শুক্রবার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাতে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত ওই তরুণের নাম সাগর (২২)। তিনি জেলার মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের চরবামুন্দি গ্রামের কাশেম মোল্যার ছেলে। সাগর কৃষিকাজ করতেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, স্থানীয় ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউপি সদস্যের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১৩ বছরের মেয়ের সঙ্গে প্রায় একবছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সাগরের। মাঝেমধ্যে তারা গোপনে দেখা করতেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে তারা দুজন একান্তে দেখা করার সময় স্থানীয়রা তাদের ধরে ফেলে। খবর পেয়ে উভয় পরিবারের অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্যরা সেখানে হাজির হন।
এরপর বিচার-সালিশ শেষে গভীর রাতে সাগরের সঙ্গে ওই নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হয় এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে রাত ৩টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা রওশন মিয়া বলেন, রাতে সাগর ও মেয়েটি ধরা পড়ার পরে চেয়ারম্যান ও অভিভাবকেরা মিলে তাদের বিয়ে দেয়। তখন সাগর বলেন, ‘তোমরা জোর করে আমার বিয়ে দিতেছো, সকালে কিন্তু আর আমারে পাবা নানে। ’ তখন সাগরের বাবা কাশেম বলেন, ‘আগে বিয়ে তো হোক, তারপরে দেখা যাবেনে। ’
সাগরের বাবা কাশেম মোল্লা বলেন, আমি রাতে ঘুমানোর আগে আমাদের ইউপি চেয়ারম্যানের ফোন পাই। শুনলাম আমার ছেলে এক মেয়ের সঙ্গে ধরা পড়েছে, তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আমার ছেলের হাত-পা বাঁধা। আমি তখন চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাদশা খানকে বলি, আপনারা দশজনে যেটা ভালো মনে করেন সেটাই করেন। আমার কোনো আপত্তি নাই।
এব্যাপারে জানতে মেয়েটির বাবা মুন্নাফ শেখ ও তার স্ত্রী আর্জিনা বেগমের বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
তবে সাগরের মৃত্যুর পর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নানাভাবে চেষ্টা চালানো হয়। আর সাগরের সঙ্গে নাবালিকার বাল্যবিয়ের কথাও বেমালুম চেপে যায় সবাই।
এ ব্যাপারে মেগচামী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবির উদ্দিন শেখ বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে সাগর আত্মহত্যা করেছে বলে জেনেছি। তবে নিহত সাগরের সঙ্গে কারো প্রেম-বিয়ের বিষয়ে কিছুই জানি না। আর আমি কোনো সালিশ-দরবারও করিনি।
এ ব্যাপারে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। যতটুকু জানতে পেরেছি সাগর নামের ওই ছেলেটির সঙ্গে ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য একজন ভাইস চেয়ারম্যানের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর জের ধরে ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি। তবে কোনো অভিযোগ পাইনি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তপূর্বক সত্যতা প্রমাণিত হলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।