সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
কক্সবাজার জেলার একটি থানায় একজন নারী অধোমুখে বসা। সঙ্গে ছয় বছরের কন্যাশিশু। তিনি অভিযোগ জানাতে এসেছেন তাঁরই দূরসম্পর্কের দেবরের বিরুদ্ধে। মাস খানেক আগে এই দেবর তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন। ধর্ষণের পর একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে মা জানতে পারেন—তাঁর অত্তটুকুন মেয়েটা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কিন্তু দেবর কেন এই কাজ করলেন?
ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে গত ২৮ মার্চ। পরিবারটি থানায় অভিযোগ জানাতে আসে গত ২৩ এপ্রিল। অভিযোগ জানানোর পরপরই পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এক দিন পর আসামি বিচারিক আদালতে জবানবন্দি দেন। আসামির নাম আবুল মনসুর ওরফে গুরা পুতিরা। জবানবন্দিতে তিনি দায় স্বীকার করে বলেন, ওই দিন তাঁর মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চেপেছিল। এ কারণে তিনি ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেছেন। ধর্ষণ করার পরও কয়েকবার তিনি শিশুটির সঙ্গে দেখা করেছেন। কখনো চকলেট-চিপস দিয়েছেন, কখনো হুমকিধমকি।
গুরা পুতিরা বলেছেন, ‘শিশুটির বাবা বছর খানেক ধরে আমাদের কাছ থেকে জমি কিনে বসবাস করছে। আমি শিশুটিকে বিভিন্ন সময় চকলেট-চিপস দিতাম। ২৮ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপে। আমি বলি, আমার সঙ্গে চলো, তোমাকে চকলেট-চিপস দেব। তারপর তাকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করি। সে ব্যথায় চিৎকার করলে তার মুখ চেপে ধরি। আর কাউকে এ কথা বলতে নিষেধ করি। এরপরও তার সঙ্গে আমার কয়েকবার দেখা হয়েছে। আমি তাকে ভয় দেখিয়েছি। বলেছি, কাউকে যেন কোনো কথা না বলে।’
শিশুটির মা ২৩ এপ্রিল যখন থানায়, তখন পুলিশ সদর দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন। সদর দপ্তরের একটি প্রকল্প ‘সাসটেইনেবল ইনিশিয়েটিভ টু প্রটেক্ট উইমেন অ্যান্ড গার্লস ফ্রম জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স’-এর অধীনে তাঁরা গিয়েছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে। যে পুলিশ সদস্য আসামিকে গ্রেপ্তার করেছেন, তিনি বলছিলেন, আসামি মুখ খুলছেন না। তবে হাজতখানার দিকে এগিয়ে যাওয়ার পর গুরা পুতিরা সরাসরি বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে।’ ওই পুলিশ কর্মকর্তার মনে হয়েছে, আসামি অপরাধের বিচার হবে, সেই আশঙ্কা করেননি।
সাসটেইনেবল ইনিশিয়েটিভ টু প্রটেক্ট উইমেন অ্যান্ড গার্লস ফ্রম জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স প্রকল্পের পরিচালক পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. আইয়ুব প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর এই মামলার দিকে নজর রাখছে।
শিশুটির মা বলেন, ঘটনার পর সে ঘন ঘন বাথরুমে যেত। আর মাঝরাতে ঘুম ভেঙে চিৎকার করে বলত, ‘গুরা পুতিরা আংকেল বদমাশ।’ গুরা পুতিরা তো শিশুটিকে আদরই করতেন বলে জানতেন বাবা-মা। কখনো আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখেছেন? এমন প্রশ্নে শিশুটির মা বলেন, ‘দুপুরের দিকে মেয়েকে কোলে করে নিয়ে যেত। তারপর মোবাইলে কী কী যেন দেখত।’
ধর্ষণের প্রায় এক মাস পর মামলা করলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় শিশুটিকে যে চিকিৎসক দেখেছেন, তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে। সূর্যের হাসি চিহ্নিত পারিবারিক স্বাস্থ্য ক্লিনিকে শিশুটিকে পরীক্ষা করে তিনি পরামর্শপত্রে পরিষ্কার লেখেন, শিশুটি ধর্ষণের শিকার। তিনি থানায় ও মহিলা অধিদপ্তরে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। আক্ষেপ করে লেখেন, শিশুটির বাবা তাতে রাজি হচ্ছিলেন না। কারণ, অপরাধী তাঁর দূরসম্পর্কের ভাই।
পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র সহেলী ফেরদৌস বলেন, সব ধরনের অপরাধের ব্যাপারেই পুলিশ সতর্ক থাকে। তবে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়টি আলাদা। এ ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের বিশেষ যত্নবান হওয়ার কথা বিভিন্ন সময় বলা হচ্ছে।