কোপেনহেগেন ১২ জুনের ৪৩ মিনিট। সময়টা কখনো ভুলবে না ডেনমার্ক। ভুলবে না ফুটবলবিশ্বও। ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে একটি বল রিসিভ করতে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ডেনমার্কের তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। সবার আগে ছুটে যান অধিনায়ক সিমানো কায়ের। চিকিৎসকরা আসার আগে পর্যন্ত বুকে চাপ দিয়ে কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা অব্যাহত রাখেন তিনি। পরে চিকিৎসকরা এসে দেন সিপিআর। হতবিহ্বল সতীর্থরা চারদিক ঘিরে একটা বলয় গড়ে ভেঙে পড়েন কান্নায়। এরিকসেনের বান্ধবী কাঁদতে থাকেন মাঠে নেমে। ভয়াবহ কিছু ঘটেনি শেষ পর্যন্ত। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এখন স্থিতিশীল আছেন এই ড্যানিশ তারকা।
এরিকসেনের জন্য প্রার্থনা করছিল পুরো ফুটবলবিশ্ব। গ্যারি লিনেকার, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো থেকে শুরু করে তাঁর ইন্টার ও টটেনহাম সতীর্থরা জানিয়েছেন ভালোবাসা। হাসপাতালে যা জানতে পেরে আপ্লুত এরিকসেন। গতকাল ইন্টার মিলানে খেলোয়াড়দের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখেছেন, ‘আমি ভালো আছি।’ ডেনমার্কের কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। এমন ভালোবাসায় এরিকসেনের আপ্লুত হওয়ার খবর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ডেনমার্ক ফুটবল ফেডারেশন, ‘আমরা ওর সঙ্গে কথা বলেছি। সবার জন্য কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে এরিকসেন। পুরো ফুটবলবিশ্বের প্রতি কৃতজ্ঞ আমরাও।’
আসলে ঠিক কী হয়েছিল সে সময়? ডেনমার্কের দলীয় চিকিৎসক মার্টিন বোজেন জানালেন হৃত্স্পন্দন বন্ধ হওয়ার কথা, ‘এটা পরিষ্কার ছিল যে জ্ঞান হারিয়েছিল এরিকসেন। আমি যখন প্রথম দেখি তখন ওর হৃত্স্পন্দন ছিল, কিন্তু পুরো জিনিসটা দ্রুত বদলে যায়। ওকে সিপিআর দিতে হয়।’ এ জন্যই এরিকসেনের জীবন বাঁচাতে অধিনায়ক সিমানো কায়েরের নেওয়া পদক্ষেপগুলো জায়গা করে নেবে ফুটবল ইতিহাসে।
ভয়াবহ এই ঘটনায় ইউরোর এই ম্যাচ স্থগিত করে দিয়েছিল উয়েফা। তবে শেষ পর্যন্ত মাঠে নেমে ফিনল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় ডেনমার্ক। পুরো ম্যাচে লক্ষ্যে একটা শটই নিয়েছিল ফিনল্যান্ড, ৬০ মিনিটে ইলমার পোহজানপালো গোল পান সেই শট থেকে। দেশের হয়ে মর্যাদার টুর্নামেন্টে প্রথম গোলের পরও এরিকসেনের সম্মানে উল্লাস করেননি তিনি। ৭৩ মিনিটে ডেনমার্ক পেনাল্টি পেলেও হোয়ারবিয়ের্গের স্পটকিক ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।
হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করলেও ‘ফেসটাইমে’ (কথা বলার অ্যাপ) সতীর্থদের ম্যাচটা খেলার অনুরোধ করেন এরিকসেন। এর পরও স্থগিত হয়ে যাওয়া ম্যাচটা খেলানোয় ডেনমার্ক ফুটবল কিংবদন্তি পিটার স্মাইকেলের ক্ষোভ, ‘এটা একেবারে জঘন্য ব্যাপার।’ ড্যানিশ কোচ কেসপার হিউলমান্দ অবশ্য গর্বিত, ‘আমাদের খেলোয়াড়রা একে অপরের প্রতি এতটা যত্নশীল যে আমি গর্ব না করে পারছি না।’ তবে এরিকসেনের ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ স্কট মারে, ‘ইতালিতে হৃদরোগ থাকলে ফুটবল খেলা যায় না।’
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ