দৃষ্টিনন্দন নওগাঁর মহাদেবপুরে ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়ি

কাজী কামাল হোসেন:
গ্রাম বাংলার একসময় ঐতিহ্য ছিল মাটির বাড়ি। গ্রামের মানুষের কাছে মাটির বাড়ির অর্থ গরিবের ‘এসি’। মাটির বাড়ি শীত ও গরমের সময় বেশ আরামদায়ক। এক সময় গ্রামের ধনী এবং বিত্তশালীরা অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দোতলা বাড়ি তৈরি করতেন। যা কিছু কিছু এলাকায় আজও চোখে পড়ে। তবে আধুনিকতার যুগে ইট, বালি ও সিমেন্টের দাপটে এখন অনেক মাটির বাড়ি বিলিনের পথে।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আলিপুর গ্রামে ১শ’ ৮ কক্ষের মাটির বাড়ি আছে। বাড়িটি ২১বিঘা জমির নির্মিত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২শ’ ২৫ফিট। বাড়িতে ছাউনির জন্য টিন লেগেছে ২শ’ বান। মাটির এই বাড়িটি দেখতে অনেকটা প্রাসাদের মতো। বিশাল এই বাড়িটির নির্মাতা দুই সহোদর সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল।

বাড়িটির দেখা মিলবে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১১কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে চেরাগপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামে। এছাড়াও জেলা সদর থেকে মহাদেবপুর আসার পথে আন্তজেলা মহাসড়কের তের মাইল নামক মোড় থেকে উত্তর দিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাকা রাস্তার পার্শ্বে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িটি অবস্থিত। প্রায় ৩০ বছর আগে মাটির এই দোতলা বাড়িটি নির্মিত হয়েছে। মাটি, খড় ও পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। কারণ একসাথে বেশি উঁচু করে মাটির দেয়াল তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার উপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দোতলা বাড়িটির (১৮-২০ ফুট উঁচু) নির্মিত হয়েছে। বাড়িটির সৌন্দর্য বাড়াতে চুন ও আলকাতরার প্রলেপ দেয়া হয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবে মাটির দোতলা বাড়ি নির্মাণ করতে ৪-৫ মাস সময় লাগে। তবে এই বাড়িটি সম্পূর্ন করতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। ২১ বিঘা জমির উপর ২’শ ২৫ফিট দৈর্ঘ্যরে এই বাড়িটি তৈরী করতে বাড়ির পেছনে একটি বিশাল পুকুর খনন করতে হয়েছে। সেসময় একই দোকান থেকে ২’শ বান টিন কিনে বাড়িতে ব্যবহার করেন বাড়িওয়ালারা। আর এজন্য দোকানদার তাদের একটি চায়না পনেক্স বাইসাইকেল উপহার দেন।

পায়ে হেটে একবার বাড়ির চার ধার চক্করদিতে সময় লাগে ৬-৮ মিনিট। ১’শ ৮ কক্ষের এই বিশাল বাড়িতে প্রবেশের দরজা ১১টি। তবে প্রতিটি ঘরে রয়েছে একাধিক দরজা। দোতলায় উঠার শিড়িঁ রয়েছে ১৩টি। তবে যে কোন একটি দরজা দিয়ে যাওয়া যাবে ১’শ ৮ কক্ষেই। বিশাল আকারের এই বাড়িতে ছোট বড় সবাই মিলে ৪০ জন লোক বসবাস করে।

তবে ব্যবহার হয় ৩০টির মতো ঘর। বাড়ির নির্মাতা সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল দুই সহোদর শখের বসে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন বলে জানা গেছে। তবে যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে বাড়িটি হয়ে উঠতে পারে গ্রাম বাংলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

স/অ