সাপাহার প্রতিনিধি:
সাপাহার প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে আমের হাট, প্রায় ৫ উপজেলার কৃষকগণ আম বিক্রয় করতে সাপাহার আমের হাটে আসেন। এখানে প্রায় ৪০০টি আমের আড়ৎ রয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকার আম বেচা-কেনা হয়।
ছাত্রদের কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের পরিস্থিতি ও কারফিউর কারণে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত নওগাঁর সাপাহারে গত কয়েক দিনে আমচাষীদের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে একাধিক আমচাষী,বাগান মালিক ও আম সংশ্লিষ্ট জনেরা মনে করছেন।
সোমবার (২৯ জুলাই) সকাল ১১টায় আমচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোতাহার হোসেন চৌধুরী জানান, আম কেনা বেচা শুরু থেকেই ব্যাপারীগণ কৃষক ঠকানোর মিশনে নেমে ৫২ কেজিতে ১মন আম ক্রয় শুরু করেন। এরই মধ্যে দেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে দেশ ব্যপী নৈরাজ্যে সৃষ্টি হলে সরকার তা নিয়ন্ত্রনে সারা দেশে কারফিউ জারী করলে ব্যাপারিগন আবারও সিন্ডিকেট তৈরী করে চাষীদের আম অর্ধেক দামে কেনা শুরু করে ফলে চাষীরা দ্বিতীয় দফায় ক্ষতির সম্মুখীন হন। আর ওজন বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার সাপাহার এক সরকারী সফরে এসে কৃষক বাঁচানোর জন্য সর্বসাকুল্লে ৪৮কেজিতে ১মন নির্ধারণ করে আম কেনা বেচার ঘোষনা দেন।
কিন্তু বিভিন্ন অযুহাতে ব্যবসায়ীরা খাদ্য মন্ত্রীর বেধে দেওয়া ওজনকে গুরুত্ব না দিয়ে ৫২ কেজিতে ১মন হিসেবে আম কিনছেন। তিনি আরও বলেন- দিন শেষে চতুর ব্যাপারীগন সাময়িক সিন্ডিকেট তৈরী করে সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারে চাষীদের আম অর্ধেক দামে কেনা বেচা শুরু করে এবং চাষীরাও নিরুপায় হয়ে অর্ধেক দামে আম বিক্রিয় করে বাসায় ফিরেন।
আম আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা জানান, খাদ্য মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার ৪৮কেজিতে ১মন নির্ধারণ করে দিয়েছেন ঠিক আছে কিন্তু ব্যপারীরা ঐ মাপে আম কিনতে রাজি নয়, ২/৩ দিন ধরে অনেক ব্যাপারী আম নেয়নি, এতে করে অনেক আম চাষী বিপাকে পড়েছেন,আবার আমাদের কমিশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা, এদিকে আম কেনা ব্যাপারীরা বলে আম পচনশীল আবার কিছু আম নষ্ট হয়ে যায়, তাই আমাদের ওজন বেশি নিতে হয়।
উপজেলার সাহাপাড়া গ্রামের সুব্রত চৌধুরী, মানিকুড়া গ্রামের আব্দুল মতিন মা®টার, পিছলডাঙ্গা গ্রামের খাইরুল বাশার, গোয়ালা গ্রামের আমিরুল ইসলাম সহ অসংখ্য আমচাষী জানান যে, এবছর প্রকৃৃতি গতভাবে আমের বিপর্যয় হলেও বাজারে শুরুতেই আমের দাম বেশ ভাল থাকায় এখানকার আমচাষীরা তাদের লাভ ক্ষতি কিছুটা হলেও পুশিয়ে নেয়ার আশা করেছিলাম।
কিন্তু হঠাৎকরে দেশে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সরকার দেশে কারফিউ জারি করলে এর প্রভার কিছুটা হলেও আম বাজারে পরেছে। জারিকৃত কারফিউতে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের পণ্যবাহী পরিবহন এর আওতা মুক্ত থাকলেও দেশের বৃহত এই আম বাজারে আম কেনার ব্যাপারীরা গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার অজুহাতে বেশ কয়েকদিন আম কেনা বেচা হতে মুখ ফিরিয়ে নেন। যার ফলে চরম বিপাকে পড়েছি আমরা আমচাষীরা। ব্যাপারীরা আমাদেরকে জিম্মি করে কম দামে আম কেনায় আমরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছি।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান টকি জানান, কারফিউএ ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট তৈরী করে কম দামে আম কেনায় বৃহত ক্ষতির মুখে পড়েন এখানকার আমচাষীরা।
বর্তমানে আমের বাজার আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আসায় ও আমের দাম একটুু বেশী হওয়ায় আমচাষীদের মনে আবারো স্বস্থির সঞ্চার জেগেছে। প্রকার ভেদে বর্তমানে আম্রপলী (রুপালী) আম সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৭ হাজর টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ৭ হাজার ও বারি-৪ জাতের আম ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বেচা কেনা হচ্ছে।