বুধবার , ২৯ মে ২০২৪ | ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বগুড়ার শেরপুরে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকে বন্ধকী জমি রেজিস্ট্রি!

Paris
মে ২৯, ২০২৪ ৩:০৬ অপরাহ্ণ

বগুড়া প্রতিনিধি.
দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি ও জালিয়াতি চক্রের অপ্রতিরোধ্য দাপট চলছে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে। দলিল লেখক সমিতির সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে ভুয়া নামজারি, ভুয়া ওয়ারিশান সার্টিফিকেট ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাংকে বন্ধক রাখা জমিও জালিয়াতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। এমনই অসংখ্যা অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার শেরপুরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে।

গত ২০২৩ সালের ৩ জুলাই মূল কাগজপত্র ছাড়াই এমন এক বন্ধকী জমি বিক্রয় দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। ক্রেতার নামে নামজারিও সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিক্রেতার দাবি তিনি জমি বিক্রি করেননি। ক্রেতা ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস তার সাথে জালিয়াতির মাধ্যমে এমন কাণ্ড করেছে। এর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন ওই জমির প্রকৃত মালিক। এর আগে ওই সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও সংশ্লিষ্ট দলিল লেখক সমিতির যোগসাজশে ভুয়া নামজারি, ভুয়া ডিসিআর, ভুয়া খাজনার রসিদ ও ভুয়া ওয়ারিশন সার্টিফিকেট ছাড়াই দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে দলিলের নকল কপি তোলা, দানপত্র, বন্টনপত্র, ঘোষণাপত্র, অংশনামা ও চুক্তি পত্রের মতো দলিল রেজিস্ট্রিতেও সেবাগ্রহিতাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত টাকার কয়েক গুন বেশি নেওয়ার অভিযোগও অপ্রতুল। দলিল লেখক চক্রের এই অবৈধ কর্মকান্ডের অদৃশ্য খুঁটির জোর কোথায় এমনটাই ভাবিয়ে তুলছেন সচেতন মহলদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের দত্তপাড়ায় পুলক চন্দ্র দত্তের ছেলে দিবাকর দত্ত চাউলের ব্যবসায় নাম লেখান। পুঁিজ বাড়াতে তাদের বসবাসরত বাড়িটি পূবালী ব্যাংক শেরপুর শাখায় বন্ধক রেখে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ নেন। গত ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারী এ সংক্রান্ত একটি বন্ধকী দলিল নিবন্ধিত হয়েছে শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে।

নিয়ম অনুযায়ি বন্ধকী দলিল সহ ওই বাড়ির সকল মূল কাগজপত্র ব্যাংকের কাছে আছে। কিন্তু একই বছর ৩ জুলাই প্রতিবেশি আকাশ দত্তের কাছে বাড়িটি বিক্রি করেন পুলক দত্ত। ক্রেতা আকাশ দত্ত নামজারিও সম্পন্ন করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে গত ২২ অক্টোবর নামজারি বাতিল করার জন্য শেরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে পূবালী ব্যাংক পিএলসি স্থানীয় শাখার ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবীর তালুকদার জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে হুমায়ুন কবীর বলেন, নিয়ম অনুযায়ি জমিটির বন্ধকী দলিল নিবন্ধ করা হয়েছে। আমাদের কাছে জমির মূল কাগজ থাকা সত্বেও কিভাবে বিক্রয় নিবন্ধন করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। আমরা জমির নামজারি ও দলিল বাতিলের জন্য এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

তবে জমি বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন পুলক দত্ত। তিনি বলেন, তার ছেলে ২০২২ সালে আকাশ দত্তর কাছ থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। এসময় তিনি নিজের ও ছেলের স্বাক্ষরিত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংকের চেক, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং ছবি জমা দিয়েছেন। এরপর পুলক দত্ত আকাশের কাছে আবারও টাকা ধার চান। টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে আকাশ তাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ডেকে নিয়ে কিছু স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। কয়েকদিন পর তিনি জানতে পারেন আকাশ দত্ত তার কাছ থেকে ৩২ লাখ টাকায় বাড়ি কিনে নিয়েছে। এই জালিয়াতির প্রতিকার ও স্বাক্ষরিত স্ট্যাম্প ও ব্যাংকের চেক ফেরৎ চেয়ে গত ১৭ মে পুলক দত্ত সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করেছেন।

ভূক্তভোগী পুলক দত্ত বলেন, আমার কাছ থেকে বিভিন্ন জায়গায় স্বাক্ষর নেওয়া হলেও বাড়ি বিক্রির কথা বলা হয়নি। কিছু দিন পরে আকাশ আমাকে কিছু টাকা দিয়ে জানায় সে আমার কাছ থেকে বাড়ি কিনে নিয়েছে। সে আমার ছেলের ব্যাংক লোন পরিশোধের কথাও বলেছিলো। কিন্তু এখনও করেনি। এখন ব্যাংক বাড়ি নিলামে বিক্রির কথা বলছে। সাবরেজিস্ট্রার ও আকাশ দত্ত আমার সাথে প্রতারনা করেছে।

এ বিষয়ে ওই জমির ক্রেতা আকাশ দত্ত বলেন, আমি সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেই জমি কিনেছি।
ব্যাংকে বন্ধকী জমির দলিল নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর উপজেলা সাব-রেজিস্টার মিজানুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাই কোন মন্তব্য করতে পারব না।

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসএম রেজাউল করিম বলেন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ অনুযায়ী ব্যাংকে বন্ধকী সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য নয়। নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকের দায়বদ্ধতা এড়াতে ঋণ গ্রহনের সময় ব্যাংকের অনুকুলে যে বন্ধককৃত সম্পত্তির রেজিস্ট্রিকৃত দলিল তা ঋণ পরিশোধের পর বাতিল করা বাধ্যতামূলক। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই জমিটির নামজারি বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান আছে।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যাংকে বন্ধক রাখা সম্পত্তির বিক্রয় দলিল নিবন্ধন করা বেআইনী। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, অতিরিক্ত টাকা দিলে যেমন জাল দলিল রেজিস্ট্রি করা সম্ভব, ঠিক তেমনই দাবিকৃত টাকা না দিলে দলিল রেজিস্ট্রি করা অসম্ভব। এছাড়াও রয়েছে দলিলের নকল কপি তোলা, দানপত্র, বন্টনপত্র, ঘোষণাপত্র, অংশনামা ও চুক্তি পত্রের মতো দলিল রেজিস্ট্রিতেও সেবাগ্রহিতাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত টাকার কয়েক গুন বেশি নেওয়ার অভিযোগ। বাধ্য হয়েই ক্রেতা বিক্রেতারা দাবিকৃত টাকা দিয়েই জমি রেজিস্ট্রেশন করছেন। এভাবে জিম্মি করে ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এভাবেই অনিয়ম দুর্নীতি ও জালিয়াতি চলছে শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। দলিল লেখক সমিতি ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। আবার সাহস করে কেউ মুখ খুললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমশঃ অবৈধ খুঁটির জোর অদৃশ্যই থেকে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সচেতন মহলেরা অভিমত ব্যক্ত করেন।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর