সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ডলারের বাড়তি দর কার্যকর হওয়ার দুই দিনের মধ্যেই প্রায় সব ব্যাংকে বেঁধে দেওয়া সীমার সর্বোচ্চ দামে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বেঁধে দেওয়া দাম রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার বন্ধ থাকায় তেমন কোনো লেনদেন হয়নি। সোমবার থেকে বাড়তি দামে ডলার বেচাকেনা শুরু হয়েছে। দর কার্যকর হওয়ার প্রথম দিনেই প্রায় সব ব্যাংকে সীমার সর্বোচ্চ দামে ডলার বেচাকেনা হয়েছে।
মঙ্গলবার বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে একেবারে অংশগ্রহণ কম এমন কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংকেই ডলারের দাম সর্বোচ্চে ওঠে।
ব্যাংকগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তিনটি ছাড়া বাকি সব ব্যাংক বাফেদার বেঁধে দেওয়া সীমা ১১০ টাকা করে আমদানিতে ডলার বিক্রি করছে। একই সঙ্গে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সোমবারই ডলারের দাম সর্বোচ্চ সীমা অর্থাৎ ১১০ টাকায় ওঠে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় সংগ্রহে সব ব্যাংকই সর্বোচ্চ সীমা ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করে দিচ্ছে।
তবে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে একেবারেই অংশগ্রহণ কম- এমন দুটি ব্যাংক বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক ১১০ টাকার কিছু কম দামে ডলার বিক্রি করছে। এছাড়া বাজারে সক্রিয় থেকেও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ১১০ টাকার সামান্য কম দামে আমদানি খাতে ডলার বিক্রি করছে। এর কারণ হিসাবে জানা যায়, তাদের কাছে আগের কিছু ডলার রয়েছে, যেগুলোর কেনার খরচ কম পড়েছে।
আগে ডলারের বাড়তি দর কার্যকর হওয়ার পর দুই থেকে তিন সপ্তাহ বেশির ভাগ ব্যাংক সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে কম দামে ডলার বিক্রি করত। কারণ ওই সময়ে ব্যাংকগুলো ডলার কেনার ক্ষেত্রে দাম নিয়ে দরকষাকষি করত। ফলে সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে কিছুটা কম দামে ডলার কিনতে পারত। এখন সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যাংকগুলোয় ডলার সংকট এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে এখন রীতিমতো কে বেশি ডলার সংগ্রহ করবে- এ নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কারণ ডলার ছাড়া আমদানির বকেয়া দেনা শোধ করা যাচ্ছে না। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ম অনুযায়ী দেনা শোধের বিলম্বের কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দুর্নাম হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান দিয়ে এলসি খুলতে না পারলে বড় বড় এবং ভালো গ্রাহক অন্য ব্যাংকে চলে যাচ্ছেন। ফলে ব্যাংকগুলো ভালো গ্রাহক হারানোর পাশাপাশি ব্যবসাও হারাচ্ছেন। এতে অনেক ব্যাংক নানামুখী শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এ কারণে বেশকিছু ব্যাংক বাফেদার বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে বেশি দামে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতের ডলার কিনত। এতে তাদের ডলার কেনার খরচ বেড়ে যায়। ফলে তারা আমদানিতেও চড়া দামে ডলার বিক্রি করত।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালিত বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, একটি বেসরকারি খাতের ব্যাংক রেমিট্যান্স কিনেছে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা দরে। অথচ ওই সময়ে বাফেদার বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৯ টাকা। ৫ টাকা বেশি দামে তারা রেমিট্যান্স কিনেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে অন্য আরও কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্সের দাম বাড়িয়ে দেয়। কারণ এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো যেখানে বেশি দাম পাচ্ছে, সে ব্যাংককেই ডলার দিচ্ছে বেশি। একই এক্সচেঞ্জ হাউজ একাধিক ব্যাংকে রেমিট্যান্সের জোগান দিচ্ছে। এছাড়া দাম কম হলে প্রবাসীরাও বিকল্প থাকলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন না। রেমিট্যান্স বেশি দামে কেনার কারণে ডলার কেনার খরচ বেশি হচ্ছে। ফলে আমদানিতেও এর দাম বাড়ছে। আমদানিতে কোনো কোনো ব্যাংক ১১৬ থেকে ১১৭ টাকা করে ডলার বিক্রি করেছেন। ওই সময়ে আমদানিতে ডলার বিক্রির সর্বোচ্চ সীমা ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। সীমার চেয়ে সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। এর কমে আমদানিকারকরা ডলার পাচ্ছিলেন না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। ওষুধ খাতের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, তিনি ১২২ টাকা করে ডলার কিনে এলসি খুলেছেন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন একটি অনুষ্ঠানে কয়েক মাস আগে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ডলার নিয়ে ব্যাংকগুলো লুটের মালের মতো আচরণ করছে। আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা ১১৩ থেকে ১১৪ টাকার কম ডলার পাচ্ছেন না। ওই সময়ে আমদানি খাতে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৮ টাকা।
কয়েকজন ব্যাংকার জানান, কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে বেশি দাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে বিশৃঙ্খল করে তুলেছে। এখন কম দাম দিয়ে রেমিট্যান্স পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রবাসীরা বিকল্প পথ খুঁজছেন। তারা যেখানে ডলারের দাম বেশি পাচ্ছেন, সেখানে চলে যাচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে।
এদিকে ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ার কারণে মানি চেঞ্জারস ও কার্ব মার্কেটেও দাম বেড়েছে। কারণ, ব্যাংকে ডলারের প্রবাহ বেশি থাকলে মানি চেঞ্জারস বা কার্ব মার্কেটেও দাম কম থাকে। ব্যাংকাররা বেশি দামে কিনছেন শুনেই মানি চেঞ্জারস ও কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ডলারের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বাজারে তদারকি জোরদার করেছে। বিশেষ পরিদর্শনের পাশাপাশি যেসব ব্যাংক অনিয়ম করছে, তাদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আরও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হবে। সূত: যুগান্তর