বুধবার , ১২ জুন ২০২৪ | ১৩ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সর্বকনিষ্ঠ পবা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পপি বয়স বাড়িয়েছেন

Paris
জুন ১২, ২০২৪ ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অর্থনীতির শিক্ষার্থী পপি খাতুন। পদ-পদবি ছাড়াই নিজেকে ছাত্রলীগের নেত্রী দাবি করেন। এবার জনপ্রতিনিধি হতে বাড়িয়েছেন নিজের বয়স। সে জন্য একাডেমিক সার্টিফিকেট আর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করেছেন। অনেকেই এসব কাজে মাসের পর মাস ঘুরে হয়রান হলেও পপির কাজটি হয়েছে দ্রুত গতিতে। বয়স বাড়িয়ে পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। প্রথম বার অংশ নিয়েই জয়ীও হয়েছেন পপি।

তথ্যমতে, উপজেলা পরিষদ আইন-১৯৯৮ অনুযায়ী কেউ প্রার্থী হতে চাইলে তাঁর বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। কিন্তু পপির শিক্ষাসংক্রান্ত কাগজপত্র অনুযায়ী জন্মতারিখ হিসাবে তাঁর বয়স ২২ বছর। এতে ২৯ মে অনুষ্ঠিত পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেন না। তাই গত বছরের মার্চ থেকে তিনি শিক্ষাগত সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের কার্যক্রম শুরু করেন। অবিশ্বাস্য গতিতে তাঁর জন্মতারিখ বদলে যায়। এতে হতবাক নির্বাচন অফিস সংশ্লিষ্টরাও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন অফিসের একাধিক কর্মচারী জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ সংশোধন করার নজির খুবই কম। সরকারি চাকরিতে সুবিধা পেতে অনেকেই নিজের বয়স কমিয়ে আনার আবেদন করেন। তবে সেগুলো মাসের পর মাস পড়ে থাকে। পপি একটি এফিডেভিটের মাধ্যমে শিক্ষাসনদে জন্মতারিখ পরিবর্তন করেছেন। আর এ দেখে জাতীয় পরিচয়পত্রেও জন্মতারিখ বদলে দেওয়া হয় পপির। এ ধরনের নজির নেই বললেই চলে।

কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, পবার ধর্মহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে পপি পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। সে সনদে তাঁর জন্মতারিখ ২০০৩ সালের ১২ জানুয়ারি। ২০১৭ সালে দারুশা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। এই সনদে তাঁর জন্মতারিখ ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি। স্কুলের টেবুলেশন শিটেও একই জন্মতারিখ। চলতি বছর সর্বশেষ ভোটার তালিকাতেও তার জন্মতারিখ ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি। ভোটার ক্রমিক নম্বর-৮১০৮১৩০০০১৮৮।

তবে নির্বাচনের আগে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পপি তাঁর সব সনদে জন্মতারিখ পরিবর্তন করে ১৯৯৮ সালের ১২ জানুয়ারি করার আবেদন করেন। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল শিক্ষা বোর্ডের নাম ও বয়স সংশোধন কমিটির সভায় তা পাস হয়।

এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে গত ২০ মার্চ জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ সংশোধনের আবেদন করেন পপি। ৩ এপ্রিল এ আবেদন বাতিল হয়ে যায়। পরে ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনে আরেকটি আবেদন করেন তিনি। এবার রহস্যজনকভাবে পপির আবেদন গ্রহণ করা হয়। বদলে যায় জন্মতারিখ। নতুন তারিখ অনুযায়ী, ভোটের দিন তার বয়স ছিল ২৬ বছর ৪ মাস ১৭ দিন। আগের জন্মতারিখ অনুযায়ী ২৫ বছর পূর্ণ না হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন না তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, জন্মতারিখ পরিবর্তনের জন্য পপি নির্বাচনে কমিশনে যে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তাতে ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজের সঙ্গে নিজের এসএসসি সনদ সংযুক্ত করার কথা। কিন্তু হযরত আলী নামে একজন শিক্ষার্থীর সনদ সংযুক্ত করেছেন পপি। হযরত আলী ২০১৭ সালে নওহাটা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। হযরত আলীর জন্মতারিখ ২৯ জুন, ২০০১।
অথচ এমন ত্রুটিপূর্ণ আবেদন রাজশাহীর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় গ্রহণ করে পরদিনই (২৯ এপ্রিল) জাতীয় পরিচয়পত্রটি পরিবর্তন করে দেয়।

নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেয়েই পপি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন গত ২ মে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দেন। গত ২৯ মে পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। এতে পপি খাতুন ২৪ হাজার ২৭৯ ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চলতি মাসের ৪ জুন পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পপিসহ বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। পপি এখন শপথ গ্রহণের অপেক্ষায়।

অভিযোগের বিষয়ে পপি খাতুন বলেন, ‘আমার জন্মতারিখ ভুল ছিল। আমি সব নিয়মকানুন মেনেই জন্মতারিখ পরিবর্তন করেছি। নির্বাচন কমিশন সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই আমাকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। ভোটাররা ভোট দিয়েছে বলে বিজয়ী হয়েছি। এখন প্রতিপক্ষরা এসব কথা সামনে এনে আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।’

অপর দিকে জন্মতারিখ সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ডে সাধারণত বয়স কমানোর আবেদন আসে। কিন্তু পপির বয়স বাড়ানোর আবেদন আসে। এটা ব্যতিক্রম। তারপরেও এ জন্য রাজনৈতিক চাপ ছিল। পরে কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন দিয়েছে।’

ত্রুটিপূর্ণ আবেদন গ্রহণের বিষয়ে রাজশাহীর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর আলম প্রামাণিক বলেন, ‘কাগজপত্র যাচাই করেই সব করা হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পপি খাতুনের বাড়ি পবা উপজেলার দারুশা গ্রামে। হতদরিদ্র একটি পরিবারের মেয়ে পপির হঠাৎ নির্বাচনে এসে বিজয়ী হওয়ায় হতবাক এলাকার লোকজন।

উপজেলার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলিমুর রাজি রুবেল বলেন, ‘অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান পপির হঠাৎ উত্থানে আমরা হতবাক। কারণ, তার পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকায় তাদের সংসার চলে। কিন্তু সে শহরেও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। তার লাইফ স্টাইল ধনীর মতো। হঠাৎ শুনতে পাই, পপি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স পপির হয়নি। কীভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করল তা জানি না।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাঁরাই নির্বাচনে প্রার্থী হন। কিন্তু পপির মতো একটা বাচ্চা মেয়ে কীভাবে প্রার্থী হয়ে রানিং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে হারিয়ে বিজয়ী হলো তা আমার বুঝে আসে না।’ স.আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর