দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়ার পর থেকে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়িরা। এতে পর্যাপ্ত নগদ টাকা না পাওয়ায় ব্যবসায়িরা ধান কিনতে পারছেন না। ফলে নওগাঁর হাট-বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধান প্রতিমনে দাম কমেছে ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত। ধানের দাম কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
ধান-চালের বৃহৎ মোকাম উত্তরের জেলা নওগাঁ। ইরি-বোরো মৌসুমের শেষ সময়। প্রান্তিক কৃষকদের ঘরে এখন ধান নেই বললেই চলে। এতে হাট-বাজারগুলোতে ধানের সরবরাহ কমে আসায় চালকলগুলোতে চাহিদা বেড়েছে। ফলে দফায় দফায় বেড়েছে দাম। গত এক মাসের ব্যবধানে সবধরনের ধানের দাম মনে ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে। দুই মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে ধানের দাম মনে কমেছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। দাম কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। অনেকে ধান বিক্রি না করে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যায়।
কৃষকরা বলেন- মৌসুমের শুরুতে এসব ধান ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বোরো মৌসুম শেষ হওয়ায় তাদের ঘরেও ধানের পরিমাণ কমে এসেছে। পর্যায়ক্রমে দাম বেড়ে ১ হাজার ৫৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। আবার মনে ১০০ টাকা দাম কমেছে। জোতদার বা বড় কৃষকদের ঘরে ধান থাকলেও প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের ঘরে ধান নাই। ঘরে খাবারের ধান থেকে বিক্রি করে আমন চাষাবাদে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধান চাষাবাদে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ধানের দাম কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
নওগাঁ সদর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের কৃষক রাশেদুল ইসলাম বলেন- গত হাটে সুফলতা ধান ১ হাজার ৪৪০ টাকা মন দরে বিক্রি করেছিলাম। আর এক সপ্তাহ পর সেই ধান ১ হাজার ৩২০ টাকায় বিক্রি করেছি। আমরা জানতাম হাটে ধানের পরিমাণ কম সরবরাহ হচ্ছে ভালো দাম পাবো। কিন্তু তার উল্টো।
মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন- কাটারিভোগ ধান ৫ মন ধান নিয়ে এসে ১ হাজার ৪২০ টাকা দরে বিক্রি করলাম। যা গতহাটে ছিল ১০০ টাকা বেশি। ধানের দাম কমে যাওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে পড়লাম। ধান উৎপাদন উপকরণের সবকিছুর দাম বেশি। আর বাজারে ধান নিয়ে আসা হলে দাম পাওয়া যায় না। আমরা কৃষকরা সবদিক থেকে বঞ্চিত হয়।
আরেক কৃষক জহুরুল হক বলেন, এখন কৃষকদের ঘরে ধান নাই। খাবার কিছু ধান ঘরে রেখে বাঁকীগুলো বিক্রি করে আমন চাষাবাদ করা হচ্ছে। ভাল দাম পাওয়ার আসায় বাজারে ধান নিয়ে এসে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হলাম। ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কারণে ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ব্যবসায়িরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি কৃষকরা।
মহাদেবপুর উপজেলার স্বরসতিপুর গ্রামের ধানের আড়ৎদার শাহজাহান আলী জামান বলেন- হাট-বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধানের সরবরাহ থাকলে নগদ টাকা না থাকায় ধান কিনতে পারছিনা। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা দিচ্ছে। ধানের চাহিদা থাকলেও বাধ্য হয়ে নগদ টাকায় কম পরিমাণ ধান কিনায় কমেছে দাম। চাইলেও নগদ টাকা না থাকায় বেশি ধান কেনা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে ব্যবসায়িদের চাহিদামতো টাকা সরবরাহ করা হলে আবারও বাড়বে ধানের দাম।