বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি
শরীরের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সমাজের যারা সুবিধা বঞ্চিত ছিলেন। তারাই এখন সমাজের মুল ¯্রােতধারার সাথে যুক্ত হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন। খুঁজে পেয়েছেন শিক্ষার আলোর ঠিকানা। যারা সমাজের বোঝা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাদের জন্য দিন পাল্টে দিতে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় প্রথমবারের মত স্থাপিত হয়েছে বিশেষ স্কুল। অভিশপ্ত ভেবে যাদেরকে অন্ধকার ঘরে বদ্ধ রাখা হতো। এখন তারাই করছে পড়া-লেখা। নতুন এই বিশেষ স্কুল উপজেলার ১৬৫ জন বাক-শ্রবণ ও অটিস্টিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধীকে দিয়েছে আলোর ঠিকানা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন জানান, অসহায় মানুষদের জন্য কিছু একটা করার ইচ্ছা থেকে ২০১৪ সালে তিনিই প্রথম নিজের উদ্দোগে ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে মাত্র ১৫ জন প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে এ বিশেষ স্কুলের যাত্রা শুরু করেছিলেন।
স্কুলটির নাম করন করা হয় শহীদ মমতাজ উদ্দিন স্মৃতি বাক-শ্রবণ ও অটিষ্টিক-বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। এক বছরের মধ্যেই প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বাগদি পাড়ায় শিক্ষক আব্দুস সাত্তারের একটি ছাত্রাবাস প্রতিমাসে তিন হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে স্কুল পরিচালনা করেন। কিন্তু শিক্ষকদের নিজস্ব অর্থে ভাড়ায় স্কুল চালান যখন দুরহ হয়ে পড়ছিল, সেসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু।
তিনি জাইকা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করে দেন। আর ওই স্কুলের জন্য প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন ও তার ভগ্নিপতি লুৎফর রহমান বিদ্যালয়ের নামে ২৫ শতাংশ জমি দান করেন।
গত বৃহস্পতিবার মাছিমপুর গ্রামে নবনির্মিত ভবনে এই বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে। এদিন নাটোর জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ এ ভবনের উদ্বোধন করেন। ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন, ইউএনও নাসরিন বানু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ, জাইকা প্রতিনিধি জাকিয়া সুলতানা প্রমুখ।
আকরাম হোসেন আরও জানান, বর্তমানে নতুন এ ভবনে চারটি কক্ষ রয়েছে। যার একটিতে অটিস্টিক প্রতিবন্ধী, একটিতে বুদ্ধি ও শারিরীক প্রতিবন্ধী এবং আরেকটিতে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশ চলে। আর একটি অফিস কক্ষ। বিদ্যালয়ে মোট ২২ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা বিনা বেতনে এখানে চাকরি করছেন। উপরন্তু তাদের নিজেদের টাকায় চলে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সব খরচ। বর্তমানে স্কুলটিতে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দুটি গাড়ি রয়েছে। যার একটি নষ্ট। ইউএনও’র সহায়তায় এডিপি’র অর্থায়নে দেওয়া হয়েছে হুইল চেয়ার। বিশেষ এই স্কুলে প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েকে পড়া লেখা করানোর সুযোগ পেয়ে অভিভাবকরাও বেশ খুশি।
এবিষয়ে ইউএনও নাসরিন বানু বলেন, সমাজের এসব অবহেলিত-অসহায় মানুষদের জন্য কিছু একটা করার মানসিকতা থেকেই তিনি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। তাছাড়াও বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের এগিয়ে নিতে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
স/আ