প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়া রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে নিয়ে বিএনপি বিব্রত হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না।
দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি হত্যার রাজনীতি করে না, এটাকে প্রশ্রয় দেয় না। হত্যার হুমকি দিয়ে আবু সাঈদ চাঁদের দেওয়া বক্তব্য তার নিজস্ব। এটা দলের বক্তব্য নয়। তার এই বক্তব্য নিয়ে দল বিব্রত। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে না বিএনপি।
তারা বলছেন, চাঁদের বক্তব্য নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব এটাকে ‘মুখ ফসকে’ বেরিয়ে যাওয়া একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে, তার এ বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। তারা বলতে চেষ্টা করছে, এটা চাঁদের ব্যক্তিগত বক্তব্য নয়, সামগ্রিকভাবে বিএনপির রাজনীতি এটাই। ফলে বিএনপি যদি এখন তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়, তাহলে দলের পক্ষ থেকে এটাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বক্তব্য বলে যে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা টিকবে না। আওয়ামী লীগের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তাই তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এটাকে আইন-আদালতের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিতে চেয়েছেন। এটাও কিন্তু হত্যার হুমকি। কয়েকদিন আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, যে সুশীলরা আমাদের বুদ্ধি দিতে যাবেন, সেই সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেব। তার এ বক্তব্যও কিন্তু হত্যার হুমকি। রাজশাহীর আবু সাঈদ চাঁদের কথাটাও একই ধারার। আমরা এগুলো কোনো সভ্য বক্তব্য বলে মনে করি না। এটা রাজনৈতিক বক্তব্য ও ভাষা বলেও মনে করি না। এসব বক্তব্য সমর্থন করি না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরাও রাজনীতি করেছেন। তারাও রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। কেউ এ ধরনের বক্তব্য দেননি। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি খারাপ। কেউ ধৈর্য ধরতে পারছে না। সবাই হুট-হাট এসব বক্তব্য দিয়ে ফেলছে।
বিএনপি আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে কি না– জানতে চাইলে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রধান রাজনৈতিক দল। তারা কী প্রধানমন্ত্রী ও মেয়রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? তারা যদি আমাদের পথ দেখাত তাহলে অবশ্যই ভালো হতো। তারপরও আমরা অবশ্যই তার (চাঁদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সূত্র বলছে, আবু সাঈদ চাঁদের বক্তব্য নিয়ে বিএনপিতে দুটি মত রয়েছে। একপক্ষ মনে করে, বিএনপি যেহেতু হত্যার রাজনীতি সমর্থন করে না, তাই তার বিরুদ্ধে এখনই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রমাণ করা দরকার, এটা তার নিজস্ব বক্তব্য, এর দায় দল নেবে না।
আবার অন্যপক্ষ মনে করে, দেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। গত ৯-১০ মাসে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির ২০ জনের মতো নেতাকর্মী মারা গেছেন। এ অবস্থায় যদি চাঁদের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বক্তব্য নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বে। তাদের ধারণা হয়ে যাবে, কেউ ভুল করে বিপদে পড়লে দল তার পাশে না থেকে উল্টো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়। তাই তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, চাঁদের বক্তব্য নিয়ে বিএনপি বিব্রত হলেও এ নিয়ে দলে দুটি পক্ষ আছে। একটি পক্ষ মনে করে, নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে গিয়ে মুখ ফসকে এটি বলে ফেলেছেন তিনি। ইতিমধ্যে তাকে এবং তার পরিবারের অনেককে গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে অবিচার। তাই বিষয়টি আইনের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।
এই নেতা আরও বলেন, আবার কেউ-কেউ মনে করেন, বিএনপি এখন কঠিন আন্দোলনে আছে। তাই নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে বক্তব্য দিতে হবে। যাতে কোনোভাবেই সরকার পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে এবং চলমান আন্দোলনে ব্যাঘাত না আসে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদের দেওয়া এ বক্তব্যকে তার নিজস্ব বলে ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত। তবে, আমি যতটুকু জানি, এই মুহূর্তে তার বিরুদ্ধে দল কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে না।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে রাজশাহীর পুঠিয়ার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে ‘হত্যার হুমকি’ দেন।
ওই সমাবেশে চাঁদ বলেন,‘আমরা আর ২৭ বা ১০ দফা দাবি করব না, এখন একটাই দফা, শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠানোর দফা।’