সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
রাজধানীর ভাটারা এলাকার একটি বাসায় নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকা কল্পনাকে (১৩) দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ। রবিবার (২০ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে ওই গৃহপরিচারিকার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন তিনি।
এ সময় অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিশোরী গৃহপরিচারিকাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, একজন সুস্থ মানুষ এভাবে নির্যাতন করতে পারে না। আমাদের দেশে প্রায় ৫ লাখের মতো শিশু রয়েছে, যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বা পরিবারে শ্রমিকের কাজ করছে। আমরা শুনে আশ্চর্য হয়েছি, গত সাড়ে চার বছর ধরে এই শিশুটি নির্যাতিত হয়েছে। এটা আমাদের দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। অবশ্যই এই শিশুশ্রম বন্ধ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে আমরা একটা আইন প্রণয়নের খসড়া প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্যাতিত শিশুটির বয়স মাত্র ১৩ বছর। যদিও চৌদ্দ বছর বয়সের আগে কোনও শিশুকে শ্রমিকের পেশায় নিয়োজিত করার আইন আমাদের দেশে নেই। আমাদের দেশে শুধু দারিদ্রতার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যারা এ ধরনের নিষ্ঠুর শিশু নির্যাতন করে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। আমি ভাটারা থানা ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ইতোমধ্যেই শিশুর নির্যাতনের আইনে ওই গৃহকর্তীকে আটক করেছেন। আমরা নির্যাতিত শিশুটির চিকিৎসার সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। আমাদের মানবাধিকার কমিশন থেকেও এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’
নির্যাতিত শিশুর চিকিৎসার বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার প্রয়োজন আমাদের হাসপাতালের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থাই ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই শিশুটিকে বার্ন ইউনিটের অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। আরও কয়েক ঘণ্টা পরে তাকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। আমি নিজেও শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছি।’
ভাটারার বসুন্ধরার আবাসিক এলাকা থেকে এক সংবাদকর্মীর সহযোগিতায় শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
পরে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ওই কিশোরী বলে, ‘আমাকে ঠিকমতো খাবার দেয় না। সারা দিনে মাত্র একবেলা খাবার দেয়। সব সময় মারধর করে। বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেয় না।’
তার অভিযোগ, তুচ্ছ কারণে তাকে নির্যাতন করেন গৃহকর্তী জিনাত জাহান। এই তরুণীর বাবা-মা থাকেন রাজধানীর জিগাতলায়। সে থাকতো বসুন্ধরায়।’
ভাটারা থানার পুলিশ বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই এই কিশোরীকে নির্যাতন করছিলেন জিনাত। অবশেষে শনিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন