বাংলাদেশে হামলার পরিকল্পনাকারী এক যুবককে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার আদালত। সোমবার (১১ অক্টোবর) নিউ সাউথ ওয়েলস সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পিটার গার্লিং এ রায় দেন। এ খবর জানিয়েছে অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।
খবরে বলা হয়, ২০১৮ সালের জুনে সিডনির ইংলেবার্ন শহর থেকে নওরোজ রায়েদ আমিনকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। চলতি বছর নিজের দোষ স্বীকার করেছেন তিনি।
২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পথে রওনা দিয়েছিলেন নওরোজ। কিন্তু সিডনি বিমানবন্দরে আটক হন তিনি। এসময় তার লাগেজ তল্লাশি করে বেশ কয়েকটি ইউএসবি পেনড্রাইভ, তিন জোড়া ক্যামোফ্ল্যাজ ট্রাউজার (সাধারণত সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করেন), মার্শাল আর্ট গ্লাভস, অস্ট্রেলীয় ডলার ও বাংলাদেশি টাকা পাওয়া যায়। ছদ্মবেশের উপকরণ, ট্যাকটিক্যাল বুট, বোমা তৈরির বইসহ সিডনি বিমানবন্দরে আটক হন। তিনি ওই সময় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের কট্টর সমর্থক ছিলেন।
খবরে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের মে থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে দুই বাংলাদেশির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথোপকথনের সময় আইএস সমর্থনের কথা জানান নওরোজ। ২০১৫ সালের আগস্টে তিনি বাংলাদেশের এক লোককে বলেছিলেন, ‘রান্না শেখার জন্য দেশে আসতে হবে তাকে।’
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানায়, ইউএসবি পেনড্রাইভগুলো পরীক্ষা করে আইএসের একটি অনলাইন ম্যাগাজিনের ১০টি সংখ্যা, যার একটিতে ছিল সামরিক ঘাঁটিতে হামলা ও গাড়িতে বোমা লাগানোর ছক। ছিল বোমা তৈরির কৌশল বিষয়ক ২৪১ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের অনলাইন সংস্করণ পাওয়া যায়। এছাড়া আত্মঘাতী বোমা হামলা ও দণ্ড কার্যকরের বেশ কিছু ভিডিও ছিল পেনড্রাইভগুলোতে। তবে এ ঘটনার পর নওরোজকে আর উড়োজাহাজে উঠতে দেওয়া হয়নি এবং পরে তার পাসপোর্টও বাতিল করা হয়।
নওরোজ আমিন দাবি করেন, এসব জিনিস বাংলাদেশে তার চাচাতো ভাইকে শেখানোর জন্য চিন্তা করেছিলেন, কিন্তু সে আইএসে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের খবরে বলা হয়, নওরোজ বিদেশে এমন কাউকে খুঁজছিলেন যিনি তাকে বিস্ফোরক ব্যবহার শেখাবেন। কিন্তু নওরোজ জোর দিয়ে বলেছেন, বিস্ফোরকগুলো কেবল বাংলাদেশেই ব্যবহার করা হতো, অস্ট্রেলিয়ায় নয়।
তবে প্রসিকিউটরদের দাবি, নওরোজ আমিন বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া অথবা সিরিয়াতে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নওরোজ। তার দাবি, তিনি কেবল বাংলাদেশেই হামলা করতে চেয়েছিলেন।
বিচারপতি গার্লিং বলেছেন, আমি তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট, অপরাধের সময় তার বয়স অপেক্ষাকৃত কম ছিল এবং সে এখন আইএস মতাদর্শ ত্যাগ করেছে।
এ কারণে নওরোজকে পাঁচ বছর চার মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় আদালত। এর মধ্যে চার বছর কোনো প্যারোল পাবেন না তিনি। অবশ্য এরই মধ্যে বেশ কয়েক বছর কারাভোগ হয়ে গেছে তার। সেই হিসাবে ২০২২ সালের জুন মাসেই প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন এ যুবক।
সূত্রঃ যুগান্তর