রবিবার , ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ৪ঠা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ঋণ ৬০ হাজার কোটি টাকা

Paris
আগস্ট ১৮, ২০২৪ ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

বিদ্যুৎ বিভাগের বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং জ্বালানি বিভাগের দুই সংস্থা- বাংলাদেশ তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ঋণ জমেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে গিয়ে পিডিবি এবং গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানি করতে গিয়ে পেট্রোবাংলা ও বিপিসি এই বিপুল অর্থের দেনাদার হয়েছে।

পাওনাদারদের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করতে না পারায় এই ঋণ আরও বাড়ছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং একই সঙ্গে শিল্প-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন, যাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও জ্বালানি বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলমের সঙ্গে কথা বললে তারা প্রায় অভিন্ন কথা বলেন। তারা বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আমরা মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তিনি আমাদের সঠিকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা বলেন, সামনের দিনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সামনে এলে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী সব কিছু এগিয়ে নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, বছরের পর বছর ধরে লোকসানের অজুহাতে ভর্তুকির মধ্যেই আছে পিডিবি। সংস্থাটি বলছে, বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করায় প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা পাওনাদারদের কাছে ঋণ জমেছে পিডিবির। বিশেষ করে অর্থ সংকট এবং ডলার সংকটের কারণে এই ঋণ আরও বাড়ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের বন্ড দেওয়ার পরও প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে। এ ছাড়া পেট্রোবাংলা ও বিপিসির প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ জমেছে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে এখনো বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা গেলেও সামনের দিনগুলোতে পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ ঠিক রাখা কঠিন হবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সম্পর্কে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এখন দেশের জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যয় সংকোচন করে আর্থিক ঘাটতি সমন্বয় করতে হবে। তিনি বলেন, কোনোভাবেই বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। এটি করা হলে জনগণের ওপর অন্যায্য ও বাড়তি চাপ তৈরি করবে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতকে একটি লুণ্ঠনের খাতে পরিণত করেছে বিগত সরকার। লুণ্ঠন বন্ধ করে টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। সে বিকল্প সরকারের কাছে রয়েছে। এ খাতকে মুনাফাভিত্তিক শিল্পে রূপান্তর করতে হবে। তবে এটি করতে সরকারের কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। যে পর্যন্ত ঘাটতি দূর না হচ্ছে, সে পর্যন্ত ভর্তুকি অব্যাহত রাখা জরুরি।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অর্থনৈতিক চাপের বিষয়টি তুলে ধরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে সামগ্রিক ঋণের চিত্র। যার মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত বকেয়া বিলের পরিমাণ। বিশেষ করে পেট্রোবাংলার বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস বিল, বেসরকারি (আইপিপি) ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল, আদানিসহ ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুৎ বিল, পায়রা ও রামপালসহ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রও পিডিবির কাছে পাওনা অর্থের বিষয়ে বিস্তারিত।

উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে ক্রয়চুক্তির আওতায় পাইকরি দরে বিদ্যুৎ কিনে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে পিডিবি। সেই বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে খুচরা মূল্যে বিক্রি করে বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ডিপিডিসি ও ডেসকোসহ ছয়টি বিতরণ সংস্থা। এ প্রক্রিয়ায় পিডিবি যে দামে বিক্রি করে, তাতে ঘাটতি থেকে যায়। আর সেই ঘাটতি সরকার ভর্তুকি দিয়ে সমন্বয় করে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে ভর্তুকি অনিয়মিত হয়ে গেছে। ডলার ও টাকা সংকটের কারণে নিয়মিত অর্থ ছাড়তে পারছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে জ্বালানি বিল পরিশোধ এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হারে ও খোলাবাজারে বিনিময় হার ব্যবহার করে পিডিবির প্রতিবেদনে বকেয়া বিলের হিসাব করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত প্রতি ডলার ১১৭ টাকা দরে প্রতিষ্ঠানটির মোট দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৪৬ বিলিয়ন ডলার এবং খোলাবাজারের দর অনুযায়ী ১২৪ টাকা করে হিসাব করলে তা দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৩৫৪ বিলিয়ন ডলারে।

এদিকে বিপিসির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের নিয়মিত পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধ করে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। এখনো বিভিন্ন তেল সরবরাহকারীরা তেল সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। তবে তাদের পাওনা ঠিকমতো পরিশোধ করতে না পারলে সেটি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করব অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে আলাদা গুরুত্ব বিবেচনায় সমস্য সমাধানের নির্দেশনা দেবেন।

 

 

সর্বশেষ - জাতীয়