সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর হানাহানি ঠেকাতে পারলেও দলীয় নেতাকর্মীদের ‘চাঁদাবাজি ও দখলবাজি’ রোধে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতিতে দলটির লাখ লাখ নেতাকর্মী হামলার শিকার হবেন- এমন আশঙ্কা করেছিলেন অনেকেই। এ আশঙ্কা থেকে ৫ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের আইন নিজ হাতে তুলে না নিতে কঠোর বার্তা দেন।
এতে হামলা-হানাহানি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও চাঁদাবাজি ও দখলবাজি সেভাবে রোধ করা যাচ্ছে না। এ অভিযোগে এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবুও প্রতিদিনই চাঁদাবাজি-দখলবাজির অভিযোগ আসছে। কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছে, চাঁদাবাজিতে জড়িতদের বড় অংশই ‘নব্য বিএনপি’।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর দেশ অশান্ত করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বড় ধরনের একটা হত্যাযজ্ঞ করতে চেয়েছিল। এর মধ্যদিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধাবস্থা তৈরি করতে চেয়েছিল তারা। নানা প্রচেষ্টায় দলীয় নেতাকর্মীদের কাজে লাগিয়ে এই পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সারাদেশে যে চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব ঠেকাতে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখানো পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হয়নি। নেতাদের অভিযোগ, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের বড় অংশ হঠাৎ করে বিএনপি সাজা মানুষ-নব্যবিএনপি। কারণ, চাঁদাবাজির কয়েকটি ঘটনায় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীদের নামও এসেছে।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আসলে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে বেশি। সাধারণত দেশের মিডিয়া খুব ভালো রোল প্লে করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচারও চালানো হচ্ছে। আমি মনে করি, বিপ্লবের পর একটু সমস্যা থাকে। এটা কাটিয়ে ওঠা সক্ষম হবে।’
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমল থেকে বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র এবং দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ দলের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। নির্যাতন করে তারেক রহমানের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়। দেশি-বিদেশি চাপে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার প্যারোলে মুক্তি দিতে বাধ্য হলে সপরিবারে তিনি যুক্তরাজ্যে যান। সেই থেকে দেশটিতে অবস্থান করছেন তারেক রহমান।
২০০৯ সালে জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সেই থেকে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও গত রবিবার সাতক্ষীরায় জনসমাবেশে বলেছেন- ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল শেখ হাসিনা।
সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ পর্যন্ত দলটির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪৫ হাজার গায়েবি মামলা দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এর মধ্যে গত নির্বাচনের আগে ১ হাজার ৭০০ এর অধিক নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয়। গুম করা হয় প্রায় ৭০০ নেতাকর্মীকে। এ ছাড়া হাজারের ওপর নেতাকর্মীকে খুন করা হয়। পাশাপাশি সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মীর বাড়িঘর, জমিজমা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল এবং নারীসহ পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে। এসব কারণে গত সাড়ে ১৫ বছরে নেতাকর্মীদের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে যাতে কোনো বেআইনি কাজে জড়িয়ে না পড়েন, সেজন্য যা যা প্রয়োজন সবই করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর চাঁদাবাজি, দখল, দলের নীতিপরিপন্থি বক্তব্যসহ নানা অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেখানেই অভিযোগ সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শ্রমিক নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস আমাদের সময়কে বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা বহু জায়গায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। আবার নব্য বিএনপি সেজে অনেকেই চাঁদাবাজি করছে। এ ব্যাপারে আমরা সোচ্চার আছি।