সোমবার , ২৭ মার্চ ২০১৭ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তুরস্কের বিমানবন্দরে ‘ল্যাপটপ নিষেধাজ্ঞার ভোগান্তি’

Paris
মার্চ ২৭, ২০১৭ ১১:৪৯ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

তুরস্কের বিমানবন্দরে নিরাপত্তাজনিত অতিরিক্ত তল্লাশিতে বিরক্ত যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীরা। প্রশ্ন উঠেছে খোদ ওই নিরাপত্তাব্যবস্থার সংকট নিয়েও।  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের খবর থেকে এসব কথা জানা গেছে।

 
দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানায়, ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে ৬টি নিরাপত্তা বলয় পার হতে হচ্ছে লন্ডনগামী যাত্রীদের। বিপরীতে অনেকটা কম তল্লাশিতেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যদের।

 

উল্লেখ্য, তুরস্ক, মিশর, সৌদি আরব, জর্ডান, লেবানন ও তিউনিশিয়া থেকে যুক্তরাজ্য যাওয়া যাত্রীরা সঙ্গে ল্যাপটপড, ট্যাবলেট কিংবা ই-রিডার নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।আল-কায়েদার বিমান ধ্বংস করার পরিকল্পনা রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্রিটেন সরকার।

 

বাকিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি গ্লিস বলেন, ‘যদি সম্ভাব্য হামলার তথ্য থেকে থাকে, তাহলে সিদ্ধান্তটি ঠিক আছে। তবে সেক্ষেত্রে সব বিমানবন্দরেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সবাই চায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা যেন জোরদার হয়। আর তুর্কি বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার হওয়া খুবই স্বাভাবিক কারণ আমরা নিজেরা এর সঙ্গে সম্পর্কিত।’

 

তবে ‘যদি কোনও একটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাতেও ত্রুটি থাকে তাহলে এমন নির্দেশনায় কোনও কাজ হবে না। আর শুধু ল্যাপটপ নিষেধাজ্ঞায় কিছু আসে যায় না। যে কোনও ইলেক্ট্রনিকস বস্তুতেই নিষেধাজ্ঞা দরকার’। তিনি আরও বলেন, ‘আপনি আপনার বাড়ি কখনো খোলা, কখনও বন্ধ রেখে সুরক্ষা দিতে পারবেন না। সবসময়ই বন্ধ রাখতে হবে।’ সন্ত্রাসীরা সবসময়ই দুর্বল স্থান খুঁজে আঘাত করবে; মন্তব্য করেন তিনি।

 

ল্যাপটপ নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইস্তাম্বুল। কারণ এখান থেকে কেবল হেথরোতেই প্রতিদিন ৬টি ফ্লাইট যায়। ম্যানচেস্টারে যায় দুটি। বার্মিংহ্যামে সপ্তাহে ১০টি ফ্লাইট থাকে এবং এডিনবার্গে থাকে পাঁচটি। ইস্তাম্বুল থেকে হেথরোতে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজও চলাচল করে।

 

গত বছর তুর্কি বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ জনেরও বেশি নিহত হন। এরপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর। এখন যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীদেরকে আলাদাভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে।  একই ঘটনা ঘটছে ইসরায়েলি যাত্রীদের ক্ষেত্রেও। তাদেরকে তিনটি অতিরিক্ত চেকপোস্ট পার হতে হয়। স্মার্টফোনের চেয়ে বড় যে কোনও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বিশেষ কেসে প্যাক করা হয় এবং একদম ব্রিটেনে গিয়ে ফেরত দেওয়া হয়।

 

ব্রিটিশ সরকারের ল্যাপটপ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে বিরক্ত অনেকেই। পূর্ব সাসেক্সের লিসলি আবদেলা বলেন, ‘এই তল্লাশি ভ্রমণকে বিরক্তিকর করে তুলেছে। ঘুরে বেড়ানো আর আনন্দদায়ক নেই।’ তবে গ্যারি ম্যাককে নামে আরেক ব্রিটিশ বলেন, তারা ভালো কাজ করছে, আমার কোন অভিযোগ নেই।’ তার স্ত্রী জানায়, এই ছুটির দিনে তারা নির্দেশনাটি জানতে পারে। এই নির্দেশনা অনেকের কাছেই অবাক লাগতে পারে।

 

হেথরোর বিমানে উঠার আগে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে ছিলেন যাত্রীরা। আর অন্যমনস্কভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন যাত্রীরা। তবে ব্রিটেনের যাত্রীদের এতো তল্লাশি করায় অন্যদের ব্যাপারে নজরদারি ও তল্লাশিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্ডিপেনডেন্ট। তারা লিখেছে, একদিকে অনেকেরে প্লেস্টেশন ও কিন্ডেলে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আরেকদিকে সবকিছু নিয়েই শতাধিক যাত্রী অন্য বিমানে উঠছেন।

 

এভিয়েশন সিকিউরিট ইন্টারন্যাশনাল ম্যাগাজিন এর সম্পাদক ফিলিপ বাউমের প্রশ্ন, ‘যদি ল্যাপটপসহ অন্যান্য ডিভাইস বিমানে যেতে পারে তাহলে তাদের সঙ্গে থাকলেই কি সমস্যা।’

 

ইন্ডিপেনডেন্ট এই বিষয়টি তুরস্ক এয়ারলাইন্স ও যুক্তরাজ্যের পরিবহন বিভাগকে জানিয়েছে। কেউ যদি বড় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে নিতে চায়, তবে তাকে আগে অ্যামস্টারডাম কিংবা প্যারিসের মতো কোনও শহরে যেতে হবে যেখান থেকে সরাসরি যুক্তরাজ্যে যাওয়া যায়। ম্যাকে নামে এক যাত্রী জানায়, ‘এরপর অন্য রাস্তা দিয়ে অন্য এয়ারলাইনে যাবো।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক