সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে দেশের বাজারে। স্থানীয় বাজারে সোনার দাম বাড়ার এটি একটি অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম অনেক সময় বাড়তি থাকলে দেখা যায়, সোনার দাম হয় নিম্নমুখী। আবার এমনও দেখা যায়, ডলারের দাম নিম্নমুখী হলে সোনার দাম হয় ঊর্ধ্বমুখী। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বাড়া বা কমার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের স্থানীয় বাজারে। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে যখন টাকার মান কমে যায়, তখনও স্থানীয় বাজারে সোনার দাম বেড়ে যায়। এছাড়া, শীত মৌসুমে দেশে বিয়েসহ বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠান বেশি হওয়ায় সোনার চাহিদা বেড়ে যায়। পূজা, ঈদসহ বিভিন্ন পার্বণেও চাহিদা বেশি থাকায় সোনার দাম বাড়ে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি গঙ্গা চরণ মালাকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে ডলারের দাম যখন পড়ে যায়, তখন সোনার দাম বাড়তে থাকে। কারণ, বিশ্ব বাজারে ডলারের মতো সোনাও একটি কারেন্সি বা মুদ্রা। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা ও ডলার দুটোই কিনে রাখে এবং ব্যবসা করে। বর্তমানে ভারত, সিঙ্গাপুর, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোতে ডলারের দাম পড়ে গেছে। ফলে চীনসহ বিভিন্ন দেশে অনেকেই ডলার বিক্রি করে সোনা কিনতে শুরু করেছে। এতে সোনার চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামও বাড়ছে।’
গঙ্গা চরণ মালাকারের মতো পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরও মনে করেন, ডলারের পতন হলে সোনার দাম বাড়তে থাকে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাস ধরে ডলারের দাম নিম্নমুখী। এ কারণে ছয় মাস ধরে সোনার দাম বাড়ছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, এক সময় পাউন্ডের সঙ্গে ডলারের পার্থক্য ছিল ১২০ টাকা। এখন ১২৪ টাকা। ফলে ডলারের দাম অনেক কমে গেছে। ইউরোর সঙ্গে ডলারের পার্থক্য আরও বেশি হয়েছে। ছয় মাস আগে ইউরোর সঙ্গে ডলারের পার্থক্য ছিল ১০৮ থেকে ১১০ টাকা। এখন ১২০ টাকার কাছাকাছি।
দেশে ডলারের দাম বাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এক্ষেত্রে উল্টো চলছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ছে, সে কারণে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ছে।’
বাংলাদেশে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পরও সোনার দাম বাড়া প্রসঙ্গে গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, ‘পাশের দেশ ভারতে সোনার দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও সোনার দাম বেড়ে গেছে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সেই হিসাবে সোনার দাম কমার কথা থাকলেও ভারতের প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে একবছরে ডলারের দাম বেড়েছে চার টাকা। গত বছর ১৭ জানুয়ারি একডলারের দাম ছিল ৭৮ দশমিক ৯০ টাকা, আর এ বছরের ১৭ জানুয়ারি তা বিক্রি হয়েছে ৮২ দশমিক ৮৪ টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ডলার বিক্রি হয়েছে ৮২ দশমিক ৯০ টাকায়। দেশের অন্য ব্যাংকগুলোতে ৮৪ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। কার্ব মার্কেটে দাম আরও চড়া। খোলা বাজারে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) মার্কিন ডলার ৮৫ থেকে ৮৬ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে ।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে প্রতি ভরি সোনার দামে একহাজার ৫০০ টাকা বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরে গঙ্গা চরণ মালাকার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। হয়তো সেই দাম সমন্বয় করতে অচিরেই সোনার দাম আবারও বাড়ানো হতে পারে।’
বাজুস-এর তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) থেকে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনা কিনতে অতিরিক্ত একহাজার ৫০০ টাকা গুনতে হবে। অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম পড়বে ৫২ হাজার ২৩৮ টাকা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই মানের প্রতি ভরি সোনা ৫০ হাজার ৭৩৮ টাকায় কেনা গেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১০ জানুয়ারিও সোনার দাম বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। তখন প্রতি ভরিতে একহাজার ৪০০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
অবশ্য সংগঠনটির বিজ্ঞপ্তিতে দাম বাড়ানোর কারণ জানাতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটি ২৬ জানুয়ারি থেকে সোনার নতুন দাম কার্যকর করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, শুক্রবার থেকে সারাদেশে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের সোনা বিক্রি হবে ৫২ হাজার ২৩৮ টাকায়। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত এই সোনার দাম ছিল প্রতি ভরি ৫০ হাজার ৭৩৮ টাকা। ২১ ক্যারেট আর ১৮ ক্যারেটের সোনার দামও প্রতি ভরিতে একহাজার ৫০০ টাকা করে বাড়ছে।
এর আগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর থেকে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম একহাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়েছিল বাজুস। গত ২৬ নভেম্বরও সোনার দাম বাড়িয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বাজুস নেতাদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে দেশের ব্যবসায়ীরা সোনা কিনতে পারছেন না। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে সংগৃহীত সোনা দিয়ে দেশীয় বাজারের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। ফলে দেশে চাহিদার বিপরীতে প্রয়োজনীয় যোগান হচ্ছে না। এর ফলে স্থানীয় বাজারে সোনার দাম বাড়ছে।
বাংলট্রিবিউন