দারিদ্র্য বেচে ড. ইউনূস নোবেল আনলেও তা দূর হয়নি: নৌ প্রতিমন্ত্রী 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
আমাদের দেশের দারিদ্র্য বিক্রি করে ড. ইউনূস সুন্দর একটা নোবেল নিয়ে এলেও দারিদ্র্য যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ‘চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে কর্মচারীদের অবদান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ (সিবিএ) শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে এ সভার আয়েজন করে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্দরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ কাজ করেন।

এর মধ্যে পাঁচ হাজার চট্টগ্রাম বন্দরের। বাকিরা বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির পক্ষে কাজ করেন। আমরা তাদের আলাদাভাবে দেখি না। তাদেরও আমাদের পরিবারের মনে করি। কারণ তারা চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করেন। ষোল কোটির বেশি মানুষ দেশে। এর মধ্যে সব তো আওয়ামী লীগ করে না, সব তো নৌকায় ভোট দেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কথাবার্তায় কখনো আপনারা শুনেছেন? তিনি নৌকা মার্কা বা আওয়ামী লীগের লোকজনকে দেখভাল করেন? তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে একটা মানসম্পন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে চান। যাদের মান এখনো নিচে আছে তাদেরও মানসম্পন্ন করতে চান। যারা রাজনীতি করে এখনো দেশপ্রেমিক হতে পারেননি তাদেরও দেশপ্রেমিক বানানোর জন্য তিনি চেষ্টা করছেন। যারা দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড করছে তাদেরও যাতে দেশের পক্ষে প্রেম তৈরি হয় সেই কাজটা তিনি করে যাচ্ছেন। এটাই হচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার রাজনীতি।তিনি বলেন, এই চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা বলি বাংলাদেশের লাইফ লাইন। কোনো সরকার তার লাইফ লাইন বন্ধ করতে পারে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ৯৫ ভাগ আমদানি রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দরের অবস্থা যেন আরও উর্বর হয়, ভালো হয় সেই চেষ্টা করছি। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে একশ বন্দরের তালিকায় ছিল না। কোভিডের আগে আমরা ৫৮তম স্থানে চলে এসেছিলাম। স্মার্ট বন্দরের কারিগর প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রাম বন্দরের এক ইঞ্চি জায়গা খালি রাখছি না। দীর্ঘদিন কাস্টমস ইয়ার্ড পড়ে ছিল। সেখানে গাড়ির মধ্যে গাছ গজাতে দেখেছি। ঘরের মধ্যে গাছ দেখেছি। কেউ দেখেনি। চট্টগ্রাম বন্দরের একটি জায়গা এভাবে পরিত্যক্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক সমাধান করেছেন। এখন সেখানে এক লক্ষাধিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে পারব। আমরা এলসি করি ইক্যুইপমেন্টের চালানে আসে ইট পাথর বালু। বদনাম হয়ে যায়। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন আমদানি রপ্তানিতে স্ক্যানার বসাতে হবে। আমরা স্ক্যানার বসিয়েছি। আরও দুইটি স্ক্যানার বসানোর চেষ্টা করছি। মেইন গেট ছয় লেনের হবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরের পার্টনার হতে চায় অনেক বিদেশি বন্দর, অপারেটর, কোম্পানি। কাকে দেব কাকে দেব না সেই রকম অবস্থা হয়ে গেছে। মাতারবাড়ী টেন্ডার করেছি। আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বড় বড় কোম্পানি আসতে চায়।

বাংলাদেশ ছোট্ট দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ। আমরা দারিদ্র্যে জর্জরিত ছিলাম। আমাদের দেশের দরিদ্রতা বিক্রি করে ড. ইউনূস সুন্দর একটা নোবেল পুরস্কার নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমাদের দরিদ্রতা যায়নি। এ দরিদ্রতা বিক্রি করে আমাদের অতীতের অর্থমন্ত্রীরা বিদেশ থেকে মঞ্জুরি নিয়ে এসেছে, সাহায্য নিয়ে এসেছে কিন্তু আমাদের দরিদ্রতা যায়নি। দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এখন সবাই বাংলাদেশকে সমীহ করেন।

স্বাধীনতার পর আমাদের হজে যাওয়ার পারমিশন আনতে বঙ্গবন্ধুকে যেতে হয়েছে। সেই সৌদি আরব এখন আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়। এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না। তারা দেখছে আমরা মানবিক দেশ। প্রকৃত ইসলামকে লালন করে। শান্তি, কল্যাণ ও মানবতা বাংলাদেশে আছে, অন্য কোথাও নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে এখন একটি বন্দর নেই। আগে একমাত্র বন্দর ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। এখানে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট ছিল। এখন মোংলায় ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট হয়ে গেছে। মার্চের ২৬ তারিখে পায়রা বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল তৈরি হয়েছে। কাজেই চট্টগ্রাম বন্দরকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এখানে যদি সংকট দেখা দেয় তাহলে লাভবান হবে মোংলা ও পায়রা বন্দর। এটা মনে রাখতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দর যে লাইফ লাইন সেটিকে আরও সুদৃঢ় করতে চান। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখেন, ভরসা রাখেন। আপনাদের স্বার্থ, দেশের স্বার্থ ও চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এই চট্টগ্রামে কিছু হবে না। যা কিছু হবে চট্টগ্রাম ও দেশের মঙ্গলের জন্য হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর দেশের হৃদপিণ্ড সচল করেছিলেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বন্দরে রূপান্তর করেছেন। তিনি কোভিড পিরিয়ডে জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয়ের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমাদের সব যন্ত্রপাতি অটোমেটেড। আগে জাহাজ অপেক্ষা করত। এখন বন্দর অপেক্ষা করে জাহাজের জন্য। আমাদের বহরে ১৮টি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। ৯০ ভাগ জাহাজ সরাসরি বন্দরে ঢুকতে পারছে। যেকোনো আন্তর্জাতিক বন্দরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম আমাদের বন্দর। নতুন কেমিক্যাল শেড তৈরি করছি। পিসিটির কাজ শেষ হয়েছে। বে টার্মিনালের একটি টার্মিনাল আমরা তৈরি করবো এবং চালাব। বাকি দুইটি বিদেশি অপারেটর পরিচালনা করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসবে। বন্দর সিসিটি, এনসিটি, পিসিটির মালিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শী। তিনি জানেন কীভাবে বন্দর পরিচালনা করতে হয়, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হয়। আমাদের বন্দরের সব সাফল্যের কৃতিত্ব কর্মকর্তা, শ্রমিক কর্মচারীদের, বন্দর ব্যবহারকারীদের। কৃতিত্ব দিতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নৌ প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের।

বন্দর সিবিএর মোহাম্মদ আজীমের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নায়েবুল ইসলাম ফটিক।

মোহাম্মদ আজীম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড বেসরকারি খাতে দেওয়া হচ্ছে এমন খবর গণমাধ্যমে দেখেছি। আমরা এটি চাই না। বর্তমান সরকার আসার পর আলোচনার মাধ্যমে সিবিএ অনেক দাবি আদায় করেছি। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আমাদের চাওয়া পাওয়ার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন।

মোহাম্মদ নায়েবুল ইসলাম ফটিক বলেন, কোভিডকালে জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সমন্বয় করে চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করেছি আমরা, ৫৪ জন সহকর্মী হারিয়েছি। এ বন্দর ১৬ কোটি মানুষের সম্পদ। মুক্তিযুদ্ধে এ বন্দরের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আছে। বন্দরকে সেবা দিতে গিয়ে অনেক সহকর্মী পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। বন্দর আমাদের মা, বিদেশি অপারেটরকে ইজারা দিতে পারি না।

তিনি পোষ্য কোটা, ঝুঁকি ভাতা ও গৃহনির্মাণ ঋণ চালুর দাবি জানান।

কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ মাওলানা আবু বক্কর।

উপস্থিত ছিলেন বন্দরের বোর্ড সদস্য, বিভাগীয় প্রধান, বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, যুবলীগ নেতা দেবাশীষ পাল দেবু প্রমুখ।