ফাহির আমিন, রাবি :
প্রায় অর্ধযুগ পরে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এতে সভাপতি পদে ২২জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৭২ জন প্রার্থী রয়েছেন। যার মধ্যে ডজন খানেক নেতা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছে। তবে এসব প্রার্থীর অনেকেই ড্রপ আউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অছাত্র হিসেবে বিবেচিত।
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবী, ড্রপ আউট কিংবা অছাত্র নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর নেতৃত্বে না আসুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী ড্রপ আউট হলে সে আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে না। তাছাড়াও সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব নিয়েও রয়েছে নানাবিধ প্রশ্ন।
ড্রপ আউট হওয়া প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব।
এছাড়া নতুন নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকা নেতাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে নিয়মিত ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার তালিকায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন।২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী লিংকন মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ-এমবিএ শেষ করেছেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীনুল ইসলাম সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন সহসভাপতি মেজবাহুল ইসলাম।
তবে এদের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছেন।
মেহেদী হাসান মিশু:
এবারের ২৬তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন তিনি। জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করা তথ্যানুযায়ী মেহেদী হাসান মিশু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ ৬ শিক্ষাবর্ষের মধ্যে সম্মান শেষ করতে হয়। বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনার্স শেষ করতে না পারায় বিভাগ থেকে ড্রপ-আউট হয়েছেন তিনি। সে হিসেবে তার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি
আসাদুল্লাহ হিল গালিব:
শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব শীর্ষ দুইটি পদের একটি পেতে লড়াই করছেন।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে গালিব বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু পরবর্তীতে টানা তিনবছর প্রথম বর্ষ অতিক্রম করতে না পারায় ড্রপ আউট হন তিনি। তবে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে তিনি এসএসসি, এইচএসসি সেশন উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি
কাজী আমিনুল হক লিংকন:
বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন। ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী লিংকন মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ-এমবিএ শেষ করেছেন। ছাত্রত্ব ধরে রাখতে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে ভর্তি হয়েছেন।
এ সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে ভর্তি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ ছাত্র হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি পুরোপুরি জানি না তবে বিবিএ এবং এমবিএ শেষ করে আমি সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছি। আমি মনে করি এতে আমার উপযুক্ত ছাত্রত্ব আছে।’
এদিকে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদ-পদবী পাওয়ার জন্য লিংকনের আর মাত্র দেড় মাস বয়স হাতে আছে।
শাহীনুল ইসলাম সরকার ডন:
বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীনুল ইসলাম সরকার ডন ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী। ছাত্রত্ব দেখানোর জন্য তিনি ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের ফ্রেন্স ল্যাংগুয়েযে পড়া শেষ করে জার্মান ল্যাংগুয়েজের শর্ট কোর্সে ভর্তি রয়েছেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছি। বিবিএ এমবিএ শেষ করে ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের জার্মান ল্যাংগুয়েজের শর্ট কোর্সে ভর্তি আছি।’
নিজের বয়সের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ‘ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বে আসার জন্য সর্বোচ্চ ২৯ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারে। সেই হিসেবে আরো এক মাস বয়স বাকি আছে আমার।’
মোস্তাফিজুর রহমান বাবু:
বর্তমান কমিটির গণযোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাংগুয়েযে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছেন।
বর্তমান পড়াশোনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাংগুয়েযে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছি’
মেজবাহুল ইসলাম:
সহ-সভাপতি মেসবাহুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবের্ষর শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালে অনার্স এবং পরের বছর মাস্টার্স শেষ করেন।
বর্তমানে তিনি ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাংগুয়েযে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালে অনার্স এবং পরের বছর মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাংগুয়েযে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছি’
এছাড়াও অনার্স শেষ করেও ছাত্রত্ব ধরে রাখতে মাস্টার্স শেষ করেননি উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়। তিনি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী।
সম্মেলনের এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আদনান হোসেন জানান, বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অবশ্যই অবগত আছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে,নিয়মিত ছাত্র, ক্লিন ইমেজধারী তারাই প্রাধান্য পাবে। সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং জামাত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কেউ নেতৃত্ব আসবে না।