সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
একাধিকবার ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন বছরের প্রথমদিন থেকে ২২ শতাংশ বর্ধিত চার্জ কার্যকর করতে যাচ্ছে বেসরকারি আইসিডিগুলো (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো)। এবার বেশ আটঘাট বেঁধেই চার্জ বাড়াতে যাচ্ছেন আইসিডি মালিকরা। এরই মধ্যে চার্জ বাড়ানোর বিষয়টি আইসিডি ব্যবহারকারীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে ব্যবহারকারীরা এ সিদ্ধান্ত মানতে রাজি নন। তারা বলছেন, মন্ত্রণালয় ও আমদানি-রফতানিকারকদের পাশ কাটিয়ে একতরফাভাবে চার্জ বাড়াচ্ছেন আইসিডি মালিকরা। বেসরকারি আইসিডি নীতিমালা অনুযায়ী এটা করার এখতিয়ার তাদের নেই। এতে আমদানি-রফতানি ব্যয় আগের চেয়ে বেড়ে যাবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা। ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।
আইসিডি মালিকরা বলছেন, চার্জ বাড়ানোর দায়িত্বে থাকা ট্যারিফ কমিটির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। তাই চার্জ বাড়াতে এখন আর আইনগত কোনো বাধা নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশে ১৯টি প্রাইভেট আইসিডি রয়েছে, যা বন্দর ইয়ার্ডের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর দিয়ে রফতানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশই হ্যান্ডলিং হয় প্রাইভেট আইসিডির মাধ্যমে। রফতানিকারকরা ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানে পণ্য বন্দরের আশপাশে গড়ে ওঠা আইসিডিগুলোতে এনে কনটেইনারে বোঝাই করেন। সেখান থেকে রফতানি কনটেইনার বন্দরে নিয়ে জাহাজে তোলা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ কটি ধাপে সম্পন্ন হয়, যার জন্য রফতানিকারকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চার্জ নিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট আইসিডি। অপরদিকে আমদানি পণ্যের ২১ শতাংশ বন্দর থেকে আইসিডিতে নিয়ে খালাস করা হয়। এছাড়া আইসিডিগুলো খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ ও পরিবহন করে থাকে। সূত্র জানায়, গত বছরের এপ্রিল ও আগস্টে ২০-২৫ শতাংশ চার্জ বাড়িয়ে তা কার্যকরের চেষ্টা চালান আইসিডি মালিকরা। সর্বশেষ গত অক্টোবরে ১০ শতাংশ চার্জ বাড়ানো হয়। তবে ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার মুখে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রতিবারই চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয়। ফলে তিন দফা চেষ্টার পরও চার্জ বাড়ানো সম্ভব হয়নি।
২০১৬ সালের আইসিডি নীতিমালা অনুযায়ী, আইসিডির মাশুল নির্ধারণের দায়িত্ব ট্যারিফ কমিটির। কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া মাশুল বাড়ানো যাবে না। প্রথমদিকে ট্যারিফ কমিটি ছিল না। এ সুযোগে আইসিডি মালিকরাই মাশুল নির্ধারণ করেন। পরে ট্যারিফ কমিটি গঠিত হলেও এই কমিটির যৌক্তিকতা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তোলে প্রাইভেট আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)।
এদিকে ট্যারিফ কমিটির বাধা দূর করতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন আইসিডি মালিকরা। এ প্রসঙ্গে বিকডা সচিব রুহুল আমিন শিকদার শনিবার বলেন, ‘আমরা উচ্চ আদালতে রিট করেছি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের আইসিডি নীতিমালার আলোকে গঠিত ট্যারিফ কমিটির কার্যকারিতা চার মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আদালত এবং মন্ত্রণালয়ের কাছে ট্যারিফ কমিটির বৈধতা জানতে চেয়েছেন। বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানের চার্জ কীভাবে ট্যারিফ কমিটি নির্ধারণ করতে পারে, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর আদালত এ রুলিং দেন। তাই এখন আর ট্যারিফ কমিটির কার্যকারিতা নেই। চার্জ বাড়াতেও কোনো বাধা নেই।’ রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘অপারেশনাল ব্যয় বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বন্দরের একটি কমিটি ২০১৬ সালে আইসিডির ৪২ শতাংশ চার্জ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। তখন ২০ শতাংশ চার্জ বাড়াতে পেরেছিলাম। বাকি ২২ শতাংশ ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করতে যাচ্ছি। বিষয়টি জানিয়ে ব্যবহারকারীদের চিঠি দিয়েছেন আইসিডি মালিকরা। ’
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ‘আইসিডির পরিচালন ব্যয় কিছু বাড়তে পারে। কিন্তু এক লাফে ২২ শতাংশ চার্জ বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই চার্জ যদি ব্যবহারকারীরা বহন করতে না পারেন তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দেবে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমেই যৌক্তিক হারে চার্জ বাড়াতে হবে। একতরফা চার্জ বৃদ্ধি ব্যবসা-বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলবে। ’
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফেরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) বন্দর ও কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল আলম সুজন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রাইভেট আইসিডি কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ব্যবহারকারীদের চিঠি দিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে ২২ শতাংশ বর্ধিত চার্জ কার্যকরের কথা জানিয়েছে। চার্জ বাড়লে ব্যবসায়ীদের ব্যয় অনেক বাড়বে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বাফার পক্ষ থেকে চার্জ বাড়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নৌ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিজিএমইএ, বিকেএমইসহ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে অচিরেই বৈঠক করা হবে। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কীভাবে চার্জ বাড়ানোর চেষ্টা মোকাবেলা করা যায়।’