শনিবার , ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

পুলিশি চাপের অভিযোগ আরজি কর হাসপাতালের নিহত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের

Paris
সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪ ৮:৪৫ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিচার চেয়ে যখন উত্তাল দেশ ঠিক তখনই নিহত চিকিৎসকের অভিভাবকের তোলা একটি অভিযোগ এবং তাকে ‘খণ্ডাতে’ তৃণমূলের পাল্টা ভিডিও প্রকাশকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ শুরু হয়েছে।

পুলিশ টাকা দিতে চেয়েছিল হয়েছিল বলে বুধবার প্রকাশ্যে অভিযোগ জানিয়েছিলেন নিহত চিকিৎসকের অভিভাবক।

তারপর বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি পাল্টা ভিডিও সামনে এনে দাবি করা হয়, তাদের (নিহত চিকিৎসকের অভিভাবকের) সাম্প্রতিক বয়ানের পর পুলিশ এর বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন উঠছে তা ‘ভিত্তিহীন’।

কারণ তৃণমূলের কাছে থাকা একটি ভিডিওতে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা নিজেরাই জানিয়েছেন ‘পুলিশের তরফে কোনও টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়নি’ এবং তাদের কথাকে কেন্দ্র করে ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে।

পাশাপাশি তৃণমূলের দাবি করে, বিরোধী দলগুলো আরজি কর হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে ‘রাজনীতি’ করতে চাইছে।

বৃহস্পতিবার দিনভর এই অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগকে ঘিরে চাপানউতোর চলেছে।

ধোঁয়াশা কাটাতে বৃহস্পতিবার রাতেই আবারও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন নিহত চিকিৎসকের অভিভাবক।

তাদের প্রথম অভিযোগে অনড় থাকার পাশাপাশি আবারও বিস্ফোরক মন্তব্য করেন পুলিশের বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যমকে তারা জানিয়েছেন তৃণমূলের কাছে যে ভিডিওর বয়ান পুলিশেরই ‘চাপের’ মুখে পড়ে দেওয়া।

নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “আমাদের উপর চাপ দিয়ে ওই ভিডিও তোলা হয়েছিল। বোঝানো হয়েছিল পুলিশকে রাগালে বিচার পেতে কষ্ট হবে। তাই চাপে পড়ে ওই কথা বলেছিলাম।”

সতীর্থের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের গলাতেও অভিযোগের সুর। তাদেরই একজন বলেন, “আসলে প্রশাসন খুব ভয় পেয়েছে। তাই মরিয়া হয়ে একটা পাল্টা ন্যারেটিভ তৈরি করতে চাইছে। কালকের তৃণমূলের দেওয়া ভিডিও তারই প্রমাণ।”

“ওরা ভুলে গিয়েছে পুলিশের তরফে টাকা দেওয়ার যে অভিযোগ বাবা-মা তুলেছেন সেটা প্রকাশ্যে তুলেছেন। কোনও ভাইরাল ভিডিওতে নয়, যে দ্বিতীয় ভিডিও প্রকাশ করে প্রথমটিকে ফেক বলা যাবে।”

সম্প্রতি একাধিক ক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ খণ্ডাতে গোপন ভিডিও প্রকাশ্যে আনতে দেখা গিয়েছিল দলের পক্ষ থেকে যাকে ঘিরে কটাক্ষও কম হয়নি।

বিরোধীদের বক্তব্য ঘটনাটিকে প্রথম থেকেই ‘ধামাচাপা’ দিতে চাইছে রাজ্য সরকার।

বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি তৃণমূল চাইছে না সত্যি ঘটনা সামনে আসুক। বিষয়টিকে ধামা চাপা দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের প্রথম থেকেই ছিল।”

প্রসঙ্গত শুক্রবার আরজি কর হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা দায়ের করেছিলেন তা খারিজ হয়ে গিয়েছে।

আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সম্প্রতি তিনি গ্রেফতারও হন।

হাইকোর্টের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের গিয়েছিলেন সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী।

সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ।

এই বেঞ্চের সামনেই আগামী নয়ই সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর হাসপাতালে নিহত চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের শুনানি হওয়ার কথা।

সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে নির্যাতিতার পরিবার, আন্দোলনরত চিকিৎসক এবং পুরো দেশ।

কী নিয়ে এই অভিযোগ

বুধবার রাতে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের ডাকা একটি কর্মসূচিতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে উপস্থিত ছিলেন নিহত তরুণীর বাবা-মা ও পরিজনেরা। ওই কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পুলিশের ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা জানিয়েছিলেন কীভাবে তড়িঘড়ি মেয়ের মরদেহ সৎকার করিয়ে দেওয়া হয়।

তার বাবা বলেছিলেন, “আমরা দেহ রেখে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের উপর এত চাপ তৈরি করা হয়েছিল…আমরা টালা থানায় গিয়েছিলম, এক ঘণ্টা বসেছিলাম। সেখানে ৩০০-৪০০ পুলিশ আমাদের ঘিরে রেখে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যে আমরা বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হই।”

“বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখি সেখানে তিন থেকে চারশো পুলিশ ব্যারিকেড করে রেখেছে। এরম অবস্থায় আমাদের আর কিছু করার ছিল না। মেয়ের দেহ দাহ করতে আমরা বাধ্য হই।”

ঘটনার দিনের কথা বলতে গিয়ে সন্তানহারা ওই পিতা নিজের আক্ষেপের কথাো জানান। তিনি বলেন, “এখানে আমার একটা প্রশ্ন আমার মেয়ের শ্মশানের খরচ ফ্রি করল করা? আমরা জানতে পারিনি কিন্তু আজ পর্যন্ত কারা (বিনামূল্যে সৎকারের ব্যবস্থা) করেছিল? শেষ সময়েও তো তার (মেয়ের) আত্মা খুব কষ্ট পেয়ে গিয়েছে যে বাপি (বাবা) এই খরচাটুকুও করতে পারল না? কী মর্মান্তিক ছিল সেই দিনটা আমার কাছে।”

এরপরই পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন তিনি।

তার অভিযোগ, “যখন আমার মেয়ের দেহ ঘরে শায়িত ছিল তখন ডিসি নর্থ আমাদের ঘরের একটা গলিতে ঢুকে আমাকে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার যা জবাব দেওয়ার তা আমরা সঙ্গে সঙ্গে দিই। ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় প্রেস মিট করে বারবার মিথ্যে কথা বলছেন।”

টাকা দেওয়ার চেষ্টা সংক্রান্ত যে অভিযোগ তাকে নিয়েই আপত্তি তোলে তৃণমূল। মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং শশী পাঁজা একটি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন নিহত চিকিৎসকের অভিভাবকের এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে পুলিশের বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা ‘ভিত্তিহীন’। শুধু তাই নয়, এর স্বপক্ষে তারা একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আনেন।

প্রসঙ্গত, এর আগেও পুলিশের তরফে টাকা দেওয়ার নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন এই অভিভাবক।

গত ১১ই আগস্ট জয়েন্ট প্লাটফর্ম ফর ডক্টরস-এর প্রতিনিধি চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী সহ কয়েকজন চিকিৎসককে প্রথম এ কথা জানিয়েছিলেন তারা। এরপর কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও নির্যাতিতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে একই অভিযোগের কথা বলেন।

কী রয়েছে দ্বিতীয় ভিডিওতে?

তৃণমূলের তরফে বৃহস্পতিবার যে ভিডিওটি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে সেখানে নিহত চিকিৎসকের বাবা ও মা দুজনেই বলেছেন, “এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমরা কাউকে কিছুই বলিনি। হ্যাঁ গল্প বানিয়ে মিথ্যা বলা হচ্ছে। আমরা বিচার চাইছি। যারা আমাদের সহযোগিতা করবে তারা আমরা যাতে ন্যায় বিচার পাই তার ব্যবস্থা করুক। আমাদের নাম মিথ্যা প্রচারের চেষ্টা করছে কেন তাদের নিজেদের প্রচারের জন্য।”

তৃণমূল কী বলছে?

তৃণমূল নেত্রী শশী পাঁজা বলেন, “আমরা দেখলাম একটি ভিডিও (বুধবার রাতের ভিডিও) ভাইরাল হয়েছে। এখন সিবিআই তদন্ত করছে সুতরাং আমরা সকলেই অপেক্ষায় রয়েছি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে রাজনৈতিক দল। তারই মধ্যে ফেক ভিডিও-ও ছাপিয়ে গিয়েছে। অসত্য কথাও বলছেন।”

“যেমন কালকের ভিডিওটিই ধরুন যেখানে বলা হচ্ছে যে বাবা-মা যারা শোকাহত তাদের টাকা পয়সা দেওয়া হয়েছিল…পুলিশ দিয়েছিল ধামা চাপা দিতে ইত্যাদি।”

এরপর একটি দ্বিতীয় ভিডিওর উপস্থিতির বিষয়ে জানান তিনি এবং নিশানায় তোলেন বিরোধী রাজনৈতিক দলকে। তার কথায়, “পাশাপাশি আরো একটি ভিডিও এসেছে যেখানে বাবা-মা ওই ভিডিওকে (বুধবারের ভিডিওকে) অসত্য বললেন এবং বললেন আমাদের মেয়ে আমাদের মধ্যে নেই আমরা তার জন্য বিচার চাই।”

“তারা অত্যন্ত দুঃখে রয়েছেন, শোকাহত। সবাই শোকাহত। জনসাধারণ প্রতিবাদ করছে, প্রত্যেকেই তাদের পরিবারের পাশে আছে। প্রতিবাদী ডাক্তারদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করে আমরা প্রত্যেকেই বিচার চাইছি। সুতরাং এখানে কাদের থাকার কথা ছিল না যারা রাজনীতি করেন। এই রাজনীতি তো হওয়ার কথা ছিল না।”

বিরোধীদের কটাক্ষ করে মিজ পাঁজা বলেন, “আমরা বিনম্র ভাবে বলছি বাবা-মায়ের উপরে কোনও রাজনৈতিক দল যেন চাপাচাপি না করে। যারা রাজনৈতিক ফায়দা তোলে সেই দলগুলোকে আমরা বিগত দিনেও দেখেছি মৃতদেহ নিয়ে শকুনের রাজনীতি করে। একটি মৃত্যু হলেই তাকে নিয়ে রাজনীতি করতে শুরু করে দেয়।”

তৃণমূলের অভিযোগের নিশানায় অবশ্য বিরোধীরা ছাড়াও ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সংবাদ মাধ্যমের সামনে মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, হাইকোর্ট এই ঘটনার তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে আরজি কর হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তার তিনজন ঘনিষ্ঠকে আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য গ্রেফতার করা ছাড়া আর কোনও অগ্রগতি প্রকাশ্যে আসেনি।

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “যদি কেউ বুঝতে পারে যে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তাহলে সেটা সবার আগে সিবিআই-কে বলা উচিত। এখন তো আর পুলিশ তদন্ত করছে না। কোনও ভয়ের ব্যাপার নেই। যেটা মঞ্চে বসে বলা যায় সিবিআই-এর সামনে বলা হচ্ছে না কেন?

দ্বিতীয় ভিডিও নিয়ে অভিভাবকের বক্তব্য

তৃণমূলের তরফে সামনে আনা ওই ভিডিওকে ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠতে থাকে। এরপর রাতে চিকিৎসকের বাবা-মা আরও একবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন।

বাবা-মা জানিয়েছেন পুলিশি চাপের মুখে পরেই ভিডিওতে ওই বয়ান দিতে হয়েছিল তাদের। এই ভিডিও দিন কয়েক আগের, যা রেকর্ড করেছিল পুলিশ।

বাবা বলেছেন, “পুলিশ চাপ দিয়েছিল ভিডিওর জন্য। তাদের কাছ থেকে ওই ভিডিও অন্যদের কাছে কীভাবে গেল জানি না।”

শুধু অভিভাবকই নন, ওই চিকিৎসকের এক পরিজনও একই অভিযোগ জানিয়েছেন।

বার্তাসংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই পরিজন বলেছেন, “একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। আমরাও দেখেছি সেটা। ১১ই অগস্টের রাতে পরিবারকে জোর করে সেই ভিডিও শুট করানো হয়েছিল। তখনও এর তদন্ত করছিল কলকাতা পুলিশ। তারাই জোর করেছিল। টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তবে কত টাকা দেওয়া হচ্ছিল জানি না”

“সেই ভিডিওই এখন ইচ্ছে করে ভাইরাল করানো হচ্ছে।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক