গত বছর নেপালের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে নেপাল ও ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশের সরকার, তা নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তায় পড়েছে নেপাল। বিদ্যুতের দাম নিয়ে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দর কষাকষিই এ দুশ্চিন্তার মূল কারণ।
নেপালের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপণন সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষ নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) কর্মকর্তারা নেপালের জাতীয় দৈনিক দ্য কাটমান্ডু পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এনইএ’র এক কর্মকর্তা কাটমান্ডু পোস্টকে বলেন, ‘আমরা যে দাম চেয়েছি, তা আমরা যৌক্তিক মনে করেই চেয়েছি। বাংলাদেশ যে দাম প্রস্তাব করেছে, এখনও আমরা তাতে সায় দিইনি। তারা (বাংলাদেশি কর্মকর্তারা) বলেছে, এ ব্যাপারে তাদের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।’
গত বছর মে মামে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি এবং ভারতের তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপণন সংস্থা এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগমের (এনভিভিএন) সঙ্গে ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি করে বাংলাদেশের সরকার।
সেই চুক্তির শর্ত অনুসারে, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠাবে নেপাল। ভারত-নেপাল সীমান্তের ধালকেবার-মুজাফফরপুর থেকে লাইন বা তারের মাধ্যমে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাবে বিদ্যুৎ। চুক্তিতে প্রতি ইউনিটের দাম ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৩০ নেপালি রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ দশমিক ৬৮ টাকা।
আগামী জুন মাস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হওয়ার কথা। এর মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ নেপালি রুপি ধার্য করার প্রস্তাব বলে দ্য কাটমান্ডু পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন এনইএ’র একজন কর্মকর্তা।
‘চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, বিদ্যুৎ পাঠানো সংক্রান্ত সার্ভিস চার্জ, হুইল চার্জ আমাদের বহন করতে হবে না। এনভিভিএন এই খরচ বহন করবে। বিদ্যুতের দাম যদি ইউনিটপ্রতি ৯ দশমিক ৩০ নেপালি রুপি ধরা হয়, তাহলে সেখান থেকে নেপাল পাবে ৫ দশমিক ২৫ রুপি।’
‘বাংলাদেশ যে দাম প্রস্তাব করেছে, তা কার্যকর হলে আমাদের ভাগে প্রায় কিছুই থাকে না,’ কাটামান্ডু পোস্টকে বলেন ওই কর্মকর্তা।
এনইএ’র নির্বাহী পরিচালক কুল মান ঘিসিং নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত সপ্তাহে ঢাকা এসেছিল। সে সময় বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বিদ্যুতের দাম নিয়ে দর কষাকষি হয় বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে চুড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ নিয়ে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই চুড়ান্ত মত জানাবেন তারা।
এনইএ’র নির্বাহী পরিচালক প্রদীপ কুমার ঠিকে অবশ্য বিদ্যুৎ চুক্তি সম্পর্কে আশাবাদী। কাটমান্ডু পোস্টকে বলেন, ‘তারা (বাংলাদেশ) বিদ্যুৎ ক্রয় করার জন্য প্রস্তুত, আর আমরা বিক্রির জন্য (প্রস্তুত)। আমাদের সাম্প্রতিক বৈঠক ইতিবাচক ছিল এবং আমরা আশাবাদী যে পরবর্তী বৈঠকে আমরা এ ব্যাপারে মীমাংসায় পৌঁছাতে পারব।’
গত বছর মে-জুন মাসে ভারত সফরে গিয়েছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহল। সেখানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি চুক্তি নিয়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছিল এবং ভারতের সরকার এ ইস্যুতে নেপালকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিল বলে জানা গেছে।