সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
ফেনীর সোনাগাজী পরীক্ষা কেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ হওয়া মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে বাঁচানোই গেল না। শরীর পোড়ার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ক্ষোভ আর অভিমানে যেন না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
অগ্নিদগ্ধের আগে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন রাফি। এরপর বান্ধবীদের উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছিলেন তিনি। ওই চিঠিটি মঙ্গলবার তার বাড়িতে পড়ার টেবিল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
চিঠির শিরোনাম ছিল ‘আমি লড়ব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত’। তার এ কথারই যেন আজ (বুধবার) রাতে প্রতিফলন ঘটল।
চিঠিতে দিন-তারিখ লেখা নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেন, বিষয়বস্তু বিবেচনায় এটি কয়েক দিন আগের লেখা বলে মনে হচ্ছে। ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েই রাফি চিঠিটি লিখেন।
দুই পাতার ওই চিঠিটি তার দুই ঘনিষ্ট বান্ধবী তামান্না ও সাথীকে উদ্দেশ করে লেখা। চিঠিতে গত ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন ওই ছাত্রী। চিঠিতে তিনি আত্মহত্যা করবেন না বলেও উল্লেখ করেন। পাশাপাশি যৌন হয়রানির ঘটনার পর অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা গ্রেফতার হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই ছাত্রী। তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটূক্তিতেও তার মর্মাহতের কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
চিঠিতে তিনি লিখেন, ‘আমি লড়ব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করব না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরব না, আমি বাঁচব। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নেবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাত জাহান রাফির (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। রাফি ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ রাফির পরিবারের।
সূত্র: যুগান্তর