আমাদিন নির্ভরতা কমিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদনে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট। তারই অংশ হিসেবে নওগাঁর নিয়ামতপুরে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের নমুনা শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস পালিত হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার পারইল গ্রামের মাঠে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট রাজশাহী অঞ্চল এর আয়োজন করে। অন্যান্য ধানের চেয়ে দুর্যোগ সহনশীল ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ এবং ফলন প্রতি বিঘাতে ৩-৪ মণ বেশি হওয়ায় খুশি কৃষকরা।
নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল গ্রামের মাঠে দুলছে সোনালী ধান। যেখানে বাতাসে দুলছে অধিকাংশ জিরাশাইল ও কাটারিভোগ অন্যান্য জাতের ধান। তবে এ গ্রামের মাঠে ১৯০ বিঘা জমিতে ৪০ জন কৃষক ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের বঙ্গবন্ধু ধান ১০০, ব্রি-১০২, ১০৪ ও ১০৫ চাষাবাদ করেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট রাজশাহী অঞ্চল থেকে পার্টনার প্রকল্পের অর্থায়নে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হয়েছে।
কৃষক ইফরেখারুল ইসলাম বলেন- নতুন জাতের ধান চাষাবাদের প্রতি কৃষকদের অনীহা। কারণ নতুন জাতে কোন ধরণের ফলনের বিপর্যয় হলে ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে পড়তে হবে। নতুন জাতের ধান চাষাবাদের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। পরে কৃষকদের সঙে যোগাযোগ করা হলে অনেকেই এ নতুন জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করে। শুরুতে আমরা কৃষকদের মাঝে সাড়া জাগাতে অল্প পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করেছি। এখন অনেকেই এ জাতের ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এসব জাতের জীবনকাল বীজতলা থেকে শুরু করে কাটামাড়াই পর্যন্ত প্রায় ১৪০ দিন। জীবনকাল কম হওয়ায় কৃষকদের মাঝে চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে।
কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন- আমাদের এলাকায় নতুন জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। ফলন দেখছি ভাল হয়েছে। এছাড়া রোগবালাইয়ের পরিমাণ কম ও কোন ধরণের ঝড় ও বাতাসে হেলে পড়ছে না। কারণ বাতাসে হেলে পড়লে ফলন কম হয়। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে এ ধানের কোন সমস্যা দেখছি না। ফলন ভাল দেখে এসব ধান চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ বীজ সরবরাহ করা গেলে আমাদের মতো অনেক কৃষকরা চাষাবাদ করবে এবং লাভবান হতে পারবে।
রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মাহমুদুল ফারুক বলেন- উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদে বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে জমিতে ধানের চারা রোপন ও পরিচর্চা বিষয়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর কৃষকদের হাড়ভাড়া পরিশ্রমে মিলেছে কাঙ্খিত ফলন। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে নওগাঁ জেলা শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত। স্থানীয় কৃষকরা যেসব জিরাশাইল ধানের আবাদ করছেন তার বিকল্প হিসেবে এ চার জাতের উন্নত ফলনশীল ধান।
তিনি বলেন- অন্যান্য ধানের তুলনায় এ জাতের উচ্চতাও বেশি এবং ঝড় ও বাতাসে হেলে পড়ে না। দুর্যোগ মোকাবেলা ও খরা সহিষ্ণু। আগামীতে এ জাত আরো সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছি। গোখাদ্য হিসেবে এ খড় কৃষকদের জন্য সুবিধা দিবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর বলেন- খাদ্য ঘাটতি মেটানো সহ আমাদিন নির্ভরতা কমাতে কম সময়ে অধিক সফল উৎপাদন করতে উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেখানে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির যোগান দিতে সক্ষম। কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করতে এবং তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট কাজ করছে।
তিনি বলেন- উন্নত এ জাত স্থানীয় জিরাশাইল ধানের চেয়ে বিঘা প্রতি ৩-৪ মণ ফলন বেশি। বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ এবং ব্রি ধান ১০২ উচ্চ ফলনশীল ও জিংক সমৃদ্ধ। এছাড়াও ব্রি ধান ১০৪ সুগন্ধি ও বাসমতি আকারে। যা পোলাও/বিরিয়ানির চাল হিসেবে রপ্তানি করা যাবে এবং স্থানীয় জিরাশাইলের চেয়ে বাজার মূল্যও বেশি পাওয়া যাবে। ব্রি ধান ১০৫ ডায়াবেটিক রাইচ হিসেবে চাষাবাদ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ভাত খাওয়ার সুযোগ তৈরির পাশাপাশি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে।#