শুক্রবার , ১৯ মে ২০২৩ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাগালের বাইরে নগরীর সবজির বাজার

Paris
মে ১৯, ২০২৩ ৬:১৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী নগরীতে কোনো কারণ ছাড়াই হুহু করে বাড়ছে সবজির দাম। ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না কোনো সবজি। মরিচ ইতোমধ্যে ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। মওসুমী সবজির দামও আকাশ ছোঁয়া। ভরা মওসুমে চালের সাথে পেঁয়াজ ও সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো পড়েছেন মহাবিপাকে।

দিনভর কাজ করে যে টাকা আয় হচ্ছে তা দিয়ে চাল ও সবজি কিনতেই চলে যাচ্ছে। অবশিষ্ঠ্য বলতে কিছুই থাকছে না। যদিও নগরীর বাইরে সবজির দাম প্রায় সহনীয় পর্যায়ে। কিন্তু গ্রামের সবজি নগরীর বাজারে এসে সোনার হরিণ হয়ে যাচ্ছে।

আজ শুক্রবার নগরীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রচুর পরিমাণ সব ধরনের সবজি। গ্রামীণ বাজার থেকে প্রতিদিন নগরীতে বিপুল পরিমোন সবজি আমদানি হচ্ছে। ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নগরীর মাস্টার পাড়ায় আমদানি করা সবজি পাইকাড়ী দরে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। তারপরও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বর্তমান সবজির আমদানি কম। যার ফলে সবজির দামও বেশি। দেখা গেছে, এখন পেঁয়াজের ভরা মওসুম। কিন্তু বাজারে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। মচিরের আমদানিও যথেষ্ঠ রয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারে দুইশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। যা গত দুই বছরে মরিচের দাম এতো বাড়েনি।

আলুর দাম বর্তমান রেকর্ড। বর্তমান বাজারে ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। এখন পটলের ভরা মওসুম বলা যায়। কিন্তু সেই পটল এখন বাজারে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। যে পেঁপেঁ মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া কেনেন না, সেই পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। মূলা ৬০ টাকা আর গোল বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রায় সেঞ্চুরি পার করা সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে, কাকরল, বরবটি, কচুরমুখি। এসব সবজি ৯৫ থেকে ১শ’ টাকার নিচে মিলছে না। আর ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সবজির মধ্যে রয়েছে ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা ও চালকুমড়া। বিশেষ করে ৮০ টাকা কেজির কোটায় বিক্রি হওয়া সবজিগুলো হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, উস্তা, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙে। লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হালি, শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

নগরীর মাস্টার পাড়ায় সবজির বাজার করতে যাওয়া অটোরিকশা চালক সাজেদুর রহমান জানান, বাড়িতে ৫ সদস্যের সংসার। ছেলে মেয়ের লেখাপড়া তো আছেই। দিনে এক বেলা অটোরিকশা চালাই। অটোরিকশার জমা দিয়ে যে টাকা থাকে তা দিয়ে চাল ও সবজি কিনতেই শেষ। তেল, লবন, মসলা কিনবো কি দিয়ে? তিনি বলেন, বাড়িতে দুই থেকে তিন কেজি সবজি লাগে, সেখানে এক কেজি কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হেঁতেমখা এলাকার গৃহিনী সানজিদা জানান, ৬০ থেকে ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। বেশ কিছু দিন আগে সবজির বাজার কিছুটা স্বস্তি ছিল। কিন্তু এখান সবজির বাজারে যাওয়া মুশকিল। তেলের দাম বেশি, চালের দাম বেশি। ভরা মওসুমে পেঁয়াজের দাম আকাশ ছোঁয়া। বাজারে ৫শ’ টাকা নিয়ে এলে ব্যাগ নয়, এক টাকা দামের একটি পলিথিনে ভরে বাজার নিয়ে বাসায় যেতে পারি না। এভাবে আর কয়দিন সংসার চালাতে পারবো জানিনা।

বাজার করতে যাওয়া বেসরকারী কোম্পানীতে চাকরি করা ওহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, কোনো কিছুতেই আমাদের কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। নেই বাজার মনিটরিং। ব্যবসায়ীরা যে যার মত দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। অথচ এ বিষয়টি যাদের দেখার কথা, তারা চুপ করে বসে আছে। তিনি বলেন, আমার মত সামান্য বেতনের কর্মচারি চাল, তেল, সবজির দাম এতো বেশি হলে সংসার চালাবো কি করে। এসবের বিচার দিবো কাকে। কে শুনবে আমাদের মত মধ্যবিত্তদের কথা।

সবজি ব্যবসায়ী দুলাল জানান, সকালে তারা পাইকারী দরেই বেশি দমে সবজি কিনছেন। যার কারণে বেশি দামে তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সকালে সবজির আমদানিও অনেক বেশি ছিল। তারপরও কেনো সবজির দাম বেশি সেটি তিনি জানেন না বলেও মন্তব্য করেন।

অপর সবজি ব্যবসায়ী বলেন, গ্রামে বোরো ধানর কাটা মাড়াই চলছে। যার কারণে শ্রমিকদের জন্য গৃহস্থের সবজি বেশি লাগছে। যার কারণে আগে যে পরিমাণ সবজি গ্রাম থেকে আদানি হতো এখন আর সেই পরিমান আমদানি হচ্ছে না। যার কারণে দাম বেড়েছে।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর