শনিবার , ১ এপ্রিল ২০১৭ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বাগমারায় জেএমবি উত্থানের ১৩ বছর পূর্তি আজ

Paris
এপ্রিল ১, ২০১৭ ৯:১২ পূর্বাহ্ণ

শামীম রেজা, বাগমারা:
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) উত্থানের ১৩ বছর পূর্তি আজ শনিবার। ২০০৪ সালের এই দিনে সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের আগমনের মধ্য দিয়ে বাগমারা, নওগাঁর রানীনগর আত্রাই এবং নাটোরের নলডাঙ্গা থেকে লোক ধরে এনে বর্বর নির্যাতন চালানো হতো। নির্যাতনে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু্ও হয়। এসব হত্যার নেতৃত্বে ছিল জেএমবির শীর্ষ ক্যাডার শায়খ আব্দুর রহমান। তিনিও কয়েক বার বাগামারা এসে ঘুরে যান ওই সময়।

 

  • সর্বহারা দমনের নামে বাংলা ভাইয়ের ক্যাডাররা হত্যাকান্ড, চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করতে থাকে। ওই সময় সর্বহারার হাতে নির্মম ভাবে খুন হওয়া পরিবারের লোকজন বাংলা ভাই ওরফে সিদ্দিকুর রহমানকে সহযোগিতা করে।

 

অপরদিকে সর্বহারা খুনিরা বাংলা ভাইয়ের দলে যোগদান করে এলাকা জুড়ে নিজেদের রাজত্ব কায়েম করতে থাকে। পরে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ বাগমারা ও আত্রাই র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপন করলে বাংলা ভাই আত্মগোপনে চলে যায়।

 

সেই সময় র‌্যাব বাগমারা, আত্রাই, নওগাঁ অঞ্চলের সর্বহারা ও বাংলা ভাইয়ের খুনিদের চিহ্নিত করে। র‌্যাব ও পুলিশের ক্রসফায়ারে প্রায় ৪০ জনের মতো সর্বহারা খুনিরা মারা যায়। তার পর থেকে বাগমারায় আর সর্বহারা ও বাংলা ভাইয়ের খুনিরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

 

বর্তমান সময় পর্যন্ত র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন প্রকার আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যের তৎপরতা অব্যাহত থাকায় সর্বহারা ও বাংলা ভাইয়ের ক্যাডাররা আত্মগোপনে আছে। অনেক সর্বহারা ও বাংলা ভাইয়ের সদস্যরা জেল খেটে জামিনে বের হয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন, কেউবা দেশের কোন প্রান্তে আত্মগোপনে আছেন। কেউ কেউ আবার বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু সর্বহারা আর বাংলা ভাইয়ের সেই তান্ডবের কথা আজো ভুলতে পারেনি বাগমারাবাসী।

 

  • এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলা ভাইয়ের আগমনের আগ মহুর্তে পর্যন্ত বাগমারাকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করে পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি (এমএল লাল পতাকা)। লাল পতাকার নামে সর্বহারা খুনিরা আত্রাই, নওগাঁ, নলডাঙ্গাসহ বাগমারার ৫ টি ইউনিয়ন গোয়ালকান্দি, হামিরকুৎসা, মাড়িয়া, ঝিকড়া, যোগীপাড়া হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাদের কর্মকান্ডে এলাকার জনগণ নানা প্রকার সমস্যার মধ্যে দিন যাপন করতে থাকে।

বাগমারায় সেই সময় সর্বহারার হাতে নির্মমভাবে খুন হয় তাহেরপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলো খন্দকার, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আঃ ওয়াহেদ মন্ডল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাপা নেতা আবুল হোসেন দুলু, বিএনপি নেতা আব্দুল হামিদ মরু, মনকশা, হামিরকুৎসা ইউনিয়ের সাবেক চেয়ারম্যানের দুই ছেলে মমতাজ খামারু, গোলাম মোস্তাফা খামারু, শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী, গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের  সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সরকার, যোগীপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনসহ আরো অনেক জনকে দিনে দুপুরে গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়। সে সময় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সর্বহারা খুনিদের দমন করতে ব্যর্থ হয়।

 
তারা পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি (এমএল লাল পতাকা) নাম ব্যবহার করে বাগমারাকে মৃতুপূরীতে পরিনত করে। এছাড়াও তাহেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির দুই সদস্যকে হত্যা করে তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই বিভিষীকাময় পরিস্থিতিতেই ২০০৪ সালের ১ লা এপ্রিলে সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের আগমন ঘটে বাগমারায়। সেই সময় তারা হামিরকুৎসা ইউনিয়নের হামিরকুৎসা গ্রামের রমজান কায়ার আম বাগানে ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর তারাও মানুষকে ধরে এনে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যার রাজত্ব চালাতে থাকে। ফলে তাদের কারণেও গোটা বাগমারা প্রতিবেশি উপজেলা আত্রাই, রানীনগর ও নলডাঙ্গায় আতঙ্ক নেমে আসে সাধারণ মানুষের মাঝে।

 

প্রথম দিকে জেএমবি ক্যাডাররা হামিরকুৎসা এলাকার পুরাতন ইউপি ভবন মসজিদ থেকে কার্যক্রম চালালেও পরবর্তীতে রমজান কায়ার বাড়ীতে সেল্টার নেয়। এখান থেকেই বাগমারা-আত্রাই এলাকায় অপারেশন চালায়। রমজান কায়ার সেই বাড়ীটি অল্প দিনেই বাংলা ভাইয়ের টর্চার সেলে রুপ নেয়।

 

  • প্রতি সপ্তাহে গড়ে অন্তত ৫০ জনের একটি করে নতুন দল এসে যোগ দিত ওই ক্যাম্পে। এক সপ্তাহ থাকার পর পরবর্তী সপ্তাহে পুরাতন দল চলে যেতো। এই সেলে যাদের ধরে এনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে আত্রাই এলাকার সর্বহারা ক্যাডার দ্বিপংকর, রানীনগরের খেজুর আলী, বাদশা, শেখ ফরিদ, বাগমারার তাহেরপুরের গোলাম রব্বানী মুকুলসহ অন্তত ২৩ জনকে হত্যা করে। যাদের অনেকের লাশ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এছাড়াও এখানে শতশত নিরীহ মানুষকে ধরে এনে অমানুষিক নির্যাতন চালাতো জেএমবি সদস্যরা।

 

রাতারাতি পালিয়ে যায় জেএমবি ক্যাডাররা:
২০০৪ সালের ২৪ জুন জেএমবি ক্যাডাররা রাতারাতি ক্যাম্প গুটিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ এরপর থেকে প্রকাশ্যে জেএমবির প্রভাব এলাকায় দেখা যায়নি। তবে তাদের সহযোগিরা ঠিকই এলাকা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে এখনো। যাদের কারণেই এলাকার সাধারণ মানুষ এখনো ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। জেএমবির হাতে নির্যাতিত হয়ে কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কেউ এখনো ঠিতমত চলা-ফেরাও করতে পারেন না।

 

এ রকম কয়েকশ অসহায় মানুষ জেএমবির সহযোগিদের ভয়ে এখনো মামলা মোকাদ্দমার কথাও ভাবতে পারেন না। তাঁরা কেবল আল্লাহর কাছেই বিচার দিয়ে রেখেছেন। তাদের দাবি, যারা অন্যায়ভাবে অমানুষিক নির্যাতন করে স্বাভাবিকভাবে চলার গতী থামিয়ে দিয়েছে তার বিচার আল্লাহই করবেন। এখন নতুন করে মামলা মোকদ্দমা করলে হয়তো এভাবেও আর বেঁচে থাকা হবে না। জেএমবির সহযোগিদের হাতে পুরো পরিবারসহ প্রাণটাই হারাতে হবে হয়তো।  
এদিকে বাগমারায় বাংলা ভাইয়ের আগমনের ১৩ বছর পূর্তি ও তাদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে উপজেলার হামিরকুৎসায় আব্দুল বারী ও মহিলা লীগ নেত্রীর সাফিনুন নাহারের নেতৃত্বে শনিবার সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে জানাগেছে।

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর