সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
যৌনতা মানব জীবনের খুবই সাধারণ একটি বিষয়। ছোট্ট শিশু একসময় বড় হয়, কৈশোরে তার মনে লাগে রঙিন হাওয়ার পরশ। তারুণ্যে পৌঁছে সে আস্তে আস্তে দায়িত্ব নিতে শেখে নিজের, বাবা-মা-ভাই-বোন নিয়ে গঠিত নিজের পরিবারের, গঠন করে স্ত্রীকে নিয়ে নিজের নতুন আরেকটি পরিবার। স্ত্রীর সাথে ভালোবাসা একদিকে যেমন মানসিক, তেমনই শারীরিক। যৌন সম্পর্ক নিয়ে আজকের পৃথিবীর ধ্যানধারণাগুলো অনেকটাই বিজ্ঞানভিত্তিক। তবে এককালে এই ধারণাগুলো এতটাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিল যে ভাবলেই অবাক হতে হয়। তেমন ৬টি কাহিনী নিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের লেখা।
১) জন্ম নিয়ন্ত্রণ
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়ানোর জন্য আজকের দিনে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভিন্ন নিরাপদ উপায় বাৎলে দিয়েছে। সেসব উপায় একদিকে যেমন কার্যকর, তেমনি নিরাপদও বটে। তবে এককালে পৃথিবীর অবস্থা এমনটা ছিলো না। জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রাচীন পৃথিবীর ধারণা এবং গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আমাদের বিস্মিত না করে পারবে না।
গ্রীনল্যান্ডের স্থানীয় অধিবাসীরা একসময় মনে করতো যে, নারীদের গর্ভধারণের জন্য দায়ী মূলত চাঁদ! এর হাত থেকে রক্ষা পেতে তাই তাদের নারীরা চাঁদের দিকে তাকানো থেকে নিজেদের বিরত রাখতো।
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে ইউরোপের অন্ধকার যুগের জাদুকররা নারীদের পরামর্শ দিতো বেজির অণ্ডকোষ নিজেদের পায়ে বেঁধে রাখতে!
স্বামীর সাথে মিলনের পর তৎকালীন নারীরা ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন এবং খুঁজে খুঁজে এমন এক জায়গা তারা বের করতেন যেখানে আগেই কোনো স্ত্রী নেকড়ে মূত্র বিসর্জন করে গেছে। এরপর ঠিক ঐ জায়গাটিতে একই কাজ করতেন সেই নারী! প্রায় একইরকম আরেকটি প্রথার কথাও জানা যায় যেখানে একজন নারী কোনো গর্ভবতী নেকড়ের মূত্রের পাশে চক্রাকারে হাঁটতে থাকতেন আর বিড়বিড় করে চলতো তার মন্ত্রোচ্চারণ!
প্রাচীন মিশরের নারীরা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে নিজেদের সার্ভিক্সে মধু মাখিয়ে নিতো। মধুর সেই প্রলেপ শুক্রাণুর গতিপথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতো। তারা মধুর সাথে ব্যবহার করতো কুমিরের মলও!
২) মিশরের অজাচারে লিপ্ত দেব-দেবীরা
আপন ভাই-বোনের মতো পরিবারের একেবারে কাছের মানুষদের মাঝে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টিকে বলা হয় ইনসেস্ট বা অজাচার। নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ঘৃণিত একটি বিষয় এটি। তবে প্রাচীন মিশরে এটি ছিল খুবই সাধারণ ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে এর দেখা মিলতো তাদের রাজপরিবারে। তারা চাইতো তাদের রাজরক্তে যেন বাইরের সাধারণ রক্ত প্রবেশ না করে। ফলে নিজেদের একেবারে নিকটজনদের মাঝেই বিয়ের আয়োজন করতো তারা। ভাই-বোনের মাঝে বিয়ে ছিল খুবই সাধারণ একটি ঘটনা।
প্রাচীন মিশরের ফারাওরা নিজেদেরকে পৃথিবীর বুকে একেকজন ঈশ্বরের সমতুল্য মনে করতো। মাটির পৃথিবীতে বসে তারা ঠিক তা-ই করতো, যা তারা জানতো স্বর্গে বাস করা তাদের উপাস্য দেব-দেবীদের সম্পর্কে। আসলে তৎকালীন মিশরীয়রা যেসব দেব-দেবীর পূজা করতো, উপকথানুযায়ী সেই দেব-দেবীরাও একইরকম অজাচারে লিপ্ত ছিল।
এর মাঝে উল্লেখযোগ্য বলা যায় দেবতা ওসাইরিস ও দেবী আইসিসের মাঝে বিয়েকে, যারা একইসাথে রক্ত সম্পর্কের ভাই-বোনও ছিল। একবার দ্বন্দ্বের জের ধরে তাদের অপর ভাই সেত ওসাইরিসকে খুন করে এবং দেহটিকে টুকরো টুকরো করে ফেলে। স্বামীকে পুনরুজ্জীবন দিতে আইসিস এরপর সেই কাটা অংশগুলো জোগাড় করতে নেমে যায়। সকল অঙ্গই সে সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়, কেবলমাত্র ওসাইরিসের পুরুষাঙ্গটি বাদে। একটি কুমির ওটা খেয়ে ফেলেছিল! খাওয়াদাওয়া শেষে কুমিরটি নেমে গিয়েছিল নীল নদে। ওদিকে দেবতার পুরুষাঙ্গ নীল নদের মাঝে চলে আসায় সে বেশ উর্বরা হয়ে ওঠে, উর্বর হয়ে ওঠে এর আশেপাশের মাটি! পুরুষাঙ্গহীন স্বামীকে মেনে নিতে না পেরে পরবর্তীতে মাটি দিয়ে সেটি বানিয়ে তাতে ফুঁ দিয়ে জীবন সঞ্চার করে দেবী আইসিস!
৩) পুরুষাঙ্গের জাদুর কবজ
এককালে পৃথিবীতে পুরুষাঙ্গ বেশ শক্তিশালী এক প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। আপনি প্রাচীন এথেন্স কিংবা রোমের রাস্তায় হেঁটে বেড়াবেন, অথচ কিছু সময় পরপর পুরুষাঙ্গের প্রতীক বা মূর্তি চোখে পড়বে না, এমনটা ভাবাই যেত না। এথেন্সেই আসা যাক। তৎকালে সেখানে হার্মস নামক একধরনের ভাষ্কর্য প্রায়ই চোখে পড়তো। বর্গাকৃতির সেই পিলারে দেবতা হার্মিসের মাথা থাকার পাশাপাশি থাকতো উত্থিত পুরুষাঙ্গের প্রতিকৃতিও। এগুলোকে তারা ভাবতো তাদের রক্ষাকর্তা হিসেবে! ৪১৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, সেই বছর এক মাতাল মাতলামি করতে করতে একটি পুরুষাঙ্গ ভেঙে দিলে রাজ্যজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি হয়ে যায়!
লোকে ভাবতো, পুরুষাঙ্গের এই প্রতিকৃতি বুঝি তাদেরকে অশুভ কোনোকিছুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। এগুলো তাই ফ্রেস্কোতে আঁকা হতো, মূর্তিতে খোঁদাই করা হতো, ব্রোঞ্জ দিয়ে বানানো হতো এবং যেসব জায়গায় মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা চাইতো, তার সব জায়গাতেই লাগানো হতো এর প্রতিমূর্তি। কখনো কখনো আবার এর সাথে ডানা ও ঘণ্টা বেঁধে দরজার সামনে ঝুলিয়ে রাখা হতো। তখন এগুলো একই সাথে ওয়াইন্ড চাইম এবং প্রতিরক্ষকের ভূমিকা পালন করতো (তাদের মতে)।
৪) স্পার্টার নারী
প্রাচীন বিশ্বের অনেক সমাজের তুলনায় স্পার্টার নারীরা ছিল একেবারেই বিপরীত। এথেন্সের নারীরা যেখানে অধিকাংশ সময় বেশ সমাজবিচ্ছিন্ন সময় কাটাত, সেখানে স্পার্টার নারীরা ভোগ করতো অবাধ স্বাধীনতা। একবার স্পার্টার রানী গর্গোকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “কেন তোমরা স্পার্টার নারীরাই একমাত্র নারী যারা তোমাদের পুরুষদের উপর কর্তৃত্ব প্রদর্শন কর?” রানী তখন সগর্বে জবাব দিয়েছিলেন, “কারণ আমরাই একমাত্র নারী যারা আসল পুরুষের মা!”
তবে স্পার্টার একজন নববিবাহিতা নারীর জন্য বিয়ের প্রথম রাতটা হতো বেশ আলাদা। তার পুরো মাথা কামিয়ে দেয়া হতো সেদিন। তাকে পরানো হতো পুরুষদের আলখেল্লা ও স্যান্ডেল। এরপর সেই নারী অন্ধকারে বসে থাকতো। স্বামীকে এসে তার স্ত্রীকে খুঁজে বের করে এরপরেই যা করার করা লাগতো। কিন্তু কেন একজন নববধূকে পুরুষের বেশ ধারণ করতে হবে? এ ব্যাপারে কিছু কিছু ঐতিহাসিকের মতে, সহযোদ্ধাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটানো স্বামীকে হেটারোসেক্সুয়ালিটিতে আকৃষ্ট করতেই তারা এমনটা করতো।
৫) ভ্রাম্যমান জরায়ু
মৃগীরোগ নিয়ে বেশ আজব ধারণা প্রচলিত ছিল প্রাচীন বিশ্বের নানা সভ্যতার মানুষদের মাঝে। এমন ধারণার প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় ‘ফাদার অফ মেডিসিন’ বলে খ্যাত হিপোক্রেটিস অফ কস এর কাছ থেকে। বিভিন্ন কারণকেই তিনি মৃগীরোগের জন্য দায়ী বলে মনে করতেন। তবে নারীদের বেলায় তার ধারণা ছিল, জরায়ু পুরো শরীর জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর বদৌলতেই এমনটা হয়ে থাকে!
আজকের দিনে আমাদের কাছে এমন ধারণা বেশ অদ্ভুত ঠেকলেও এককালে জরায়ুকে আসলেই এক ঝামেলার বস্তু বলে মনে করা হতো। প্রাচীন মিশরে কিছু ওষুধের কথা জানা গেছে, যা নারীরা খেত চলাচল করতে থাকা জরায়ুকে জায়গামতো ফিরিয়ে আনতে। ওদিকে প্লেটো জরায়ুকে বেশ সমস্যার জন্ম দেয়া এক প্রাণী বলে মনে করতেন, যেটা যেখানেই যায়, সেখানেই ঝামেলার সূত্রপাত ঘটিয়ে আসে!
৬) পতিতালয়
পতিতালয় এমন এক জায়গা, যা কোনো সভ্য সমাজেই ভালো চোখে দেখা হয় না। তবে প্রাচীন নানা সভ্যতা এর ব্যতিক্রম ছিল। প্রাচীন রোমেই যাওয়া যাক। পম্পেইয়ের ধ্বংসস্তূপে ঘুরে বেড়ালে প্রাচীন রোমের পতিতালয় সম্বন্ধে বেশ ভালো ধারণা পাওয়া যেত। রাস্তাঘাটে গ্রাফিত্তিতেই স্পষ্ট করে বোঝানো হতো পতিতালয়ের ভেতরে একজন পুরুষ কতভাবে তার চাহিদা মেটাতে পারে! এছাড়া পতিতালয়ের ভেতরেও ছিল নানা ধরনের ছবি, যাতে করে সে কী পেতে যাচ্ছে সেই সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা পেতে পারে।
ব্যাবিলনের অবস্থা তো ছিল আরো খারাপ। গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের জানান, ব্যাবিলনের প্রতিটি নারীকে জীবনে কম করে হলেও একবার ইশতারের মন্দিরে গিয়ে ‘পবিত্র পতিতা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা লাগতো। কে তাদেরকে প্রস্তাব দিচ্ছে সেটা মুখ্য বিষয় ছিলো না, তারা তখন নিজেদের শরীর বিলিয়ে দিতে বাধ্য ছিল। অবশ্য কোনো কোনো ইতিহাসবিদ হেরোডোটাসের এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন।