সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
আমি আশঙ্কা করি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাকে উত্তরাধিকারী দান করো। [সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৫ (প্রথম পর্ব)]
তাফসির : জাকারিয়া (আ.)-এর কোনো সন্তান ছিল না। বৃদ্ধ বয়সে তিনি সন্তানের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। তাঁর দোয়ার ভাষ্য কী ছিল, সে বিষয়ে আগের আয়াতে বর্ণনা ছিল। আলোচ্য আয়াতেও একই প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। দোয়ায় তিনি নবুয়তের রেখে যাওয়া আমানত বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অর্থাত্ অন্য আত্মীয়স্বজন ঈমান ও আমল সম্পর্কে উদাসীন হয়ে সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ফলে একজন সন্তান হলে হয়তো মহান আল্লাহ তাকে নবী হিসেবে প্রেরণ করবেন। তখন নবুয়তের উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা পাবে।
একদিকে সন্তান লাভের আকুতি, অন্যদিকে স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব—উভয় বিষয় সামনে রেখে জাকারিয়া (আ.) মহান আল্লাহর শরণাপন্ন হয়েছেন। তিনি সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর বিশেষ করুণা চেয়েছেন। মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেছেন। এতে বোঝা যায়, নিঃসন্তান দম্পতির জন্য আশার আলো সব সময় জ্বলে থাকে। আল্লাহ চাইলে বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান হতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিঃসন্তান মাতা-পিতাকে এ দোয়া শিখিয়েছেন, ‘রব্বি লা-তাযারনি ফারদাঁও ওয়া আন্তা খাইরুল্ ওয়ারিছিন। অর্থাত্ হে আমার রব, আমাকে একা রেখো না। তুমি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৯)।
মারিয়াম (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসে জাকারিয়া (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। একদিন জাকারিয়া (আ.) দেখতে পেলেন আল্লাহ তাআলা ফলের মৌসুম ছাড়াই মারিয়াম (আ.)-কে ফল দিয়ে রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। তখন তাঁর মনে সন্তানের জন্য সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে। তাই তিনি আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করেন। তিনি বলেন, ‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুরিরয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দুআ। অর্থাত্ হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮)।
ইবরাহিম (আ.) একসময় নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে এ দোয়া করেছেন, ‘রব্বি হাবলি মিনাস সলেহিন। অর্থাত্ হে আমার প্রভু! আমাকে সত্কর্মশীল সন্তান দান করো।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১০০)।
আল্লাহর খাঁটি বান্দাদের পরিচয় দিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, তাঁরা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রব্বানা-হাবলানা-মিন্ আয্ওয়াজ্বিনা ওয়া যুররিয়্যা-তিনা-কুর্রতা আ’ইয়ুন, ওয়া জা’আল্না-লিল মুত্তাকিনা ইমামা। অর্থাত্ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর করো এবং আমাদের সংযমীদের আদর্শস্বরূপ করো।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭৪)।
সুতরাং কোনো মানুষের কাছে সন্তান কামনা করা যাবে না। সন্তান লাভের জন্য অবৈধ ও অনৈসলামিক উপায় অবলম্বন করা যাবে না। নিঃসন্তান দম্পতির উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করে উল্লিখিত দোয়া পাঠ করা।