জমেনি স্মার্টফোনের বাজার, শেষ সপ্তাহের অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ঈদ উদযাপন হয়েছে বিধিনিষেধের মধ্যে। সে কারণে ভালো ব্যবসা করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ঈদকে ঘিরে ভালো ব্যবসা করার প্রস্তুতি আগে থেকেই নেন ব্যবসায়ীরা। পোশাকের পাশাপাশি প্রযুক্তি পণ্যেরও ভালো বেচাকেনা হয় ঈদ বাজারে। বিশেষ করে স্মার্টফোনের ভালো চাহিদা থাকে ঈদের আগে। তরুণরা ঈদ সালামির টাকা দিয়ে শখের স্মার্টফোন কেনেন। অনেকে আবার প্রিয়জনকে ঈদে স্মার্টফোন উপহারও দেন। ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন মডেলের ফোনও বাজারে ছাড়তেও দেখা যায় কোম্পানিগুলোকে। তবে কোম্পানিগুলো নতুন নতুন ফোন বাজারে ছাড়লেও সেভাবে জমেনি স্মার্টফোনের ঈদ বাজার।

করোনা সংক্রমণ কমে আসায় এবার বিপণি-বিতানগুলোতে ক্রেতা সমাগম ভালো। এরই মধ্যে পোশাকের বাজার জমে উঠলেও এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি স্মার্টফোন বিক্রি। রোজার অর্ধেক পার হলেও আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় মন খারাপ স্মার্টফোন বিক্রেতাদের। তবে চলতি মাসের শেষ কদিনে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে স্মার্টফোনের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতা অনেক থাকলেও বিক্রি হচ্ছে অন্য সময়ের মতোই। ক্রেতারা আসছেন, ফোন দেখছেন। দরদামও করছেন কিন্তু বিক্রি হচ্ছে খুবই সীমিত।

বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৬ এর এম টু এম কমিউনিকেশনের স্বত্বাধিকারী মো. রাকিব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঈদে তরুণদের মধ্যে গ্যাজেট (প্রযুক্তিপণ্য) কেনার প্রবণতা থাকে। অনেকে আবার আত্মীয়স্বজনকে মোবাইল কিনে দেন। বোনাসের বাড়তি টাকা দিয়ে সাধারণত মিড রেঞ্জের (মধ্যম দামের) ফোন কেনেন তারা। করোনার পর এবার প্রথম স্বাভাবিক ঈদ, তবে যেমন বেচাকেনা আশা করেছিলাম, সে রকম হয়নি।

করোনার প্রভাব ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের হাতে টাকা না থাকায় প্রযুক্তিপণ্য কম বিক্রি হচ্ছে বলে মনে করেন বিক্রেতারা।

jagonews24

রাকিব হাসান বলেন, চিপ সংকটের কারণে মোবাইল ফোনের দাম বেড়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশেই বাড়েনি, সারাবিশ্বে বেড়েছে। তবে বেশিরভাগই নতুন ফোন যেগুলো আসছে, সেগুলোর দাম বাড়তি। প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার পর কেউ হয়তো ঈদের জামা-কাপড় কিনছেন। শৌখিন পণ্য কেনার আগ্রহ এবার কম। ঈদে সাধারণত যে বিক্রি হয়, এবার তার ৩০ শতাংশও নেই।

স্যামসাং লোকাল অ্যাসেম্বলি পার্টনার ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. মেজবাহ বলেন, এখন পর্যন্ত আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি। আমরা যেমনটা আশা করেছিলাম, তারচেয়ে অনেক পিছিয়ে আছি।

তিনি বলেন, সাধারণত ১৫ রোজা থেকে স্মার্টফোন, গ্যাজেট পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়। ১৫ রোজা পার হয়েছে। আমরা আশা করছি রোজার শেষ কদিনে বাজারটা আরও চাঙা হবে। তবে এবার দীর্ঘদিন পরে দেখছি ইলেকট্রনিকসের বাজার একটু নিম্নমুখী।

আগামী ২ বা ৩ মে ঈদুল ফিতর। এ কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এপ্রিল মাসের বেতন ঈদের এক বা দুদিন আগে দেবে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ঈদ বোনাস দেওয়া হলেও চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি সব প্রতিষ্ঠানের বোনাস হয়ে যাবে। এই সময়ে প্রযুক্তিপণ্যের বাজার চাঙা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, গত বছর করোনার কারণে মার্কেট বন্ধ ছিল। ২০২০ সালেও একদমই বেচাকেনা হয়নি। এবছর করোনা সংক্রমণ কমার পর প্রথম ঈদ। আমাদের আশা ছিল ২০১৯ সালের ঈদের মতো এবার বেচাকেনা হবে। কিন্তু এবার যে অবস্থা তাতে আসলে খুব ভালো বেচাকেনা হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

‘এই মাসের শেষ সপ্তাহে আসলে বোঝা যাবে সবকিছু। প্রথম ১৫ দিনে মানুষ মার্কেটে আসে দেখতে, কিন্তু কেনাকাটা কম করে। কিন্তু শেষ কদিনে বোনাস পাওয়ার পর কেনাকাটা বেড়ে যায়। এবার শপিংমলগুলোতে মানুষের আনাগোনা তুলনামূলক কম দেখছি। ধারণা করছি বোনাসটা পাওয়ার পর থেকে মার্কেট চাঙা হয়ে উঠবে’- যোগ করেন তিনি।

অনলাইনে বেচাকেনা ভালো

মার্কেটে স্মার্টফোনের বাজার সেভাবে জমে না উঠলেও অনলাইনে বেচাকেনা ভালো বলে জানিয়েছেন জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম অথবা ডটকমের হেড অব বিজনেস নুর মোহাম্মদ রাসেল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত দুই বছরে অনলাইনে ভালো কেনাকাটা হয়েছে। এবছর আরও ভালো কেনাকাটা হচ্ছে। কারণ আমাদের করোনা পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফ্যাশন পণ্যের পাশাপাশি স্মার্টফোন ও গ্যাজেটস বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।

jagonews24

গিফট কার্ড, ক্যাশব্যাক ও ডিসকাউন্টসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকায় অনলাইন থেকে স্মার্টফোন কেনার প্রবণতা বেশি। কেননা অনলাইনে যে দামে পাওয়া যায় সেই দামে দোকান থেকে কিনতে পাওয়া যায় না।

বিশ্বাসযোগ্য অনলাইনে ভালো পণ্য ও বিভিন্ন ছাড়ের কারণে অনলাইনে স্মার্টফোনের বাজার ভালো বলে মনে করেন ওয়ালটনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ওয়ালকার্ট ডটকমের চিফ অপারেটিং অফিসার শওকত ইলাহী। তিনি বলেন, স্মার্টফোনে এবার আমরা অতটা ফোকাস করিনি। আমরা ওয়ালটনের একটা ফোনের প্রি-বুক নিচ্ছি, সেটার রেসপন্স ভালো।

ঈদে ৪ লাখের বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হয়

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর সবমিলিয়ে সাড়ে তিন কোটির বেশি মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। এর মধ্যে দেড় কোটি হলো স্মার্টফোন। স্যামসাং, শাওমি ও ওয়ালটনসহ বেশ কিছু মোবাইল ফোন দেশেই কারখানা স্থাপন করেছে। সেসব কারখানা থেকেই প্রায় ৮০ শতাংশ মোবাইলফোনের জোগান আসে। আর গ্রে মার্কেট বা অবৈধপথে আসে বাকি ২০ শতাংশ মোবাইল ফোন।

মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, প্রতি মাসে গড়ে আমাদের এখানে আট থেকে নয় লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়। সেখানে আমরা দেখি এই বিক্রিটা ঈদের সময় বেড়ে সাড়ে ১১ লাখ থেকে ১২ লাখ হয়ে যায়। দেখা যায়, ঈদের সময় স্মার্টফোন বিক্রি ৪ লাখ বেড়ে যায়।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ