সোমবার , ২৮ অক্টোবর ২০২৪ | ১২ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

নওগাঁয় তিন মাস ধরে বন্ধ ওএমএস

Paris
অক্টোবর ২৮, ২০২৪ ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

 

নওগাঁ প্রতিনিধি:

রহিমা বেগম। নওগাঁর একএনায়েত এলাকার বাসিন্দা। চার সদস্যের পরিবার। রিকশাচালক স্বামীর পক্ষে এখন আর আগের মতো আয় করা সম্ভব হয় না। ফলে এই দুর্মূল্যের বাজারে তার কাছে ভরসার জায়গা ছিল খোলা বাজারে খাদ্যশস্য (ওএমএস) কর্মসূচির চাল ও আটা। বাজারের তুলনায় অর্ধেক দামে এখান থেকে চাল ও আটা সংগ্রহ করা যায় বলে বাচ্চাদের নিয়ে খাওয়ার কষ্টে ভুগতে হতো না। কিন্তু সেসব সচ্ছলতার দিন হারিয়ে গেছে মাস তিনেক আগে। প্রায় তিন মাস ধরে বন্ধ হয়ে আছে নওগাঁর ওএমএস কর্মসূচি। ফলে রহিমা বেগমের মতো অসংখ্য হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্তরা পড়েছেন বিপাকে। দ্রুততম সময়ে এ সমস্যার সমাধান দাবি করেন উপকারভোগীরা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে জানা যায়, সদর উপজেলায় ১৮ জন ওএমএস ডিলার আছেন। জনপ্রতি ১ টন আটা ও ১ টন চাল বরাদ্দ। ১৮ জনের মধ্যে প্রতিদিন শহরের ১১টি পয়েন্টে ১১ জন ডিলার চাল ও আটা বিক্রি করেন, যা থেকে প্রায় ২২শ জন হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্ত সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ কর্মসূচির আওতায় ৩০ টাকা কেজি দরে চাল ও ২৪ টাকায় আটা কিনতে পারেন হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্তরা। বর্তমানে ১৫ জন ডিলারের বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে মাত্র ৩ জন ডিলার ওএমএমসের মাধ্যমে চাল ও আটা বিতরণ করছেন। তাদের মাধ্যমে শহরের মুক্তির মোড়, খলিশাকুড়ি ও সুলতানপুর মহল্লায় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিক্রি কার্যক্রম চলে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনপ্রতি ১ টন চাল ও ১ টন আটা বরাদ্দ ছিল। তবে চলতি মাসের শুরুতে আটার বরাদ্দ ৫০০ কেজি বাড়িয়ে দেড় টন করা হয়েছে। এই তিন ডিলারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯০০ জন হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্তরা সুবিধা পাচ্ছেন। বাকিরা রয়ে গেছেন আড়ালে।

সারা বছরই নওগাঁ সদর উপজেলার ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি হয়। বাজারমূল্যের চেয়ে দাম কিছুটা কম পেয়ে উপকৃত হন হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্তরা। ওএমএস থেকে যে মোটা চাল ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে ওই মানের প্রতি কেজি চাল অন্তত ৫৪-৫৮ টাকা কেজি। আবার ২৪ টাকার আটা বাজারে ন্যূনতম ৪০ টাকা কেজি। দাম কম পাওয়ার আশায় হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্তরা ওএমএস থেকে কিনতে ভিড় করেন।

১৮ জন ডিলারের মাধ্যমে সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন প্রায় ২২ জন হতদরিদ্র ও নিম্নবিত্ত সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে ৫ আগস্ট দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর ১৫ জন ডিলারের ওএমএস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসব ডিলার অধিকাংশ আওয়ামী লীগপন্থি বলে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাদের বরাদ্দ খাদ্য বিভাগ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।

শহরের মুক্তির মোড়ের ওএমএস ডিলার হেলাল খান। সকাল ৯টা থেকে বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলেও ভোর থেকে সিরিয়ালে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করেন হতদরিদ্ররা। শহরের জনকল্যাণ মহল্লার বাসিন্দা জবেদা বেগম। তিনি বলেন, চার সদস্যের পরিবার। বাজার থেকে চাল কেজিতে ২০ টাকা কমে পাওয়া যায় এই আশায় ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। নিয়মিত এখান থেকে চাল ও আটা কেনা হয়। এতে করে সুবিধা হয়েছে।

ডিলাররা বলছেন, তিন মাস আগে তারা বরাদ্দের অনুকূলে ট্রেজারির মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন। এরপর প্রমাণস্বরূপ খাদ্য অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়ে অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর ওই কাগজটি তারা খাদ্য গুদামে দিয়ে মালামাল তুলে বিক্রি করতেন। কিন্তু ৫ আগস্টে দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর তাদের বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি জানতে খাদ্য অফিসে প্রতিনিয়ত ঘুরতে হচ্ছে। কিন্তু কোন সদুত্তর তারা পাচ্ছেন না। এ কারণে তারা মালামাল উত্তোলন করতে পারছেন না।

এক সূত্রে জানা গেছে, এসব ডিলারের বেশিরভাগই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অনেকের নামে মামলা হয়েছে, আবার অনেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হওয়ার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। বর্তমানে সিংহভাগ ডিলারই এলাকাছাড়া।

শহরের একএনায়েত মহল্লার ওএমএস ডিলার আসাদুজ্জামান সোহেল বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় থেকে ওএমএস দিয়ে আসছি। হঠাৎ আমাদের বরাদ্দ বন্ধ রাখা হয়েছে। বরাদ্দ নেওয়ার জন্য খাদ্য অফিসে কয়েকবার সশরীরে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। পরে আমাদের জানানো হবে। তবে কবে জানানো হবে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই।

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ফরহাদ খন্দকার বলে, অধিকাংশ ওএমএস ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় কিছু বাধাও রয়েছে। যাদের নিয়ে সমস্যা বা আপত্তি রয়েছে তাদের বরাদ্দ স্থগিত রাখা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। নতুন ডিলার নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আউয়াল বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। বন্ধ থাকা ওএমএসের কাজ দ্রুত চালু করার চেষ্টা করছি। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যেই জেলাজুড়ে ওএমএসের কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে।

 

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর