নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা, চাঁদাবাজি ও ভূমিদখলের সঙ্গে যুক্ত হলে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করার নিদের্শ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা, সাবেক এমপি ও মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সন্মেলন করে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে মিনু বলেন, বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতার আদেশে এই সংবাদ সম্মেলন। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে অনেক দুস্কৃতিকারী নানান অপকর্ম করছে। এতে দোষ গিয়ে পড়ছে দলের উপর। বিএনপির কোনো নেতাকর্মী সরকারী অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের ভয় দেখানো বা টেন্ডারবাজি, ভাংচুর করার চেষ্টা করলে আপনারা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। আর সাংগঠনিকভাবে আমরা ব্যবস্থা নেবো। অনেক দুস্কৃতিকারী দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এসব অপকর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়টি বিএনপির সকল নেতা কর্মীদের দেখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, কথিত আওয়ামী লীগ সরকারের দালাল, লুটতরাজ, ভুমিদস্যু হিসাবে পরিচিত, নির্যাতনকারী, বালু মহল দখলকারী এবং হত্যা, গুমের সাথে যারা জড়িত তাদের বিএনপির নেতাকর্মী আশ্রয় প্রশ্রয় দিলে তাকেও দল থেকে বহিস্কার করা হবে। শুধু বহিস্ককার নয়, তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া হবে।
রাজশাহীতে অনাকাঙ্খিত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মিনু বলেন, আমি তিনবার রাসিক মেয়র ছিলাম ও একবার রাজশাহীর এমপি। আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে সাথে নিয়ে এই শহরকে একটি শান্তির শহরে রুপ দেয়ার। এরজন্য ২০০৪ সালে ইউনাইটেড ন্যাশান, রাজশাহী ইজ হ্যাপি সিটি ইন দা ওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়। আমার সময় রাজশাহী ছিল শান্তি, সোহার্দ, সবুজ শিক্ষা নগরী। আমি মেয়র থাকাকালে উন্নয়ন হয়েছে, সবাই শান্তিতে বসবাস করছে, নিরাপদে থেকেছে। কিন্তু সেই শান্তির শহর মাফিয়া কায়েম করে অশান্ত করে রাখা হয়োিছল। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর যেসব অফিস ভাংচুর করা হয়েছে, লুটপাট করা করেছে আমি সে সব অফিসের সাথে যোগাযোগ করে তাদের দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেবো। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা জাতির বিবেক, চারটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। আপনরা এখন স্বাধীন, যারা অন্যায় করবে, তাদের বিরুদ্ধে লিখুন। আমি অন্যায় করলে আমার বিরুদ্ধেও লিখুন। তাহলে জনগণ সচেতন হবে। ভয় পাবে অপরাধি, দুস্কৃতিকারীরা।
মিনু দু:খ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় দেড়শ বছরের পুরাতন ব্রিটিশ কাউন্সিল। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, অর্থনীতিবিদ এসএম রয়সহ বিশিষ্ঠ্যজনেরা ব্রিটিশ কাউন্সিলে পড়তো। কিন্তু সেই ব্রিটিশ কাউন্সিলও দখল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতীয় উপমহাদেশে এমন তিনটি ব্রিটিশ কাউন্সিল রয়েছে। একটি রাজশাহী, একটি কলকাতা ও দিল্লিতে। আমরা জীবন দিয়ে হলেও রাজশাহীর ঐতিহ্য ব্রিটিশ কাউন্সিলকে রক্ষা করবো। কাউকে দখল নিতে দেবোনা। রাজশাহীর ব্রিটিশ কাউন্সিল সংস্কার করে জনগণের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হবে। ব্রিটিশ কাউন্সিলর যদি কেউ দখলের চেষ্টা করে তাকে আইনের আওয়াতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, খুনি হাসিনা যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন তখনও রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতারা দলীয় কার্যালয়ে বসে পুলিশকে নিদের্শ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালানোর। যারা শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালিছে তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যালয় দখল নেয়ায় নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির কার্যালয়েও আওয়ামী লীগের লোকজনই ভেঙ্গে দিয়েছে।
তারেক রহমান দেশে ফেরার বিষয়ে মিনু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে দেশের বাইরে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি শিগগিরই তিনি বীরের বেশে দেশে ফিরবেন। নগর ভবনে ভাংচুর লুটপাটের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি বর্তমান মেয়রের ব্যর্থতার জন্য এমন লুটপাট হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বার সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী আবুল কাশেম, কুষ্টিয়া বিশ^বিদ্যালয়ে সাবেক ভাইস চ্যাঞ্জেলর প্রফেসর রফিকুল ইসলাম ও ড্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ডাক্তার ওয়াসিম হোসেন ও রাজশাহী বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জমসেদ আলী ও মহানগর বিএনপি’র সাবেক দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হক।
স/আর
