আব্দুল্লাহ (৫) প্রতিবন্ধী মায়ের সন্তান। সে জানত না কে তার বাবা। তবে মাকে দেখার শেষ ইচ্ছা ছিল তার। শেষ ইচ্ছাটাও হলো না পূরণ। অতৃপ্তির চিরন্তন বেদনা নিয়েই পরপারে পাড়ি জমালো আব্দুল্লাহ। মাকে আর দেখা হলো না তার। তবে শেষ যাত্রায় সঙ্গী হয়েছেন পালিত মা জোসেদা বেগম। আর ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আব্দুল্লাহর পালিত বাবা আব্দুর রশিদ।
রোববার ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি এলাকায় মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তারা। এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। যাদের সবার বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়।
জানা যায়, নিহত আব্দুল্লাহ জন্মের পর থেকে মহেশপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তের ভৈরবা বাজারপাড়ার আব্দুর রশিদের স্ত্রী জোসেদার কাছে বড় হয়ে আসছিল।
ছোট্ট আব্দুল্লাহ সবার কাছে টোকাই নামেই পরিচিত ছিল। ভদ্র সমাজের মানুষরা যেন ঘৃণার চোখে দেখত আব্দুল্লাহকে। তার পরও আব্দুল্লাহর বিচরণ ছিল মহেশপুরের ভৈরবা বাজারের পাশে ঝুপড়ি একটি ঘরে।
সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ার পর আব্দুল্লাহকে ভর্তি করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় সে। এর পর আব্দুল্লাহকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার পথে ফেরিঘাটে আব্দুল্লাহ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। বিষয়টি জানায় আব্দুল্লাহর সঙ্গে থাকা সংবাদকর্মী রিজভি ইয়ামিন।
উল্লেখ্য, রোববার সকাল ৭টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর অংশের মাঝকান্দি নামক স্থানে মাইক্রোবাসের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন- মাইক্রোচালক বিল্লাল হোসেন (৩০), মরিয়ম (২৫), তার শিশু ছেলে ইয়াছিন (৮ মাস), মা চায়না খাতুন (৬০), দাদি ফাতেমা বেগম (৬৫), ফুফু আমেনা খাতুন (৩৫) ও আমেনার শিশুসন্তান (৭), সামেদুলের ছেলে নজরুল (৫০) কেরামত আলীর ছেলে ঝিনাইদহ জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্বাস আলী (৫৫), আব্দুল্লাহ (৫) নিহত হয়।
ভৈরবা বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, একসঙ্গে এত মানুষ মারা যেতে পারে প্রথমে আমরা বিশ্বাস করছিলাম না। পরে টেলিভিশনে সংবাদ দেখে বিশ্বাস হয়। তাদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর এলাকা যেন মৃত্যুপুরী মনে হচ্ছে। সবার মধ্যে শোক ছড়িয়ে পড়েছে।
সুত্রঃ যুগান্তর