নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বাস্থ্য অধিপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচিত-সমালোচিত হিসেবে যাদের নাম উঠে আসে তাদের মধ্যে দিদার রসুল হলেন অন্যতম। ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের দুর্নীতিবাজ যেসব কর্মকর্তাদের নিয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামে, তাঁদের মধ্যেও ছিলেন এই দিদার রসুল।
বর্তমানে তিনি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন একটি বদলি আদেশ অমান্য করে। রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তিনি। তবে গত ২৪ এপ্রিল তাকে সিরাজগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে তিন দিনের মধ্যে যোগদানের জন্য স্বাস্থ্য অধিপ্তরের এক চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশনা তিনি অমান্য করে এখনো সেখানে যোগদান করেননি।
এদিকে, অফিস আদেশ অমান্য করায় দিদার রসুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। তার এমনকাণ্ডে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝেও দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) হারুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের চারজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও একজন অফিস সচিবকে বদলি করা হয়। তাদের মধ্যে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিদার রসুলকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সচিব হিসেবে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বদলি আদেশ পেয়ে দিদার রসুল রাজশাহী মেডিকেল কলেজে যোগদান করতে গেলে তাঁকে সেখানে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একটি সূত্র জানায়, দিদার রসুলের নানা অনিয়মের বিষয়টি অবগত থাকায় কলেজ অধ্যক্ষ নওসাদ আলী তাকে সেখানে সচিব পদে যোগদান করতে বাধা দেন। বাধ্য হয়ে ফেরত চলে যান দিদার রসুল। এরপর গত ৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) হারুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত আরেক চিঠিতে দিদার রসুলকে ক সিরাজগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে তিন দিনের মধ্যে যোগদানের জন্য স্বাস্থ্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই বদলির আদেশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। অন্যথায় চতুর্থ দিনের দিন হতে সরাসরি অব্যাহতি পেয়েছেন পেলে গণ্য হবে। তবে দিদার রসুল ওই চিঠি পাওয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখনো সিরাজগঞ্জে যোগদান করতে যাননি।
আরেকটি সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তরের আওতায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি হবে। এ পদোন্নতিতে দিদার রসুলের নেতৃত্বে পদোন্নতি বাণিজ্যের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়। এ নিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকের দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে দিদার রসুলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এর পরে তাকে বদলির জন্য বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিপ্তরে।
বদলির বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দিদার রসুল বলেন, ‘আমি এখনো কোথাও যোগদান করেনি। বিভিন্ন কারণে আমি সেখানে যোগদান করিনি। তবে ঈদের কয়েকদিন পরে আমি সিরাজগঞ্জে যোগদান করবো।’ তবে পদোন্নতি বাণিজ্যের কোনো ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলেও দাবি করেন দিদার রসুল।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আনোয়ার কবীর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) হারুন অর রশিদ বলেন. ‘অফিস নির্দেশনা অমান্য করায় দিদার রসুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা করা হবে। আমরা এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে পরবর্তি ব্যবস্থা নেব।’