সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে সিরিয়া গৃহযুদ্ধ। একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করছে বিদ্রোহী বাহিনী। শনিবার দক্ষিণের শহর দারার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে বিরোধীরা। এটি দেশটির ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে এই শহরটিতে অভ্যুত্থান শুরু হয়। ফলে দারার দখল নেওয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতা হারানোর হুমকিতে পড়েছে আসাদ সরকার। রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার বিদ্রোহী সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের একটি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী দারা শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছেন তারা। বিনিময়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) উত্তরে রাজধানী দামেস্কে তাদের নিরাপদে পৌঁছানোর পথ করে দিতে হবে বিদ্রোহীদের। সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, দারা শহরের রাস্তায় রাস্তায় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিজয় উদযাপন করছে বিদ্রোহীরা। এ সময় শহরের প্রধান চত্বরে মোটরসাইকেলে চড়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগ দিতে দেখা যায় বিদ্রোহীদেরও। তবে এ বিষয়ে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী বা আসাদ সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দারার পতনের সঙ্গে সঙ্গে আসাদের বাহিনী এক সপ্তাহে চারটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ হারালো বিদ্রোহীদের কাছে। সম্প্রতি সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে দেশটির অন্যতম একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম। কয়েক দিনের মধ্যে তারা দেশটির একটি প্রধান শহর আলেপ্পোসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নেয় বিদ্রোহীরা।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর এটিই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বড় সফলতা। এদিকে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অবিলম্বে সিরিয়া ছাড়তে বলা হয়েছে। তবে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক বিকল্পগুলো থাকবে। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন তথ্য জানিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তাবিষয়ক সতর্কতায় বলা হয়, সিরিয়াজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত চলমান থাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও অপ্রত্যাশিত হয়ে রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে সিরিয়া ছাড়তে বলা হচ্ছে। বাণিজ্যিক বিকল্পগুলো অব্যাহত থাকবে। ভারতও তাদের দেশের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
নয়াদিল্লির জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যাদের পক্ষে সম্ভব হবে তারা যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে করে সিরিয়া ত্যাগ করেন। বিবৃতিতে, একটি জরুরি হেল্পলাইন নম্বর এবং একটি ইমেল আইডি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বর্তমানে সিরিয়ায় থাকা ভারতীয়দের দামেস্কেসে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে বলছে মন্ত্রণালয়।
এমনকি দ্রুত নাগরিকদের সিরিয়া ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে বাশার সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। সিরিয়ার রুশ দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, সিরিয়ার কঠিন সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে, দামেস্কে রাশিয়ান দূতাবাস সিরিয়ায় বসবাসরত রাশিয়ান নাগরিকদের অপারেটিং বিমানবন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে দেশ ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আবার মিত্রদেশ সিরিয়ায় অবস্থানরত কমান্ডারসহ সেনাসদস্যদের শুক্রবার সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে ইরান। কর্মকর্তারা জানান, সিরিয়া থেকে প্রতিবেশী ইরাক ও লেবাননে সরিয়ে নেওয়া সেনাসদস্যদের মধ্যে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরকে (আইআরজিসি) আওতাধীন কুদস ফোর্সের শীর্ষ কমান্ডাররা রয়েছেন।
সূত্র: যুগান্তর