মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। এতে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে এসব পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ, কিন্তু তাদের আয় বাড়েনি।
দেশের গ্রাম ও শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের ওপর করা এই জরিপে যেসব পরিবার অংশ নিয়েছে তাদের ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে অর্থনৈতিক চাপে তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
বুধবার (২৯ মার্চ) ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। দেশের ৮ বিভাগের এক হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর করা এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সানেম।
জরিপটি চলতি (মার্চ) মাসে করা হয়েছে। তবে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসের তথ্য নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেড়েছে না কমেছে, তা তুলে ধরার জন্য এই জরিপ করা হয়নি। জরিপ করা হয়েছে মূল্যস্ফীতির চাপে দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চাপের বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের সামনে নিয়ে আসার জন্য।
সানেম বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খাবারের খরচ মেটাতে মানুষ এখন ব্যাপক কাটছাঁট করে চলছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। যেমন ছয় মাস আগেও যেসব পরিবার মাসে চারবার মুরগি খেত, এখন তারা দুবার মুরগি খায়। মাছ খাওয়া কমিয়েছে ৮৮ শতাংশ পরিবার। এছাড়া ৭৭ শতাংশ পরিবার ডিম ও ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল খাওয়া কমিয়েছে।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং সেবায়ও নিম্ন আয়ের মানুষ ব্যাপকভাবে খরচ কমিয়েছে। বিশেষ করে পোশাক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জরিপের তথ্য বলছে, শহরের নিম্ন আয়ের পরিবার খাদ্য কিনতে বেশি কাটছাঁট করছে। গ্রামের পরিবারগুলো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে খরচ কমিয়েছে বেশি।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিম্ন আয়ের মানুষ কেমন আছে, তার জন্য জরিপ না করেও বলে দেওয়া সম্ভব, তারা কেমন আছে। এজন্য এই জরিপে যা উঠে এসেছে, তা হয়তো অনেকের জানা।
সানেমের জরিপের তথ্য বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় বাড়তে থাকায় গত ছয় মাসে যে ৭৪ শতাংশ পরিবার ধার করে চলেছে, তাদের ধার করা বন্ধ হয়েছে বা বন্ধ হবে, এমন পরিস্থিতি এখনো আসেনি। বরং পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে ৮৫ শতাংশ পরিবার মনে করে যে আগামী ছয় মাসে তাদের আরও ধার করতে হবে। জরিপ বলছে, ৩৫ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। সঞ্চয়বিমুখ হয়েছে ৫৫ শতাংশ পরিবার।