সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্বপরায়ণ শাসক শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলকে দোষারোপ করে বলেছেন, ‘দলটির মধ্যে ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।’ তিনি বলেছেন, দেশের রাজনীতিতে এই দলের এখন আর ‘কোনো স্থান নেই’।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৮৪ বছর বয়সী নোবেলজয়ী এই নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। গতকাল বুধবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়।
দলটিকে পত্রিকাটি সবচেয়ে পুরনো ও বৃহৎ বলে উল্লেখ করে। বলা হয়, গত আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, তাঁর অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে না। এমন উদ্যোগ বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েনের বিষয়টি এড়াতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘স্বল্প সময়ের জন্য হলেও তাঁর (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে কোনো স্থান নেই—আওয়ামী লীগেরও কোনো জায়গা নেই।’ তিনি বলেন, ‘তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, রাজনৈতিক কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, নিজ স্বার্থ হাসিলে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।’
ড. ইউনূস আরো বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।’
প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো শেখ হাসিনার ১৫ বছরের বেশি সময়ের শাসনামলে তাঁর দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে ভোটে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যা ঘটানো এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কুক্ষিগত করার অভিযোগ করেছে।
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে বিতর্ক চলছে—দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িকভাব স্থগিত করা হবে, না দলটির সংস্কার হবে, নাকি দলটিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে।
ড. ইউনূসের ধারণা, আওয়ামী লীগ ভেঙে যেতে পারে; তবে গুরুত্বের সঙ্গে এ কথাও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে না। কারণ এটি ‘কোনো রাজনৈতিক সরকার’ নয়।
আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, এখানে রাজনৈতিক দলগুলো ‘ঐকমত্যের’ ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, ‘তাদের রাজনীতির জায়গার বিষয়ে দলগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ইঊনূসের সরকার নতুন সংসদীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে নির্বাচন কখন হবে, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
শেখ হাসিনা ভারতে কোথায় আছেন, তা পরিষ্কার নয়। সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফিন্যানশিয়াল টাইমসকে বলেছেন, তাঁদের দল ‘যেকোনো সময় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত’।
অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক এবং স্বতন্ত্র গুণের অধিকারী ‘গরিবের ব্যাংকার’ ড. ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এর আগে তিনি শেখ হাসিনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন, সমালোচকরা যে বিষয়টিকে প্রতিহিংসা বলে উল্লেখ করেছেন। ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে দুজন ছাত্রনেতা রয়েছেন। এই পরিষদ নতুন নির্বাচন সামনে রেখে ভিত্তি তৈরির কাজ করছে।
ড. ইউনূস বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা নেই তাঁর। নির্বাচনের সময়সূচির বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো বিভিন্ন বিষয়ের নিষ্পত্তি করা এবং নতুন একটি সংস্কারসূচির বাস্তবায়ন। নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করব।’
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তাঁর সবচেয়ে বড় বিদেশি সমর্থক ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে।
ড. ইউনূস বলেন, তাঁর সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চাইবে। তবে তা শুধু তখনই, যখন দেশের অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) রায় ঘোষণা করা হবে। চলতি মাসে এই ট্রাইব্যুনাল থেকে শেখ হাসিনা এবং আরো ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
তিনি বলেন, ‘তাঁর (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। রায়ের পর ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে আমরা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালাব। রায় হওয়ার আগে কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি না।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ