকষির ক্ষেত্রে অনেকের হেফাজতের ব্যানার ব্যবহারের চেষ্টাও ছিল।এই পরিস্থিতিকেও সংগঠনটির সূত্রগুলো তাদের অবস্থান তুলে ধরার পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে।
প্রধান দুই দল কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে?
হেফাজতের এই অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।দলটির পক্ষে এর কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মাহমুদ বিভিন্ন সময় হেফাজতের সাথে যোগাযোগ রাখেন।
মি: মাহমুদ বলছিলেন, “হেফাজত কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন।এর কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।তবে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে এবং প্রধানমন্ত্রী তাদের যে স্বীকৃতি দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ইসলামের জন্য যে সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, নিশ্চয়ই আগামী নির্বাচনে তারা যখন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, তখন তারা এই বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।”
বিএনপিকেও বেশ সতর্ক মনে হয়েছে।
দলটির সিনিয়র একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাথে হেফাজতের শীর্ষ নেতার এখনও সখ্যতা রায়েছে বলে তারা মনে করেন।
এরপরও নির্বাচনের আগে হেফাজতের সাথে নতুন করে একটা যোগাযোগ সৃষ্টির চেষ্টা তারা করতে পারেন।
রাজনৈতিক তাৎপর্য
আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেছেন, হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও এখনকার ঘোষণার একটা রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে।
তিনি আরও বলছিলেন, “এককালে হেফাজতে ইসলাম সরকার বিরোধী বলে পরিচিত ছিল।এখন উনার ওপর প্রশ্ন উঠতে পারে, উনি যেহেতু বর্তমান সরকারের কাছাকাছি রয়েছেন। তাই উনি নিজেকে পরিস্কার করলেন যে, আমি কারও সঙ্গে নেই।”
হেফাজতের দাবি অনুযায়ী দেশে ২৬ হাজারের বেশি কওমী মাদ্রাসার ওপর তাদের প্রভাব রয়েছে।
সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মো: ফয়জুল্লাহ বলছিলেন, সাংগঠনিকভাবে তাদের নির্বাচনে বা রাজনীতিতে না থাকার কথা এসেছে।কিন্তু তারপরও তাদের একটা প্রভাব থাকে বলে তিনি মনে করেন।
“এটা নিশ্চিত যে, হেফাজতে ইসলামের কর্মি সমর্থকদের কারণে অনেক দিকে পাল্লা ভারি হয়ে যায়। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের মুল সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সাংগঠনিকভাবে তারা কোন দল বা প্রার্থীকে সমর্থন করবে না।”
একইসাথে তিনি বলছেন, “হেফাজতে ইসলামের কোন দাবি দাওয়া যদি কেউ মেনে নেয় বা পূরণ করে,সেক্ষেত্রে একটা কৃতিত্বতো তারা পাবেনই।এটা অস্বাভাবিক নয়।”
বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, হেফাজত তাদের কৌশল হিসেবে নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না করার কথা বলেছে।কিন্তু অনানুষ্ঠানিকভাবে ভোটের মাঠে তাদের একটা সমর্থন থাকবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাসরিন সুলতানা বলছিলেন, “প্রধান দলগুলো এখন হেফাজতের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছে। নির্বাচন আরও এগিয়ে এলে হেফাজতের চেহারা কি হয়, সেটা দেখার বিষয়।”
হেফাজতে ইসলামের নেতারা অবশ্য বলছেন, হেফাজতের ভিতরে থাকা ছোট ছোট দলগুলোর যারা নিজ নিজ দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন, তারা সংগঠনের আমীরের কাছে এসে দোয়া নিয়ে যাচ্ছেন।