মঙ্গলবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর
NBIU Spiring 2025 New Ad

ঝুঁকি-উদ্বেগ কমছে না মিয়ানমার সীমান্তে

Paris
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪ ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

গত দুই সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির চলা সংঘাতে এপারে এসে পড়ছে মর্টারশেল। এমনকি এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। নাফ নদ হয়ে ভেসে আসছে লাশ। সীমান্তে বিজিবির কড়া প্রহরার মধ্যেও চলছে ওপার থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা। সব মিলিয়ে সীমান্তবর্তী দুই জেলায় যে ঝুঁকি ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনো কমেনি।

সর্বশেষ রাখাইনে দুই পক্ষের সংঘাত অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে। গত তিন দিনে সীমান্ত পরিস্থিতি আপাত শান্ত মনে হলেও শান্তি ও নিরাপত্তাঝুঁকি কমেনি সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা এখনো আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ দখল হারিয়ে ফেলা সীমান্ত চৌকি উদ্ধারে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী আরাকান আর্মির ওপর যে কোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে। আর সেই হামলার জেরে সীমান্ত পেরিয়ে আসা গোলা ফের জীবন কেড়ে নিতে পারে- এমন উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন সীমান্তবর্তী বাংলাদেশিরা। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত প্রায় ২৮৩

কিলোমিটার দীর্ঘ। এর অধিকাংশই পড়েছে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায়। স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে সীমান্তসংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে কয়েক ডজন চৌকি ফেলে পালিয়েছে জান্তা সরকারের বাহিনী। পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৩৩০ সদস্য। এখন রাখাইনে সীমান্তের সবকটি চৌকি আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। আর সেসব চৌকি পুনরুদ্ধার করতে নতুন করে হামলার ছক কষছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। যে কোনো মুহূর্তে আবার সীমান্ত পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা সীমান্তরক্ষীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর। অবশ্য সীমান্তে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে। তবু যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলা ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।

ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খায়রুল বশর বলেন, হারিয়ে ফেলা চৌকি উদ্ধারে সে দেশের সেনা যে কোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে।

ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তে লোকজন আতঙ্গে রয়েছে। এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। প্রথমত সীমান্ত ঘেঁষে থাকা শস্যক্ষেতে অবিস্ফোরিত মর্টারশেল পাওয়া যাচ্ছে। আবার মিয়ানমার বিজিপির চৌকিগুলো বিদ্রোহীরা দখল করে নিয়েছে। আর এগুলো তো পুনুরুদ্ধারের চেষ্টা করবেই সে দেশের সেনাবাহিনী। এ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

ঘুমধুমের মতোই আতঙ্কগ্রস্ত উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের লোকজন। এই ইউনিয়নের রহমতের বিল সীমান্ত ঘেঁষেই মিয়ানমারের চৌকিতে সবচেয়ে বড় সংঘাত হয়েছে। এখান দিয়ে ১৩৭ জন বিজিপি সদস্য এবং মিয়ামারের ২৩ জন উগ্রপন্থি আগ্নেয়াস্ত্রসহ অনুপ্রবেশ করে। এখন পর্যন্ত এই সীমান্ত থেকে ২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের মাথায় হেলমেট ও গায়ে খাকি পোশাক ছিল। এ ছাড়া মরদেহের শরীরে বুলেট ও ম্যাগাজিন বাঁধা ছিল।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, আবার যে কোনো মুহূর্তে সংঘাতের শঙ্কায় সীমান্তের খুব কাছাকাছি লোকজনকে না যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে মিয়ানমারে ফের সংঘাত বাধতে পারে এমন আশঙ্কা করে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর (অব) এমদাদ হোসেন বলেন, চৌকি উদ্ধারে অবশ্যই মিয়ানমার সেনাবাহিনী আবারও সীমান্তে হামলা চালাবে। এই ক্ষেত্রে তারা কৌশল পরিবর্তন করে চৌকি লক্ষ্য করে দূর থেকে মর্টারশেল, রকেটলাঞ্চারসহ ভারী বোমা ছুড়তে পারে অথবা বিমান হামলা চালাতে পারে। তবে এর আগে সে দেশের সরকার কিংবা বিদ্রোহীরা সমঝোতার চেষ্টা করতেও পারে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, গতকাল চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফাইল আহমেদ, বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি নূরে আলম মিনা ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিনসহ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলামসহ কক্সবাজার-বান্দরবানের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে মিয়ানমার সীমান্ত ডিঙিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। এই লক্ষ্যে স্থল ও জলসীমায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফের স্থলসীমান্তে বাড়ানো হয়েছে বিজিবির সদস্য। এর পাশাপাশি টেকনাফের দমদমিয়া সীমান্তসংলগ্ন নাফ নদে স্পিডবোট দিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা জালিয়ার দ্বীপ এলাকায় টহল বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে বিজিবি। এ ছাড়া কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহলও জোরদার করা হয়েছে।

টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, নাফ নদের জলসীমা অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে আর কোনো রোহিঙ্গা নাগরিক যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে বিজিবি সৈনিকদের টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি টহল পার্টির সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং অত্র উপজেলার ৫৪ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে বিজিবির অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের মংডু শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট ট্রলার দিয়ে নাফ নদ জলসীমা অতিক্রম করে টেকনাফ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে যাচ্ছে ওপারে সীমান্তে অবস্থান নেওয়া অনেক রোহিঙ্গা। তবে বিজিবি কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকার কারণে একজন রোহিঙ্গাও সীমান্ত প্রবেশ করতে পারেনি।

কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লোকজন অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে; কিন্তু আমরা নতুন করে আর কাউকে ঢুকতে দেব না। ওপারে চলমান সংঘাত সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩৭ জনকে প্রতিহত করা হয়েছে। অন্যদিনের তুলনায় টেকনাফ সীমান্ত এলাকা অনেকটা শান্ত আছে।

কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লুৎফুল লাহিল মাজিদ বলেন, টেকনাফ, শাহপরীরদ্বীপ, বাহারছড়া ও সেন্টমার্টিনে বর্তমানে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হোয়াইক্যং সীমান্তে মর্টার ও গুলির শব্দ বন্ধ থাকলেও সীমান্ত অতিক্রম করে একদল রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সীমান্তের বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে স্থানীয় লোকজন নাফ নদের এপারে কয়েকশ রোহিঙ্গাকে জড়ো হতে দেখেছেন। তারা বিজিবি ও স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয়নি। তবে হোয়াইক্যং এলাকার একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের এপারে অনুপ্রবেশে সহায়তা করতে সক্রিয় হয়েছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।

হোয়াইক্যং এলাকার এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোহিঙ্গাপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে অনুপ্রবেশে সহায়তা করতে একটি দালাল চক্র সক্রিয় হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আগের চেয়ে শান্ত হয়েছে। সীমান্ত এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক বলা যাবে না। পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ বিজিপিসহ অন্যদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে এটা চূড়ান্ত হবে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি বিজিবি দেখেন। আমরা বিজিবিকে সহযোগিতা করছি। অস্ত্রধারী ২৩ জনকে আটক করে মামলা দিয়েছে। অন্য কোনোভাবে অপরাধী অনুপ্রবেশ হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র বদল : মিয়ানমারে যুদ্ধের জেরে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তাঝুঁকি থাকায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রটি এবার বাতিল করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রে যাদের এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল, তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে।

গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মিয়নামারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের কারণে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি থাকায় বিকল্প ভেন্যু করা হলো।

২২ রোহিঙ্গার রিমান্ড মঞ্জুর : বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রামে ঢুকে পড়া মিয়ানমারের সেই ২৩ উগ্রপন্থির মধ্যে একজন অসুস্থ থাকায় ২২ জনের ৩ দিন করে রিমান্ড করেছেন কক্সবাজারের আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চ্যজ্ঞা এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে রহমতের বিল গ্রামে অনুপ্রবেকালে ৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ২৩ জনকে আটক করা হয়।

৩২৬ বিজিপির সদস্যের বায়োমেট্রিক : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩২৬ জন সদস্যের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে তালিকা তৈরি করেছে প্রশাসন। তাদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর অংশ হিসেবে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) চার সদস্যের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পরে নেওয়া হবে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, আশ্রিত বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।