বৃহস্পতিবার , ১১ আগস্ট ২০১৬ | ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহীতে সিডিএম হাসপাতালে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

Paris
আগস্ট ১১, ২০১৬ ২:১৩ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর বেসরকারি সিডিএম হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, অযৌক্তিক পরীক্ষা এবং হাসপাতালের অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনেরা।

নওগাঁর মহাদেবপুরের মহিষবাথান থেকে আসা এক রোগী স্বজন বেলাল হোসেনের অভিযোগ, তার ছেলে রবিউল ইসলাম(২০) গত ৫ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই রোগীর বাবা বেলালের পেছনে লেগেছিল লক্ষীপুর সংলগ্ন সিডিএম হাসপাতালের দালাল মোস্তাফিজ। সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হবে না, ছেলের উন্নত চিকিৎসা করতে ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া লাগবে, মাত্র ১০-১২ হাজার টাকায় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে- এমন প্রলোভন দেখিয়ে রোগীক সিডিএম হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে মোস্তাফিজ। ওই দিন রাতেই সিডিএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রবিউলকে। এরপর থেকে হাসপাতালের আইসিইউ‘তে রাখা হয়। প্রতিদিন আইসিইউ এর ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা বিল হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।  এছাড়া ভর্তির পরদিন শনিবার সকালে রক্তপরীক্ষা, বুকের এক্সরে, প্রসাব পরীক্ষা দেয়া হয়। প্রায় সব পরীক্ষাই সিডিএম হাসপাতালে করা হয়, যার মাধ্যমে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। মাথায় আঘাতের জন্য এক্সরে আর প্রসাব পরীক্ষা কেন জানতে চাইলে স্বজনদের জানানো হয় রোগীর অন্যকোন সমস্যা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেই এসব পরীক্ষা।

ভুক্তভোগী বেলাল আরো জানান, এরপর রোববার সকাল ৮ টায় রবিউলের মস্তিস্কের অপারেশন করা হয়। ঘন্টা ব্যাপী অপারেশনের পর রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করে ডাক্তার এবং কর্তব্যরত নার্সরা।আর অপারেশন বাবদ ৪৫ হাজার টাকা আদায় করা হয় ।তবে এ টাকার কোনো রশিদ দেওয়া হয়নি। অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার দুইদিন পর মঙ্গলবার সিডিএম হাসপাতাল থেকে জানানো হয় রোগীর অবস্থা খুব খারাপ ফুসফুসে সমস্যা হয়েছে পরীক্ষা করতে হবে। আবারো রক্ত পরীক্ষা ও ফুসফুসের জন্য বুকের এক্সরে করতে দেয়া হয়।রোগীর অবস্থা ভালো না দেখায় বাধ্য হয়ে রবিউলের বাবা সে পরীক্ষাগুলো করতে বাধ্য হন।

নানা পরীক্ষা, হাসপাতালের ফি, আইসিইউ ফি, ওষুধ বাবদ রোগীর স্বজনদের ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর টাকার অভাবে চিকিৎসার খরচ না যোগাতে পেরে রোগী ছাড়িয়ে নিতে চাইলে সিডিএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনের কাছে আরো ৬০ হাজার টাকা দাবি করে। তাদের দাবি মেডিসিন এবং হাসপাতাল ফি বাবদ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে যেতে পারবে।

রবিউলের বাবা বেলাল হোসেন বলেন, ইচ্ছা করে আমাদের হাসপাতালে জিম্মি করে রেখেছে। এদের প্রতিটি পরীক্ষা বিকেলে করতে দিত। আর রিপোর্ট পেতে ৯টা থেকে ১০ টা বাজলে ডাক্তার আর রোগী দেখত না। প্রতিটি দিনই এমন করে আমাদের আটকে রেখে ১টা করে পরীক্ষা দিত। এসব পরীক্ষা কোন কাজের না।পরীক্ষাগুলো বাইরে না করিয়ে ওই হাসপাতালেই করতে হবে বলে জোর করত।

13950523_1778457462443358_552086810_o

  • কান্নাজড়িত কণ্ঠে বেলাল আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ আমরা এতো টাকা কোথায় পাব? এতো টাকা দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করাবো না বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আপনাদের রোগী আপনাদের রিক্সে নিয়ে যাবেন। রোগী মারা গেলে আমাদের কিছু করার নাই।তবে আমাদের পাওনা ৬০ হাজার টাকা দিয়ে তারপর রোগী নিয়ে বের হবেন।’

এদিকে এই তথ্যের ভিত্তিতে রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলতে গেলে ছুটে আসেন আরেক ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন। গত ১১ জুলাই নগরীর নওদা পাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন আফরোজা বেগম (৪৭)। আঘাতে তার পায়ের মাংস থেলে যায়, মাথায় আঘাত লাগে এবং কান সামান্য কেটে যায়। ওই দিনই রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। রামেক হাসপাতালের ৩৭ নং ওয়ার্ডে দীর্ঘ ১৫ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর তাকে আমেনা হাসপাতাল সিডিএম হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন রামেক হাসপাতালের নার্সরা।

ওই দিন রাত আড়াইটাই সিডিএম হাসপাতালে ভর্তির উদ্দেশ্যে রোগী আফরোজাকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন তার ছোট বোন ইতি। ইতির অভিযোগ এর সব ব্যবস্থা তার অজান্তে নার্সরাই করে দিয়েছেন।

  • নার্স বলল আপনাদের রোগীর এখানে ভালো চিকিৎসা হবেনা।আপনি বরং সিডিএম আর নয়ত আমানা হাসপাতালে নিয়ে যান। সিডিএমএই ভালো হবে। মাত্র ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হবে। আমি সিডিএম হাসপাতালে পৌছাতেই সেখানে ষ্ট্রেচার, বেডিং নিয়ে রেডি হাসপাতালের লোকজন। বলছিলেন আফরোজার বোন ইতি।

13977939_1778457492443355_949417383_o

ইতি আরো বলেন, সকালে আমাদের নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেয়। আমরা সুচিকিৎসার জন্য সব পরীক্ষা করি। অপারেশনের নামে পায়ের ঘায়েল অংশটি ওয়াশ করে দেয়।এরপর প্রতিটি রিপোর্টে আমাদের বাধ্য করে হাসপাতালে থাকতে। আর প্রতিটি পরীক্ষাই এখানে করতে বলে যা অন্যান্যদের চেয়ে অনেক ব্যয়বহুল।ভুল করে একদিন কেবিনে থেকেছি বলে ১৬শ টাকা আদায় করে নিয়েছে।

  • রোগী আফরোজার মেয়ে শর্মিলা বলেন, মেডিসিন, হাসপাতাল ফি বাবদ আমাদের কাছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি টাকা আদায় করছে। টাকা যোগাড় করতে না পারায় আজ ৫ দিন ধরে আমার মায়ের চিকিৎসা বন্ধ রেখেছে।এ হাসপাতালে এসে এদের কাছেই আমাদের ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমরা ছুটি নিতে চাইলে আমাদের কাছে আরো ৪০ হাজার টাকা দাবি করে। এতো টাকা আমরা কোথায় পাবো, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে আমাদের বলে আপনার রোগী আপনি টাকা কোথায় পাবেন আপনি জানেন। এতো টাকা পরিশোধ করতে না পারায় হাসপাতাল থেকে রোগীকে বের করা সম্ভব হচ্ছে না।

শর্মিলা জানান, ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীদের আটকে রেখে অর্থ আদায় করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।টাকা দেয়ার আগে খুব ভালো ব্যবহার করে আর টাকা দিলেই সব ক্ষোভ স্বজনদের উপর ঝাড়ে হাসপাতালের লোকজন।

শুধু দুইজন রোগী ও স্বজন নয়, এভাবে আরো অনেক রোগীকে জিম্মি করে সিডিএম হাসপাতালে অর্থ আদায় করা। এ নিয়ে রোগীর অসহায় স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সিডিএম হাসপাতালের চেয়ারম্যান চৌধুরী মাহামুদুর রহমান বলেন, হাসপাতালে কোনো অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয় না।

তিনি আরো বলেন, রোগীর চিকিৎসার জন্য যা খরচ হয়েছে, তা পরিশোধ করে রোগীকে যেকোনো সময় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে নেওয়া যাবে। টাকা পরিশোধ ছাড়া তো রোগাীকে ছাড়া যায় না।

স/মি

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর