রুলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(ক) ধারা কেন অবৈধ, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অসঙ্গতিপূর্ণ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(ক) ধারায় বলা আছে, যৌতুকের কারণে মৃত্যু ঘটানোর জন্য মৃত্যুদণ্ডে বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং উভয় ক্ষেত্রে উক্ত দণ্ডের অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
রিটকারী ইকুইটি রাইটস অ্যান্ড গভর্নেন্স ট্রাস্টের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মনজুর আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।
পরে শাহদীন মালিক বলেন, অসাংবিধানিক বলার মূল যুক্তি ছিল ১১(ক) ধারা অনুসারে যৌতুকের জন্য কোনো মৃত্যু ঘটলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যখন কোনো অপরাধের একটা শাস্তি থাকে, একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তখন সেটা ধরে নেওয়া হয় ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। বিচারক অপরাধী সাব্যস্ত করে কাউকে যাবজ্জীবন দিতে পারে, মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে। তার এই ক্ষমতা যদি কেড়ে নেওয়া হয়, দোষী হলে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে এটা অসাংবিধানিক।
রিটে বলা হয়, সংবিধানের ২৬, ২৭, ৩১, ৩২ ও ৩৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(ক) অসঙ্গতিপূর্ণ। শুধু তাই না, এই ধারাটি আমাদের স্বাধীন বিচার বিভাগের মৌলিক কাঠামোর জন্যও ক্ষতিকর। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো সংবিধানের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ এবং কাঠামো। স্বাধীন বিচার বিভাগে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন বিচারকের বিচক্ষণতা হচ্ছে মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আইনের এ ধারাটির মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও বিচারকের স্বাধীনতা, বিচক্ষণতা ও নিরপেক্ষতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদে বিচারকার্য পরিচালনায় বিচারককে স্বাধীন থাকার নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ধারায় যৌতুকের কারণে মৃত্যুর জন্য মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়ায় বিচারকের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে।