নিয়ামতপুর প্রতিনিধি:
ধানের জেলা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে উত্তরের জেলা নওগাঁর। ধানই এই জেলার প্রধান ফসল। ধানকে কেন্দ্র এখানে উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাই ধান কাটা শেষ হওয়ার পর জেলার নিয়ামতপুর উপজেলায় শুরু হয়েছে হালখাতা উৎসব। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাটবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় প্রতিদিনই চলছে হালখাতার আয়োজন।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মুদিখানার দোকান, ওষুধের দোকান, সোনার দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান, কীটনাশকের দোকান, লেপ-তোশক তৈরির দোকান ইত্যাদি। হাটের দিনে একসঙ্গে সবাই হালখাতার আয়োজন করেছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার উপজেলার ভাবিচা বাজারে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, দোকানদার কয়েকটি মোটা খাতা নিয়ে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পরপর লোকজন আসছে। খাতায় হিসাবটা দেখে নিচ্ছেন। বাকি পরিশোধ করে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে চলে যাচ্ছে।
তবে বাকিতে পণ্য কেনা পাঁচজন বলেন, একসঙ্গে অনেক হালখাতা থাকলে পাওনা পুরোটা শোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ভাবিচা গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল সরকার বলেন, এখন ধানের দাম কম। আবার সব হালখাতার চিঠি চলে এসেছে। ধানও বিক্রি করা যাচ্ছে না। বাকিগুলো পরিশোধ করতে হবে। সমস্যায় পড়ে গেছি।
নিয়ামতপুর বাজারের ব্যবসায়ী মোজহারুল ইসলাম বলেন, বাকি দিয়েই ব্যবসা করতে হয়। কিন্তু বছর শেষে হালখাতায় অনেকে ঠিকমতো টাকা দেয় না। ফলে নানা রকম সমস্যা হয় বলে তিনি জানান। তারপরও বছরের একটি দিনে সব গ্রাহককে মিষ্টিমুখ করাতে পারেন বলে ভালো লাগে তাঁর।
ভাবিচা গ্রামের ব্যবসায়ী সুমন কুমার প্রামাণিক বলেন, সনাতন পঞ্জিকায় বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে হালখাতা করার কথা লেখা রয়েছে। একসময় তা-ই হতো। কিন্তু এখন ধান কাটা মাড়াই শেষ করতে জৈষ্ঠ্যমাস চলে আসছে। তাই ব্যবসায়ীরা কাটা শেষ হলে হালখাতার শুরু করছেন।
তিনি বলেন, আমার বেশিরভাগ গ্রাহক কৃষক। তারা সারাবছর বাকিতে জিনিসপত্র নিয়ে কেনেন। ধান কাটা পরপরই ধান বিক্রি করে সেটা পরিশোধ করেন।
শালবাড়ী গ্রামের শিক্ষক দ্বিপক সরকার বলেন, আগে হালখাতার দিনে দোকানঘর বিভিন্নভাবে সাজানো হতো। বাজানো হতো মাইক। প্যান্ডেল খাটিয়ে বিরিয়ানি, পোলাও, মাংস, দই-মিষ্টি দিয়ে খাওয়ানো হতো। এখন বেশিরভাগ ব্যবসায়ী মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিচ্ছে। হালখাতার সেই জৌলুশ না থাকলেও রীতিটা এখনো টিকে আছে বলে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।