সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
পেরুর চাঙ্কাই বন্দরের উদ্বোধন করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এটি দক্ষিণ আমেরিকায় চীনের অর্থায়নে তৈরি প্রথম সমুদ্রবন্দর।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) চাঙ্কাই বন্দরের উদ্বোধন করেন শি জিনপিং।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে তৈরি এই বন্দরটি লাতিন আমেরিকা এবং এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একে ‘একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক সিল্ক রোড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্ত চীনের সঙ্গে এই সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘এই প্রকল্প আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতিফলন।’
শি জিনপিং পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তের সঙ্গে রাজধানী লিমাতে বলেন, ‘এটি পেরুর জন্য উল্লেখযোগ্য আয় এবং বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।’
শি স্থানীয় এল পেরুয়ানো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি মতামত নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, এই প্রকল্পটি বছরে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আয় সৃষ্টি করবে এবং আট হাজারের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করবে। পেরু-চীন রুটের লজিস্টিক খরচ ২০ শতাংশ কমিয়ে দেবে।
বোলুয়ার্ত বন্দরের সুযোগকে স্বাগত জানিয়ে চীনের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নে চীন একটি বড় ভূমিকা পালন করছে।’
১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পটি চীনের বৃহৎ শিপিং কোম্পানি কস্কো দ্বারা পরিচালিত। ২০২৫ সালের মধ্যে চাঙ্কাই বন্দর বিশ্বের সবচেয়ে বড় কন্টেইনার জাহাজগুলোর হ্যান্ডলিং ক্ষমতা অর্জন করবে। এটি ব্রাজিলসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সয়াবিন ও লোহার আকরিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রপ্তানি সহজতর করবে। প্রথম জাহাজটি আগামী সপ্তাহে চাঙ্কাই বন্দর থেকে যাত্রা করবে, যা দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়ার বাণিজ্য রুটের খরচ ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেবে।
এদিকে, প্রকল্পটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। স্থানীয় মৎস্যজীবী ও বাসিন্দারা পরিবেশগত ক্ষতি এবং ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার স্থান হারানোর অভিযোগ তুলেছেন।
৭৮ বছর বয়সি জেলে জুলিয়াস সিজার বলেন, ‘আমাদের মাছ ধরার স্থানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি চীনাদের দোষ দিই না, বরং আমাদের সরকারই আমাদের সুরক্ষায় ব্যর্থ।’
এর আগে মার্কিন সেনা কমান্ডের সাবেক প্রধান জেনারেল লরা রিচার্ডসন সতর্ক করেছিলেন যে, চাঙ্কাই বন্দরটি চীনের নৌবাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ লাতিন আমেরিকা কূটনীতিক ব্রায়ান নিকোলস লিমায় সতর্ক করেছিলেন যে, চীনের বিনিয়োগ সম্পর্কে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সতর্ক থাকা উচিত।
চাঙ্কাই বন্দর দক্ষিণ আমেরিকায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং পেরুর মতো দেশগুলোর জন্য প্রধান বাণিজ্য অংশীদার হয়ে ওঠার উদাহরণ।
চীনের রাষ্ট্রীয় গ্লোবাল টাইমস একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছে যে, এই বন্দর ‘চীন ও লাতিন আমেরিকার মধ্যে বাস্তব সহযোগিতার সেতু এবং এটি কোনোভাবেই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার হাতিয়ার নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সামরিক ব্যবহারের অভিযোগকে’ তারা ‘মিথ্যা প্রচারণা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন