শনিবার , ৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর রাজশাহীর ডিডি ১৪ বছর ধরে পদে, অভিযোগের পাহাড়

Paris
অক্টোবর ৫, ২০২৪ ৩:২১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

টানা ১৪ বছর ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (ডিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী। পেশায় একজন শিক্ষক হলেও তিনি প্রেষণে আঁকড়ে ধরে আছেন উপ-পরিচালকের চেয়ার। আর চেয়ার রক্ষা করতে গিয়ে তিনি নিজের ক্যারিয়ারে যোগ করেছেন অনিয়ম-দুর্নীতির পাহাড়। আওযামী লীগের আমলে দলীয় বিবেচনায় তাঁকে বসানো হয় এ চেয়ারে। এর পর আর ছাড়েননি পদটি। ড. শরমিনের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্য, অনিয়মের মাধ্যমে এমপিও, উচ্চতর বেতন স্কেলের নামে ‘উৎকোচ’ গ্রহণ এবং অধিনস্তদের সাথে অসাদাচারণসহ নানা অভিযোগ থাকলেও তিনি এখনও স্বপদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

এদিকে, গত ৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁর অপসারণের দাবিতে পর পর দুইদিন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা ভবন ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই দুইদিন নির্ধারিত সময়ে অফিসেও যাননি ডিডি শরমিন। এখনও তিনি খুব সকালে কিছু সময় এবং বিকালের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে বসেন। সারাদিনে অফিসে না থাকার কারণে নানা কাজে আসা শিক্ষকরা হচ্ছেন হয়রানির শিকার।

এ অবস্থায় ড. শরমিনের অপসারণ দাবি করে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে গত ১৪ আগস্ট অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখা। সংগঠনের জেলার এবং মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া স্বাক্ষর করেছেন জেলার নয়টি উপজেলার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও।
এছাড়া জেলার বাঘা উপজেলার কেশবপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক আবু সাঈদ কিসলু গত ২৯ আগস্ট আরেকটি অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর দিয়েছেন।

শিক্ষক সমিতির অভিযোগে বলা হয়, ড. শরমিন প্রায় ১৪ বছর ধরে মাউশির ভারপ্রাপ্ত ডিডি হিসেবে রাজশাহী অঞ্চলে কর্মরত। তার সীমাহীন অত্যাচার আর নির্যাতনে এ অঞ্চলের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার। তিনি সরকারি বিধি অমান্য করে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন, উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তির ফাইল বাতিল এবং পরবর্তীতে দালালের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কাজগুলো করে থাকেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘অধীনস্ত কর্মকর্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের তুই-তুকারি করে অবজ্ঞা করেন ডিডি শরিমন। ইতিপূর্বে অনেকবার তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও কাজ হয়নি। কোন এক অদৃশ্য শক্তির বিনিময়ে সর্বদা সকলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছেন ড. শরমিন। তাই তাকে এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে রাজশাহী থেকে বদলি করে রাজশাহী অঞ্চলের নির্যাতিত শিক্ষক কর্মচারীদের ‘রক্ষা’ করার আবেদন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ড. শরমিন রাজশাহীর প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১২ সালে তাকে মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। ২০১৮ সালের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক গোপনীয় প্রতিবেদনে মাউশির ১৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নানা অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাউশিকে নির্দেশ দেয়। তখন ড. শরমিনকে রাজশাহী থেকে ঢাকায় শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।

এর পর সাত মাসের মধ্যেই তিনি আবার রাজশাহী অঞ্চলের ডিডি হয়ে ফিরে আসেন। সেই থেকে তিনি এখনও এ পদটি ধরে রেখেছেন। ডিডি শরমিনের সঙ্গে তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে পরিচিত প্রোগ্রামার মো. মামুন ও উচ্চমান সহকারী আবদুল আওয়ালকেও সেই সময় ঢাকায় বদলি করা হয়। কিন্তু একই সময়ের মধ্যে তারাও ডিডি শরমিনের সঙ্গে রাজশাহী ফিরে আসেন।

ওই অভিযোগে বলা হয়, ড. শরমিন শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য তার প্রতিনিধির মাধ্যমে ঘুষ নেন। শিক্ষকদের সঙ্গে করেন খারাপ আচরণ। তার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক কথা বললেই তাকে রাজশাহী বিভাগের বাইরে বদলি করেন। ডিডি শরমিন অনিয়ম করে অনেকের এমপিও করেছেন। এদের কারও ছিল জাল সনদ। কারও ক্ষেত্রে মানা হয়নি জনবল কাঠামো নীতিমালা। তারপরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ২০১৮ সালে অভিযোগের প্রেক্ষিতে একবার তদন্তের মুখে পড়েছিলেন ড. শরমিন। তখনও তিনি পার পেয়ে যান।

জানতে চাইলে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ২০১৯ সাল থেকে একই অভিযোগ অসংখ্য বার করা হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছাায়ায় আমার পদে থাকার অভিযোগও ভিত্তিহীন। সাবেক মেয়রপত্নী আমার ছাত্রজীবন থেকে পরিচিত ছিলেন। একারণে তার সাথে আমার কিছুটা হয়ত ঘনিষ্ঠতা ছিলো। সেটিকেই অনেকেই রং মাখিয়ে রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরছে।’

মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী বলেন, মাউশির রাজশাহীর ডিডি ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে। তবে নিয়োগ কিংবা বদলির ক্ষমতা আমরা রাখি না। এটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে আমরা অনুরোধ জানাব।’

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর