লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনি এক শরণার্থী শিবিরে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর নতুন সহিংসতায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এই সংঘাতে আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন। রক্তপাত ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় সোমবার ফিলিস্তিনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়েছেন।
সোমবার লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত জুলাইয়ের শেষের দিকে লেবাননের আইন আল-হিলওয়েহ শিবিরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মূলধারার আন্দোলন ফাতাহ এবং ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের মাঝে সংঘাত শুরু হয়। প্রথম দফার ওই সংঘাতে এক ডজনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
শিবিরের দুটি ফিলিস্তিনি সূত্র বলছে, মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির পর গত সপ্তাহের শেষের দিকে শরণার্থী শিবিরে আবারও সংঘাত শুরু হয়। এরপর থেকে সোমবার পর্যন্ত শরণার্থী শিবিরে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন ফাতাহর সদস্য এবং অপর দুজন ইসলামপন্থী যোদ্ধা।
লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র এবং দুটি ফিলিস্তিনি সূত্র বলেছে, সংঘর্ষে নিহত বাকি দুজন বেসামরিক নাগরিক। শনিবার সংঘর্ষের সময় শিবিরের কাছের এক এলাকায় একজন নিহত হয়েছেন বলে লেবাননের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে।
দেশটির সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোববার শরণার্থী শিবিরের উপকণ্ঠে তাদের দুটি অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। এ সময় লেবাননের পাঁচ সৈন্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর তথ্য অনুযায়ী, লেবাননে ফিলিস্তিনিদের জন্য যে ১২টি শরণার্থী শিবির রয়েছে তার মধ্যে আইন আল-হিলওয়েহ শিবির সবচেয়ে বড়। কেবল এই শরণার্থী শিবিরেই প্রায় ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। এছাড়া পুরো লেবাননে আড়াই লাখের বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থীর বসবাস রয়েছে।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা লাভের পর অর্থাৎ প্রায় সাত দশক আগে লেবাননে এসব শিবির স্থাপন করা হয়।
লেবাননে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাত পার্শ্ববর্তী শহর সিডনেও ছড়িয়ে পড়তে পারে শঙ্কা করছেন লেবাননের কর্মকর্তারা।
বাসিন্দারা লেবাননের উত্তরাঞ্চলের নাহের আল-বারেদের ফিলিস্তিনি শিবিরে একই ধরনের পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। ২০০৭ সালে লেবাননের সেনাবাহিনী ওই অঞ্চলে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে তাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৫ সপ্তাহ ধরে অভিযান পরিচালনা করে।
সোমবার ফাতাহর জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা লেবাননে পৌঁছেছেন। তিনি লেবাননের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রধানের সাথে এই বিষয়ে জরুরি বৈঠক করবেন।
ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, শিবিরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো তাদের আটটি স্কুল দখল করেছে। স্কুলের শিক্ষাবর্ষ শুরুর সাথে সাথে তারা শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থা।