সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:
ফেসবুকে পরিচয় হওয়ার পর এক কিশোরীর সাথে একসঙ্গে থাকবার জন্য নোয়াখালি থেকে টাঙ্গাইলে এক কিশোরীর ছুটে যাওয়ার খবর নিয়ে বাংলাদেশে তোলপাড় চলছে।
ওই দুই কিশোরী এখন নিজ নিজ পরিবারের জিম্মায় থাকলেও তাদের সমকামি ইঙ্গিত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও তাদের সবিস্তার পরিচয় ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই কিশোরীকে নিয়ে অনেকের নেতিবাচক মন্তব্যের কারণেই এমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সাংবাদিক ও গবেষক আফসান চৌধুরী বলছেন গণমাধ্যম এ সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে দুই কিশোরীর নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা -কোনটিকেই বিবেচনায় নেয়নি, যা তাদের সমাজে অনিরাপদ করে তুলতে পারে।
“যেভাবে নাম পরিচয় প্রকাশ করে সংবাদগুলো প্রকাশ করা হয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। এদেশে ভিন্নমতের বা ভিন্ন চিন্তার মানুষদের খুন করার উদাহরণ আছে। দুই কিশোরীর মধ্যে যে সম্পর্কই থাক যেভাবে খবর এসেছে সেকারণে এদের কোন ক্ষতি হলে তার দায় কে নেবে,” বলছিলেন তিনি।
তবে টাঙ্গাইলের বাসাইলের ফুলকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলছেন, তার এলাকার মেয়েটির নিরাপত্তার দায়িত্ব তিনিই নিয়েছেন। অন্যদিকে নোয়াখালীর মেয়েটির খোঁজখবর নেবে সেখানকার প্রশাসন।
“নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হতে পারে এমন কোন কিছু আমি তাদের মধ্যে দেখিনি। যেভাবে প্রচার করা হয়েছে সেটি ঠিক হয়নি, কারণ বিষয়টি তেমন নয় বলেই মনে হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
গত রোববার সন্ধ্যায় নোয়াখালীর এক কিশোরী টাঙ্গাইলের বাসাইলের এক কিশোরীর কাছে চলে আসার পর কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয় যে ওই দুই কিশোরী সবাইকে জানায় যে তারা এক সাথে থাকতে চান।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা দুই কিশোরীর সাথে দেখা করে কথাও বলেন। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে উদ্ধৃত করে খবর ছড়ায় যে তারা একসাথেই সারাজীবন কাটাতে চায়।
যদিও সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা বলছেন এমন কোন কথা তারা তাদের বলেননি।
ফুলকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলছেন, “আমার কাছে মনে হয়েছে তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু বাকী যা খবর এসেছে সেটি আমার কাছে মনে হয়নি। তারপরেও প্রশাসনের সহায়তায় উভয় পরিবারের লোকজন এনে কথা বলে আমরা নোয়াখালীর মেয়েটিকে তার ভাইয়ের হাতে দিয়েছি”।
এর আগেও তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে ঘর ছেড়ে বের হয়েছিলেন। তারা প্রথমে ঢাকার সাভারে এবং পরে সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে এক পরিচিতজনের বাসায় অবস্থান করে। তবে পরে আবার নিজ নিজ বাড়িও ফিরে যায়।
এরপর রোববার আবার নোয়াখালীর কিশোরী টাঙ্গাইলে আসলে বাসাইলের কিশোরী নিজেই টাঙ্গাইল জেলা সদরে গিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন।
তবে এখন বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলছেন ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যস্থতায় দু পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে দুই কিশোরীকে তাদের পরিবারের হেফাজতে দেয়া হয়েছে এবং এ নিয়ে সমস্যাও মিটে গেছে।
কিন্তু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই কিশোরীর নাম পরিচয় প্রকাশের সুযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা হওয়ায় তাদের দুজনের নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অন্য সবার মতো তারা যথাযথ সুরক্ষা পাবে।
“কেউই বেআইনি কিছু করতে পারবে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন সেটি দেখবে,” বলছিলেন তিনি।
গবেষক আফসান চৌধুরী অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন যে কোনভাবেই তাদের ও তাদের পরিবারের নাম পরিচয় প্রকাশ করা উচিৎ হয়নি।
“এদেশে রাজনীতিক, সম্পাদক আর গণমাধ্যম কর্মীর স্বাধীনতাকেই স্বাধীনতা বলা হয়। সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা গণমাধ্যমের কাছেও বিবেচ্য হয় না। এই দুটি বাচ্চা মেয়েরও যে স্বাধীনতার অধিকার আছে সেটিকে বিবেচনা করা হয়নি। এখন তারা যদি কোন সমস্যায় পড়ে তাহলে দায়টা কার হবে”?
স্থানীয় চেয়ারম্যান শামসুল আলমও এ বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন বিষয়টি জটিল কোন বিষয় ছিলো না কিন্তু কয়েকটি পত্রিকা আর অনলাইন এটিতে সমকামিতার প্রলেপ দিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশে সমকামিতা আইনত নিষিদ্ধ। এছাড়া সমকামি অধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে খুন হওয়ার উদাহরণও বাংলাদেশে আছে।
দুই হাজার ষোল সালে বাংলাদেশের সমকামি অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে নিজ বাড়িয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এবার দুই কিশোরী নিয়ে করা যেসব পত্রিকা বা টিভির খবর ফেসবুকে এসেছে সেখানে অনেকেই আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন, যা ওই দুই কিশোরীর নিরাপত্তার জন্যও উদ্বেগজনক বলেই মনে করেছেন অনেকে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা