নিজস্ব প্রতিবেদক:
পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে কোন চর তলিছে। আবার কোনটিতে জলমগ্ন। এমন অবস্থায় চরে গরু লালন-পালনকারীরা পড়েছেন বিপাকে। একদিকে গরুর থাকার জায়গার অভাব, অন্যদিকে খাবারের অভাবে। সবমিলে উভয় সঙ্গটে চর ছেড়ে লোকালয়ে এসেছেন আবু তাহের, শাজদার ও শাহাদুলেরা।
তারা বলছেন, পদ্মার মধ্যচরে যারা বসবাস করেন, তারা পদ্মায় পানি বাড়ার শুরুতেই লোকালয়ে চলে এসেছেন। মধ্যচরে অল্প মানুষ ও গবাদি পশু ছিলো। পদ্মার পানি বাড়ায় চারপাশ তলিয়ে গেছে। এছাড়া মধ্যচরেও পানি উঠেছে। এমন অবস্থায় গরু নিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই একসপ্তা আগে গরুগুলো নিয়ে লোকালয়ে চলে এসেছেন তারা। তারা আরো বলছেন, পানি নেমে গেলে আবারও গরুগুলো নিয়ে পদ্মার চরে ফিরে যাবেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকালে নগরের বিনোদপুরের রেডিও সেন্টার মাঠে চরের গরুর মালিক ও রাখালদের ২৩০টি গরু আহার (চড়াতে) করাতে নিয়ে আসেন। সপ্তাখানেক থেকে গরুগুলো এই মাঠে চড়ছে (আহার করছে)। যদিও রেডিও সেন্টার সংরক্ষিত এলাকা। তাই পুরো মাঠ কাটাতারের বেঁড়ায় ঘেরা। সেই তারের বেঁড়ার মধ্যেই গরুগুলো ঘাস খাচ্ছে। গরুর মালিক ও রাখালরা বলছেন, এই মাঠের মত বড় ফাঁকা জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে তারা এখানে নিয়ে এসেছেন গরুগুলো।
গরুগুলোকে ছয় থেকে সাত জন মালিক ও রাখালকে দিনভর দেখভাল করতে দেখা গেছে। দিন শেষে তারা এই গরুগুলো ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে সাতবাড়িয়া কলিডরের মোড় ও শ্যামপুর এলাকার নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে রাতে থাকার পরে প্রতিদিন সকাল আটটার দিকে আবার এই মাঠে নিয়ে আসছেন তারা।
শাজদার আলী নামের একজন গরুর মালিক জানান, ‘গরুগুলো থাকতো পদ্মার মধ্যচরে। বর্তমানে সেখানে জলমগ্ন। তাই এক সপ্তা আগে সবার ২৩০টি গরু নৌকায় তুলে লোকালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এপারে (লোকালয়ে) গরুর থাকা ও খাবারের সঙ্কট। উপাই নেই। তবুও নিয়ে আসতে হয়েছে। তিনি আরো জানান, চরে থাকলে বড় ভয় পানিতে ডুবে গরু মারা যাওয়ার। এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে।’
আবু তাহের নামের অপর গরুর মালিক জানান, ‘এখানে কারও ৩০ টা, কারো ৪০টা, কারো ৫০-৬০টা গরু আছে। আমাদের ২০ টা গরু আছে। এর মধ্যে ১০টা গরু দুধ দেয়। বাকিগুলো ছোট ও ষাঁড় গরু। এখন সবগুলো গরু সবার বাড়িতেই রাখতে হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, সারা বছর পদ্মার চরে এই গরুগুলো থাকে। সেখানেই ঘাস খাই। বছরের এই সময়টায় পানিতে ডুবে যায় পুরো চর। তখন গরুর খাবারের সমস্যা হয়। একই সাথে গরু রাখার সমস্যা দেখা দেয়। তখন গরুগুলো বাঁচাতে এক থেকে দেড় মাসের জন্য লোকালয়ে নিয়ে আসি আমরা।’
গরুর রাখাল শাহাদুল বলেন, ‘দেখেন লোকালয়ে গরুগুলো রাখলে, আমাদের গরুর থাকা ও খাবারের চিন্তা করতে হয়। চরে থাকলে কোন চিন্তা থাকে না। সারাদিন পুরো চরে আহার করবে। রাতে এসে বাথানে থাকবে। কিন্তু লোকালয় তো শহর এলাকা। এখানে তেমন ঘাস নেই। ফলে ধানের খড় কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ার এক থেকে দেড় সপ্তার মধ্যেই আবার গরু নিয়ে চরে ফিরে যাবো।’
স/আ