সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে আজ সোমবার চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বেইজিং গিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চলতি বছর জানুয়ারিতে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর এটি শেখ হাসিনার প্রথম বেইজিং সফর।
বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সাঈদুল ইসলামের মতে, বিভিন্ন কারণেই শেখ হাসিনার এই সফর ঢাকা এবং বেইজিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সফরের মধ্যে দিয়ে এমন কিছু নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে, যা পারস্পরিক সহযোগিতার বৃদ্ধি এবং দুই দেশের স্বার্থসংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুকে লাভবান করবে।
নিজের এই ধারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে সাঈদুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশে যত দেশের বিদেশি বিনিয়োগ আসছে, সেসব দেশের মধ্যে চীন দ্বিতীয় বৃহত্তম। বাংলাদেশ সবসময়ই চীনা বিনিয়োগকে স্বাগত জানতে প্রস্তুত থাকে, কারণ চীন এ পর্যন্ত কখনও বিশেষ শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেনি।
আবার বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে তা লাভবান হবে বেইজিংয়ের জন্যও। কারণ প্রথমত, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে সড়ক যোগযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য প্রায় এক যুগ আগে বেল্ট অ্যান্ড রোডস ইনিশিয়েটিভস (বিআরআই) নামের যে মহাপ্রকল্প নিয়েছে বেইজিং, বাংলাদেশ এতে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকলে তা এই প্রকল্পের জন্য লাভজনক হবে।
তাছাড়া চীন মূলত বাংলাদেশের অবকাঠামো ও নির্মাণখাতে বিনিয়োগ করে। শেখ হাসিনার এই সফরের মধ্যে দিয়ে এই খাতে অদূর ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় স্বার্থটি অবশ্য ভূরাজনীতিগত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী, অগ্রসর দেশ ভারত ইতোমধ্যে দেশের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির স্বীকৃতি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ঐতিহাসিক মিত্র পাকিস্তান, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে তলানিতে। আবার ভারতের সঙ্গে সীমানা নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ চলছে চীনের। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশ নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চীন।
বাংলাদেশের সীমানার তিন দিক ঘিরে রেখেছে ভারত। ফলে ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে তা নয়াদিল্লির জন্য খানিকটা হলেও অস্বস্তিকর হবে।
পিটিআইসহ ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম অবশ্য দাবি করেছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতা বেইজিংয়ের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। এই কারণে ভারসাম্য রক্ষার্থে বেইজিং সফরে গিয়েছেন শেখ হাসিনা।
তবে চীন এবং বাংলাদেশ— উভয় দেশের কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা এই দাবি খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনার এই সফর একান্তভাবেই বেইজিং ও ঢাকার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং পূর্বনির্ধারিত। অন্য কোনো দেশকে ‘জবাব’ দেওয়ার উদ্দেশ্য এই সফরের মধ্যে একেবারেই নেই।
