শনিবার , ৮ এপ্রিল ২০১৭ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে ভুটভুটি থেকে টেবিল-চেয়ার পেতে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা

Paris
এপ্রিল ৮, ২০১৭ ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর মহাসড়কে চলছে অবৈধ ভটভটি। চলার সুযোগ দিয়ে রাজশাহী নগরী ও জেলার অন্তত ১০টি স্থানে চেয়ার-টেবিল পেতে এসব যান থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। এর একটি অংশ যাচ্ছে পুলিশের কাছে। আর বাকিটা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছে স্থানীয় চাঁদাবাজরা।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি হুইলার অটোরিকশা, অটো টেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এসব মহাসড়কের মধ্যে কাশিনাথপুর (পাবনা)-পাবনা বাইপাস-দাশুরিয়া-নাটোর বাইপাস-রাজশাহী বাইপাস-নবাবগঞ্জ-সোনা মসজিদ-বালিয়াদিঘী স্থলবন্দর মহাসড়ক রয়েছে।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় টেবিল-চেয়ার পেতে বসে আছে তিন-চারজন ব্যক্তি। তাদের সামনে দিয়ে ভটভটি গেলেই সেটি থামিয়ে আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা। কোনো চালক পাশ কাটিয়ে চলে গেলে, তাকে মোটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া করে আরো বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে।

চাঁদা আদায়কারী একজন দেলোয়ার নামের যুবকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশকে টাকা দিতে হয়। নগরীর ট্রাফিক পুলিশ ও থানায় টাকা না দিলে একটি ভটভটিও রাস্তায় চলতে দেবে না। তাই তাদের হয়ে টাকা উঠাই আমরা। এর একটি অংশ আমরাও পাই। ’

 

দেলোয়ার আরো বলেন, ‘আমরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেই টাকা উঠাই। না হলে আমরা কি এভাবে টাকা উঠাতে পারতাম?’ টাকা আদায়ের জন্য তাঁর সঙ্গে অন্তত ১০ জন আছেন বলেও দাবি করেন দেলোয়ার।

 

একই দৃশ্য দেখা যায় নগরীর নওদাপাড়া এলাকার বেলপুকুর-কাশিয়াডাঙ্গা সিটি বাইপাইশ রোডেও। এখানে চাঁদা আদায়ের জন্য একটি বাঁশের বেড়ার ঘর তৈরি করে রাখা হয়েছে। সেই ঘরে বসেই ভটভটিচালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়।

 

এখানে চাঁদা আদায়কারীদের মধ্যে আছে আসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘টাকা না দিলে কোনো ভটভটি রাস্তায় চলতে পারবে না। তাই টাকা আদায় করতে এই ঘরটি করা হয়েছে। না হলে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট হয় আমাদের। ’

 

ভটভটি চালকরা দাবি করেন, তাঁদের সব চেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় রাজশাহী সিটি হাটের দিনে গরু পরিবহনের সময়। গরু নিয়ে বের হলেই দফায় দফায় চাঁদা আদায় করে মহাসড়কে ভটভটি চালানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে চাঁদাবাজরা। তারা টাকা নিয়ে একটি স্লিপ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। এ স্লিপ দেখালেই পুলিশও তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। চাঁদাবাজরা তাদের আগেই বলে দিচ্ছে টাকা না দিলে পুলিশ রাস্তায় হয়রানি করবে।

 

জানতে চাইলে রাজশাহীর বেলপুকুর এলাকার ভটভটিচালক হযরত আলী বলেন, এখন ভটভটি নিয়ে বের হওয়ার জো নেই। রাস্তায় বের হলেই পুলিশের নামে টাকা দিতে হয় আগে। দফায় দফায় আদায় করা হয় টাকা। এলাকাভিত্তিক টাকা আদায় করা হয়।

 

হযরত আলী বুঝিয়ে বলার ঢঙে আরো বলেন, ধরেন আপনি ভটভটিতে করে পুঠিয়া থেকে রাজশাহী নগরীতে গরু বা অন্য কোনো মালামাল নিয়ে গেলেন। তখন আপনাকে প্রথমে পুঠিয়াতেই দিতে হবে ২০ টাকা। এরপর নগরীতে ঢোকার আগেই তালাইমরা বা নওদাপাড়া এলাকায় দিতে হয় ২০ টাকা। এরপর যদি ওই ভটভটি গোদাগাড়ীর দিকে যায়, তাহলে সেখানে দিতে হবে আরো ২০ টাকা। তিনি দাবি করেন, দফায় দফায় এ চাঁদা নেওয়া হয় পুলিশের নামে।

আরেক ভটভটিচালক আকবর আলী বলেন, ‘আমাদের আয় হোক আর না হোক, আগে রাস্তায় চাঁদা দিতেই হবে। চাঁদা দিলে মহাসড়ক কেন, সব সড়কই তখন বৈধ। আর টাকা না দিলে কোনো সড়কেই ভটভটি চালানো যায় না। তখন নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ’

 

রাজশাহী ভটভটি মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজশাহীতে সব মিলিয়ে অন্তত ৩৫ হাজার ভটভটি আছে। গড়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার রাস্তায় নামে মালামাল পরিবহনের জন্য। আর সব ভটভটি থেকেই আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। ফলে গড়ে প্রতিদিন ভটভটি থেকে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যে টাকার মধ্যে একটি অংশ পায় আদায়কারীরা। আরেকটি অংশ পায় পুলিশ।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার নওহাটা, দুর্গাপুর পৌরসভা বাজার এলাকা, চারঘাট-বাঘা, গোদাগাড়ী, তানোর, পুঠিয়া, মোহনপুর, বাগমারাতেও ভটভটি থেকে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চাঁদা আদায় করা হয় জেলার নওহাটা ও দুর্গাপুর বাজারে। এই দুটি বাজারে পৌরসভা থেকে রশিদ নিয়ে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী জোর করে ভটভটি থেকে চাঁদা আদায় করছে। আদৌ ওই টাকা পৌরসভায় জমা হয় না বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

 

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘পুলিশের নাম করে নগরীর কোথাও ভটভটি থেকে চাঁদা আদায় হয় বলে আমার জানা নেই। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে খোঁজ নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। ’

 

রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেনও একই দাবি করেন। এটি স্থানীয় কিছু লোকজনই করতে পারে বলে তিনি জানান।

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর