সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
র্যাব হেফাজতে নওগাঁ সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৪০) মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসছে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, ‘যুগ্ম সচিব এনামুল হক ও জেসমিন সুলতানা পূর্ব পরিচিত ছিলেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। জেসমিন বিভিন্ন সময়ে এনামুলকে টাকা পাঠাতেন। তদন্তে এর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এনামুলকে কেন টাকা পাঠাতেন জেসমিন সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ‘তদন্ত টিমের সদস্যরা জেসমিনের স্বজন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’
এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত টিম জেসমিন সুলতানার ছেলে, ভাই, মামা, বাড়িওয়ালা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছে। সোমবার বিকালে নওগাঁ সার্কিট হাউজে তদন্ত দলের সদস্যরা তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
সুলতানা জেসমিনের মামা নাজমুল হক বলেন, জেসমিনকে র্যাব সদস্যরা কিভাবে আটক করেন, এরপর নওগাঁ হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন কি কি ঘটেছে তদন্ত টিম সেই বর্ণনা আমাদের কাছ থেকে শুনেছেন।
নাজমুল হক জানান, জেসমিন ও মামলার বাদী এনামুলের মধ্যকার টাকা লেনদেনের কাগজপত্র আমরা পেয়েছি। জেসমিনের নিজের হাতে লেখা ৪৬ পাতা কাগজপত্র (চিরকুট) তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেছি। এনামুল হকের কাছে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং এবং বিকাশের মাধ্যমে জেসমিন সুলতানা টাকা পাঠিয়েছেন। তারিখসহ সেগুলো তদন্ত কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করছি, তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে ন্যায়বিচার পাব বলে আমরা আশাবাদী।’
জেসমিনের ভাই সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘আমার বোন সুস্থ ছিল। র্যাব আটকের পর অসুস্থ হন এবং তাদের হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এজন্য আমি র্যাবকেই দায়ী মনে করি। আশা করি, প্রকৃত দোষীরা চিহ্নিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে আশা করছি, তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন এবং বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন।’
হাইকোর্টের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে। কমিটি সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে।
সোমবার ওই জিজ্ঞাসাবাদের সময় নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা আবু শামীম আজাদ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইমতিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল করিম, সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান সার্কিট হাউজে উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল ২২ মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নিয়েই র্যাব এ অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল আমিন নামের এক ব্যক্তি তার (এনামুল) ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্ন জনকে। এভাবে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
আটকের পরের দিন ২৪ মার্চ সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তার মৃত্যুর পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্মসচিব এনামুল হকের করা একটি মামলার কথা জানা যায়, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ বিকাল। জেসমিন ও তার কথিত সহযোগী আল আমিনকে এতে আসামি করা হয়। আল আমিনকে ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি একজন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট।
সূত্র: যুগান্তর