সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
ফের হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রতিশ্রুতি হলো বিদেশি যুদ্ধ বন্ধ করা। তবে মধ্যপ্রাচ্যে তিনি দুটি বিপজ্জনক সংঘাতের সম্মুখীন হচ্ছেন- একটি গাজায় এবং অপরটি লেবাননে। এই দুটি সংকট তার অঙ্গীকারকে দারুণভাবে পরীক্ষায় ফেলবে নিঃসন্দেহে।
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণাগুলোতে নিজেকে একজন দৃঢ় নেতা এবং শান্তির জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেছেন, ‘একটা চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছাতে হবে এবং শান্তির পথে ফিরতে হবে’।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও ট্রাম্পের অবস্থান
ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে ইসরাইল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় অব্যাহতভাবে রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজায় ইসরাইলি হামলা শুরুর পর থেকে হিজবুল্লাহও ইসরাইলের ওপর রকেট হামলা চালাচ্ছে এবং ইসরাইলও পালটা আক্রমণ শুরু চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে গাজায় প্রায় ৪৪,০০০ ফিলিস্তিনি এবং লেবাননে প্রায় ৩,০০০ লেবানিজ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতকে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তির ভারসাম্যের জন্য একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইরানের নেতৃত্বাধীন ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ এবং ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত রয়েছে।
এ অবস্থায় ট্রাম্পের যুদ্ধ শেষ করার অঙ্গীকার ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। কারণ ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রচারাভিযান পুনরায় শুরু করতে চান।
এ বিষয়ে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জেমস জেফরি মিডল ইস্ট আই-কে জানিয়েছেন, ‘ট্রাম্প ইরানকে একটি স্পষ্ট হুমকি হিসেবে দেখেন এবং যুদ্ধ নয়, বরং কঠোর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইরানকে প্রতিরোধ করতে চান’।
এ বিষয়ে ট্রাম্প নিজেও বলেছেন যে, ইরান বর্তমানে ‘বিপদে’ রয়েছে। কারণ ইসরাইল তেহরানের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলা চালাচ্ছে।
লেবানন যুদ্ধের প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব
দুটি সংঘাতের মধ্যে লেবাননের যুদ্ধ শেষ করার বিষয়েই ট্রাম্পের প্রচারণায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি ‘ভোগান্তি এবং ধ্বংস’ বন্ধ করতে চাই।
ট্রাম্পের এই আগ্রহের পেছনে তার লেবানিজ উপদেষ্টা মাসাদ বুলোসের প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তাবিত একটি অস্ত্রবিরতির খসড়া ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য উত্তরাধিকার হিসেবে আসবে। এই প্রস্তাবে লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীকে শক্তিশালী করা, লেবানিজ সেনাবাহিনীকে দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করা এবং ইসরাইলকে আরও স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা অ্যালান পিনো বলছেন, হিজবুল্লাহ অনেক বেশি ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হবে না।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পথ খোঁজার সম্ভাবনা
এদিকে গাজার সংঘাত সমাধানে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ট্রাম্পের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ। বাইডেন প্রশাসন অস্ত্র সরবরাহকে আলোচনার টেবিলে চাপ হিসেবে ব্যবহার করতে অস্বীকার করেছে এবং ট্রাম্পেরও এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস অবশ্য স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে। তবে ইসরাইল রাফাহ সীমান্ত এবং নেটজারিম করিডোরে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চায়, যা হামাসের জন্য অগ্রহণযোগ্য।
এদিকে এবারের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ে ইসরাইলের ডানপন্থি নেতারা রীতিমত আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তবে ট্রাম্প যদি ইসরাইলের ডানপন্থিদের বসতি আন্দোলনের দাবি মেনে নেন, তাহলে গাজা উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা পিনো বলেন, ট্রাম্প যদি বুদ্ধিমান হন, তাহলে তাকে ইসরাইলিদের সঙ্গে মিলেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
মোট কথা হলো, ট্রাম্প যা-ই করেন না কেন, তিনি ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রতি তার সমর্থন বজায় রাখবেন। একই সঙ্গে তিনি সম্ভবত ইরানকে প্রতিহত করার জন্য আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন।
একই সঙ্গে ট্রাম্প তার মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে দীর্ঘমেয়াদী মার্কিন সম্পৃক্ততা নীতি সীমিত রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
সূত্র: যুগান্তর